১০ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা
নতুন মৌসুম শুরু হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি। অথচ এখনো হিমাগারে পড়ে আছে লাখ লাখ টন আলু। বাজারে নতুন আলু এলে পুরনো আলুর কোনো কদর থাকবে না। ফলে প্রায় ১০ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা করছেন হিমাগারের মালিকরা। বর্তমানের সর্বনিম্ন দরেও যার দাম প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।হিমাগারের মালিকরা বলছেন, এ বছর আলুর দাম না পাওয়ায় আগামী বছর উৎপাদন কমে যেতে পারে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসানে পড়বেন অনেক কৃষক। নতুন মৌসুম শুরুর আগে মজুদ করা আলু বিক্রি শেষ করতে এখন সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।
তাঁরা চাচ্ছেন, সরকার কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, টেস্ট রিলিফসহ অন্যান্য খাতে যেন চাল ও গমের পাশাপাশি আলুও সরবরাহ করে।আগামী ৩০ অক্টোবর খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এফবিসিসিআইতে একটি সেমিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি থাকবেন বলে জানান। খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককেও সভায় রাখার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। ওই সভায় ব্যবসায়ীরা সরকারিভাবে আলু বিতরণের দাবি তুলবেন বলে জানা গেছে। চলতি বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়। এতে প্রায় ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। ভালো ফলনের কারণে বাজারে পুরো বছরই কম দামে আলু বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম মাত্র ছয় টাকা। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু কম-বেশি ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবছর এ সময়ে আলুর দাম সাধারণত ২০ টাকার ওপরে থাকে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভালো দাম তো নেই-ই, এর ওপর যে দাম আছে, সে দামেও আলু বিক্রির জন্য ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মেজর (অব.) জসিমউদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর প্রায় ৩৬ লাখ টন আলু মজুদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাত-আট লাখ টন বীজ আলু। বাকিটা খাওয়ার আলু। এখনো দেশের প্রায় ৩৫০টি হিমাগারে ২৫ লাখ টন আলু আছে। আগামী দুই মাস খাওয়ার পর ১০ লাখ টন আলু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৯টি হিমাগারের মালিক এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর হিমাগারগুলো থেকে দৈনিক ১০ হাজার বস্তা আলু বাজারে আনা হলে হিমাগার নতুন মৌসুমের আগে খালি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু এখন দৈনিক বিক্রি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তা আলু। এতে অর্ধেক আলু অবিক্রীত থাকবে বলে মনে করেন তিনি। আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতে শুরু হবে নতুন মৌসুম। তিনি বলেন, শুধু অবিক্রীত থাকা নয়, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি, পচে যাওয়া, ব্যাংকের ঋণের সুদ ইত্যাদি নানা খরচ হিসাব করলে লোকসানের অঙ্ক দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দাম না থাকলে উৎপাদন কমে যায় : ফসলের দাম না থাকলে কৃষক উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। গত কয়েক বছরে আলুর দাম ও উৎপাদনের চিত্র দেখলেই এর প্রমাণ মিলবে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড ৯২ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। তখন সরকার উদ্বৃত্ত আলুর ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছিল। আয়োজন করা হয়েছিল আলুর মেলা; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কৃষকরা দাম না পাওয়ায় পরের বছর আলুর উৎপাদন কমে ৬৭ লাখ টনে দাঁড়ায়। ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজারে আলুর কেজি ৩৫ টাকার ওপরে উঠেছিল। ভালো দাম পাওয়ায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৮২ লাখ টন।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বর্তমানে প্রতি বস্তা (৮৬ কেজি) আলুতে কৃষকের মোট লোকসান প্রায় ৫০০ টাকা। কিছুদিন পরে এমন অবস্থা হতে পারে, ২৭৫ টাকা ভাড়া দেওয়ার ভয়ে অনেকে আলু নিতেই আসবেন না! লোকসান হলে পরের বছর আলুর উৎপাদন কমে যাবে। দামও বেড়ে যাবে।
নগদ সহায়তা ঠেকাতে পারছে না দরপতন : ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আলু রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। কিন্তু তবুও এ বছর আলু রপ্তানি বাড়িয়ে কৃষককে লোকসান থেকে বাঁচানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশের আলুর রপ্তানির পরিমাণও কম। ২০১০-১১ অর্থবছরে আলু রপ্তানি আয় ছিল ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা ছিল ৩৪ লাখ ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭০ হাজার ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মেজর (অব.) জসিমউদ্দীন বলেন, চীনের আলু বাজারে আসতে শুরু করায় বাংলাদেশ রপ্তানিতে সুবিধা করতে পারছে না। চীনের নতুন আলু মালয়েশিয়ায় বেশি চলছে। বাংলাদেশের হিমাগারের আলু খেতে চাচ্ছে না। সরকারিভাবে আলু বিতরণের দাবি : চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৬ লাখ টন খাদ্য বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে ভিজিএফ খাতে চার লাখ ৭০ হাজার টন, কাবিখা খাতে চার লাখ টন, ভিজিডি খাতে দুই লাখ ৬৫ হাজার টন, টেস্ট রিলিফ খাতে চার লাখ ১০ হাজার টন ও খয়রাতি সাহায্য খাতে ৮০ হাজার টন খাদ্য বিরতণ করার কথা। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আগামী দুই মাস এসব খাতে চাল ও গমের পাশাপাশি আলু বিতরণ করে সরকার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে পারে। মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সরকার এভাবে আলু বিতরণ করতে চাইলে আমরা কেনা দামেই আলু বিক্রি করতে রাজি আছি। লাভ না হলেও তবু এতে আলুটা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নইলে বিক্রিই হবে না। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও আলু বেশি পরিমাণে সরবরাহ করার দাবি জানান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভালো দাম তো নেই-ই, এর ওপর যে দাম আছে, সে দামেও আলু বিক্রির জন্য ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মেজর (অব.) জসিমউদ্দীন কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর প্রায় ৩৬ লাখ টন আলু মজুদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাত-আট লাখ টন বীজ আলু। বাকিটা খাওয়ার আলু। এখনো দেশের প্রায় ৩৫০টি হিমাগারে ২৫ লাখ টন আলু আছে। আগামী দুই মাস খাওয়ার পর ১০ লাখ টন আলু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৯টি হিমাগারের মালিক এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর হিমাগারগুলো থেকে দৈনিক ১০ হাজার বস্তা আলু বাজারে আনা হলে হিমাগার নতুন মৌসুমের আগে খালি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; কিন্তু এখন দৈনিক বিক্রি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তা আলু। এতে অর্ধেক আলু অবিক্রীত থাকবে বলে মনে করেন তিনি। আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতে শুরু হবে নতুন মৌসুম। তিনি বলেন, শুধু অবিক্রীত থাকা নয়, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি, পচে যাওয়া, ব্যাংকের ঋণের সুদ ইত্যাদি নানা খরচ হিসাব করলে লোকসানের অঙ্ক দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দাম না থাকলে উৎপাদন কমে যায় : ফসলের দাম না থাকলে কৃষক উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। গত কয়েক বছরে আলুর দাম ও উৎপাদনের চিত্র দেখলেই এর প্রমাণ মিলবে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড ৯২ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। তখন সরকার উদ্বৃত্ত আলুর ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছিল। আয়োজন করা হয়েছিল আলুর মেলা; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কৃষকরা দাম না পাওয়ায় পরের বছর আলুর উৎপাদন কমে ৬৭ লাখ টনে দাঁড়ায়। ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজারে আলুর কেজি ৩৫ টাকার ওপরে উঠেছিল। ভালো দাম পাওয়ায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৮২ লাখ টন।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বর্তমানে প্রতি বস্তা (৮৬ কেজি) আলুতে কৃষকের মোট লোকসান প্রায় ৫০০ টাকা। কিছুদিন পরে এমন অবস্থা হতে পারে, ২৭৫ টাকা ভাড়া দেওয়ার ভয়ে অনেকে আলু নিতেই আসবেন না! লোকসান হলে পরের বছর আলুর উৎপাদন কমে যাবে। দামও বেড়ে যাবে।
নগদ সহায়তা ঠেকাতে পারছে না দরপতন : ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আলু রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। কিন্তু তবুও এ বছর আলু রপ্তানি বাড়িয়ে কৃষককে লোকসান থেকে বাঁচানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশের আলুর রপ্তানির পরিমাণও কম। ২০১০-১১ অর্থবছরে আলু রপ্তানি আয় ছিল ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা ছিল ৩৪ লাখ ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭০ হাজার ডলার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মেজর (অব.) জসিমউদ্দীন বলেন, চীনের আলু বাজারে আসতে শুরু করায় বাংলাদেশ রপ্তানিতে সুবিধা করতে পারছে না। চীনের নতুন আলু মালয়েশিয়ায় বেশি চলছে। বাংলাদেশের হিমাগারের আলু খেতে চাচ্ছে না। সরকারিভাবে আলু বিতরণের দাবি : চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৬ লাখ টন খাদ্য বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে ভিজিএফ খাতে চার লাখ ৭০ হাজার টন, কাবিখা খাতে চার লাখ টন, ভিজিডি খাতে দুই লাখ ৬৫ হাজার টন, টেস্ট রিলিফ খাতে চার লাখ ১০ হাজার টন ও খয়রাতি সাহায্য খাতে ৮০ হাজার টন খাদ্য বিরতণ করার কথা। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আগামী দুই মাস এসব খাতে চাল ও গমের পাশাপাশি আলু বিতরণ করে সরকার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে পারে। মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সরকার এভাবে আলু বিতরণ করতে চাইলে আমরা কেনা দামেই আলু বিক্রি করতে রাজি আছি। লাভ না হলেও তবু এতে আলুটা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নইলে বিক্রিই হবে না। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও আলু বেশি পরিমাণে সরবরাহ করার দাবি জানান।
No comments