আ. লীগই ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দিয়ে রাজনীতি নষ্ট করছে : খালেদা জিয়া

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দিয়ে রাজনীতিকে নষ্ট করেছে। ব্যবসায়ীরা অনেক টাকা খরচ করে এমপি-মন্ত্রী হন। তারপর সেই টাকার দ্বিগুণ আয় করেন। এভাবে রাজনীতি চলতে পারে না।সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশ্বব্যাংক এই প্রথম কোনো প্রকল্পের টাকা বন্ধ করেছে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য স্বাভাবিক হলেও বাংলাদেশের জন্য অসম্মানের। এখন পদ্মা সেতু হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।'


গতকাল রবিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের নেতাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, 'বিএনপিতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নতুন নয়। শহীদ জিয়াউর রহমানই এ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। আবার আমরা শুরু করছি। বেশির ভাগ সময় আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত থাকায় করতে পারিনি।'
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পেশিশক্তি নয়, জ্ঞানই রাজনীতির মূল শক্তি। তাই প্রশিক্ষণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আজকের দুনিয়ায় যত বেশি জ্ঞানার্জন করা যাবে ততই শক্তি অর্জন হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। বুকলেট আকারে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য দিলে আওয়ামী লীগ ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবে।' তিনি বলেন, বিএনপিকে এখন অনেক বেশি সজাগ-সচেতন হয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে। সংগ্রাম না করলে চলবে না। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। জ্ঞাননির্ভর রাজনীতি চালু রাখতে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা চালু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আমি রাজনীতিকে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য কঠিন করে দেব। ড্রয়িং রুমের রাজনীতি বন্ধ করে দেব।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান। সভা পরিচালনা করেন অপর প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ। স্বাগত বক্তব্য দেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা ও ড. মাহবুব উল্লাহ।
উদ্বোধনী দিনে বিশ্বায়ন ও সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ-পরবর্তী সরকারের কার্যক্রম, '৭৫-পূর্ব রাষ্ট্রের মূলনীতি ও সরকার, একদলীয় বাকশাল শাসনব্যবস্থা, বাকশাল গঠন, ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, ভারত-বাংলাদেশ অভিন্ন নদীমালা ও পানিচুক্তি, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও বিএনপি_এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৪০ জন নেতা অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন_বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
প্রশিক্ষণ পদ্ধতি : লেকচার, প্রজেক্টর ও প্রশিক্ষণ গাইডের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে নেওয়া হবে পরীক্ষা। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০। পরীক্ষায় কৃতকার্যদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হবে। সাত বিভাগের প্রতিটি বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত যাঁরা পরীক্ষায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করবেন, তাঁদের চেয়ারপারসন ক্রেস্ট উপহার দেবেন। তবে কত দিন ধরে প্রশিক্ষণ চলবে এবং কবে পুরোপুরিভাবে প্রশিক্ষণ শুরু হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি।
পাঠ্যসূচি : পলাশীর যুদ্ধ ও ব্রিটিশ শাসন, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তি, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও '৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সংবিধান, রাষ্ট্র ও সরকার, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষিত। যুদ্ধ-পরবর্তী সরকারের কার্যক্রম, '৭৫ পূর্ব রাষ্ট্রের মূলনীতি ও সরকার, একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল গঠন, ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ, রাজনৈতিক দল গঠন, জনমত ও নীতিনির্ধারণ, বিএনপি গঠন এবং এর কর্মকাণ্ড, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.