হোয়াইটওয়াশ কি এড়াতে পারবে বাংলাদেশ

জিম্বাবুয়েতে ব্যর্থ সফরের পর ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মোকাবিলা করার জন্য বেশ আগেভাগেই নিজেদের প্রস্তুত করে নিচ্ছিল বাংলাদেশ। দলের অনুশীলনের কোনো অভাব রাখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দলের নীতিনির্ধারকরা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন খেলোয়াড়দের। প্র্যাকটিস ম্যাচগুলোতে দলের পারফরম্যান্স ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে আভাস দিচ্ছিল।‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ জিততে হলে ব্যাটসম্যানদের ৬০% ভূমিকা রাখতে হবে। বাকিটুকু বোলার ও ফিল্ডারদের’—সিরিজ শুরুর আগে এমন কথাই বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম।


তার এমন পরিকল্পনার প্রতিফলন দেখা যায় একমাত্র টি-২০ ম্যাচটিতে। মনে হচ্ছিল বাকি ম্যাচগুলোতেও হয়তো জয়ের ধারাতেই থাকবে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে এসে হতাশ হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দুটি ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা। হাতে আছে মাত্র একটি ম্যাচ। দুটি ম্যাচে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশ দল যে ন্যক্কারজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে যে দল এখন হোয়াইটওয়াশের কাঠগড়ায়। মুশফিকরা কি পারবেন ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে? শেষ ম্যাচের আগে এমন আশঙ্কাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যে উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনায়াসে রান পাচ্ছে, সেই উইকেটে বাংলাদেশ দলের মূল ব্যাটসম্যানদের রানখরা দেখে এমন আশঙ্কা তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রত্যেকটি ম্যাচেই ব্যর্থ বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। কোনোভাবেই তারা ইনিংসের শুরুতে দলকে ভালো একটি ভিত গড়ে দিতে পারছেন না। বাজে শট খেলে উইন্ডিজ বোলারদের উইকেট বিলিয়ে আসছেন তারা। বাংলাদেশের প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান প্রতিটি ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান থেকে অনেক পিছিয়ে। টি-২০ ম্যাচটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান মিলে যেখানে ৯৬ রানের ইনিংস খেললেন, সেখানে বাংলাদেশ দলের প্রথম তিনজন মিলে করলেন ৫৭ রান। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে উইন্ডিজদের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান মিলে দলের স্কোরে ২১৪টি রান যোগ করেন। আর বাংলাদেশ দলের প্রথম তিনজন করেন ১১৫ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দলের প্রথম তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান মিলে করেন মাত্র ১ রান! একই উইকেটে উইন্ডিজ দলের তিন টপ অর্ডার মিলে করেন ২০৭ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা যে কত পিছিয়ে—তা সহজেই অনুমেয়। এই গেল ব্যাটিং ব্যর্থতা। দুটি ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাটিং দুর্বলতার পাশাপাশি স্বাগতিকদের বোলিং ব্যর্থতাও কোনো অংশে কম নয়। টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের বোলাররা ক্যারিবীয়দের আটটি উইকেট নিলেও দুটি ওয়ানডে ম্যাচে তাদের বোলিং ছিল রীতিমত নির্বিষ। দুই ওয়ানডে ম্যাচ মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বোলাররা নিয়েছেন ১৬টি উইকেট। আর বাংলাদেশ দলের বোলাররা নিয়েছেন মাত্র ৬ উইকেট।
বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের স্পিনারদের বেশ কদর রয়েছে। বিশ্বের অনেক বড় ব্যাটসম্যান তাদের ফাঁদে পড়ে আউট হয়েছেন। কিন্তু এ হোম সিরিজে হঠাত্ করে দলের স্পিনারদের নির্বিষ রূপ ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটামোদীদের। দুটি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের স্পিনাররা নিয়েছেন মাত্র দুটি উইকেট। প্রথম ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব আল হাসান স্পিনারদের পক্ষে এ দুই উইকেট নেন। অন্যরা একেবারেই অকার্যকর। এদিকে প্রথম ম্যাচে পেসার রুবেল হোসেন ও শফিউল মিলে চারটি উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নির্বিষ ছিলেন তারা। ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্টও। ক্যাচ মিস ও মিস ফিল্ডিংয়ের কারণে দুটি ওয়ানডে ম্যাচে উইকেটে জীবন পেয়েছেন একাধিক উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান। এ দু’দল আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে। ভেন্যুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অভিষেক হতে যাচ্ছে। নতুন উইকেটে ব্যাটসম্যান-বোলাররা নিজেদের পারফরম্যান্স ফিরে পেলে হয়তো কোনোরকম হলেও হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু পরাজয়ের এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে তিক্ত হলেও হোয়াইটওয়াশের স্বাদই গ্রহণ করতে হবে মুশফিকদের।

No comments

Powered by Blogger.