বেড়েই চলেছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা

দারিদ্র্য নিরসণে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ। মানুষের আয় বেড়েছে; কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট করছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, দারিদ্র্য হ্রাসের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০১৩ এবং ২০২১ শেষে এই হার ২৭.৫ শতাংশ ও ১৭ শতাংশ দাঁড়াতে পারে, যা বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা অপেক্ষা যথাক্রমে ২.৫ শতাংশ এবং ২ শতাংশ বেশি। তবে সংখ্যার হিসাবে গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।


পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯১-৯২ সালে যেখানে পাঁচ কোটি ১৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্র্য সীমার নিচে বসবাস করত সেখানে ২০০৫ সালে এ সংখ্যা বেড়ে পাঁচ কোটি ৬০ লাখে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য পরিমাপে শুভঙ্করের ফাঁকি থাকায় দেশে প্রকৃত দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছে উন্নয়ন অণ্বেষণ। একজন মানুষের দৈনিক আয় যদি এক ডলার হয়, তাহলে তাকে দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এক বছর পর যদি তার আয় ১ দশমিক ৩ ডলার হয়, তাহলে তাকে দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
দারিদ্র্য পরিমাপের আরেকটি মাপকাঠি হলো মাথাপিছু প্রতিদিন দুই হাজার ১০০ কিলোক্যালরি খাদ্য গ্রহণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব সাধারণভাবে তা গ্রহণ করতে খরচ হবে ৫০ টাকা (০.৭১ ডলার)। সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যোগাযোগসহ অন্যান্য খরচও আছে, যা মাত্র ১ দশমিক ২৫ ডলার দ্বারা অনেকটাই অসম্ভব। ফলে ভোগব্যয়কে দারিদ্র্যের পরিমাপক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সরকার দারিদ্র্য নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র্য হ্রাসের হার সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছে উন্নয়ন অন্বেষণ। আর কারণ হিসেবে তারা প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকট, বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে স্থবিরতা, জনশক্তি রপ্তানিতে মন্দাভাব, প্রকৃত আয় কমে যাওয়ারকে দায়ী করছে। বিগত বছরের তুলনায় বর্তমানে দারিদ্র্যের গভীরতা এবং ব্যাপকতা হ্রাসের হার কম হওয়ায় বর্তমানে অসমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য রাষ্ট্রের সঠিক নীতি ও পরিকল্পনার অভাব, সমান আয়ের কর্মসংস্থানের অভাব, বণ্টন ব্যবস্থার সমস্যা, তদারকির দুর্বলতা, নীতি কাঠামোর অভাব, সাংবিধানিক নীতির অনিশ্চয়তা এবং অধিক জনসংখ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে উন্নয়ন অন্বেষণ। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে শহর অপেক্ষা গ্রাম এলাকায় দারিদ্র্যের হার বেশি। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে দারিদ্র্য হ্রাসের হার অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বেশি। এই বিভাগে দারিদ্র হ্রাসের হার ২.১ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.