এ বছরই ইরাক ছাড়ছে সব মার্কিন সেনা

রাকে মার্কিন সেনা রাখার পরিকল্পনা ত্যাগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সব সেনা ইরাক ছেড়ে যাবে। শনিবার ওয়াশিংটনে এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা একটি বার্তা সংস্থাকে একথা জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা গতকাল বলেন, বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬০ সেনা ছাড়া সবাই ২০১১ সালের শেষ নাগাদ ইরাক ত্যাগ করবে। তবে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন একথা অস্বীকার করে বলেছে, ইরাক থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশটির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক অটুট থাকবে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করা হবে।


এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আট বছরের ইরাক যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের পুরোপুরি সরিয়ে নিতে সক্ষম হবে। তবে ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়েই গেছে। দেশটিতে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ প্রেক্ষাপটে ইরাক থেকে পুরোপুরি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তুলতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তাদের নানামুখী সুপারিশ ও প্রশ্নের অবসান হবে। ২০০৮ সালে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০০৩ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪শ’ মার্কিন সেনা নিহত হয়। ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য কয়েক হাজার সেনার সম্ভাব্য অবস্থানের ব্যাপারে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়াশিংটন ইরাকি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন।
শনিবার পেন্টাগনের এক মুখপাত্র বলেন, ইরাকি সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শনিবার ওয়াশিংটনে ওবামা প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, দূতাবাসের দায়িত্বে থাকা ১৬০ সেনা ছাড়া সব মার্কিন সেনা ইরাক ত্যাগ করবে। সেনা প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করে অপর এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, অনুরোধ এলে প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট সীমিত আকারে সেনা ইরাকে রাখার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, তাই উভয় কর্মকর্তাই তাদের পরিচয় প্রকাশ করেননি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাকি কর্মকর্তাদের আলোচনা চলে। কিন্তু ইরাকি নেতারা মার্কিন সেনাদের বিচারের হাত থেকে নিষ্কৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের সাফ কথা, মার্কিন সেনাদের অপরাধের জন্য ইরাকি আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। মার্কিন সেনাদের মেয়াদ শেষে ইরাকে অবস্থানের ব্যাপারে ইরাকি নেতৃত্বে মতভেদ দেখা যায়। কিছু নেতার বক্তব্য ছিল, বিশেষভাবে ইরাকের আকাশপথ রক্ষা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য আরও প্রশিক্ষণ ও মার্কিন সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অন্য নেতারা মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির তীব্র বিরোধিতা করেন। শিয়া নেতারা মেয়াদশেষে মার্কিন সেনা অবস্থানের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নূরি আল মালিকি মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের বলেন, আমেরিকান প্রশিক্ষণদানকারীদের কোনো ধরনের অপরাধের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার কোনো ক্ষমতা তার নেই। পার্লামেন্টে তার ভোট দেয়ার অধিকার নেই। মালিকি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বলেন, তিনি পার্লামেন্টে মার্কিন সেনাদের নিষ্কৃতি সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব পার্লামেন্টে তুলতে পারবেন না। কারণ আইনপ্রণেতারা তা অনুমোদন করবেন না।
এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টমি ভিক্টর বলেন, দু’দেশের মধ্যে আগামী বছরের নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা অবশ্য চালু রয়েছে। পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জর্জ লিটল বলেন, ইরাকি কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের শেষনাগাদ সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, একটি বলিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্কসহ কৌশলগত কাঠামো চুক্তির আওতায় ইরাকের সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কৌশলগত কাঠামো চুক্তিতে মার্কিন সেনাদের অবস্থান ছাড়াও অন্য ধরনের সামরিক সহযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বের মধ্যে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসই সবচেয়ে বড়। বশরা, ইররিল, কিরকুক ও অন্যান্য স্থানে পররাষ্ট্র দফতরের অফিস রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.