বিচারব্যবস্থা এখন জুয়ার আড্ডা : ড. আকবর আলি খান

দেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থাকে জুয়ার আড্ডার সঙ্গে তুলনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেছেন, আমাদের দেশের আইনজ্ঞদের ইতিহাস পাঠ করতে হবে। ব্রিটিশদের করে যাওয়া আইন এবং বর্তমান আইনব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের জীবনব্যবস্থার কোনো মিল নেই। এ ব্যবস্থায় দু’পক্ষের জেতার কোনো সুযোগ নেই। ব্রিটিশদের এই আইনের মাধ্যমে জাল দলিল করা এবং একজনকে জেলে পাঠানো সম্ভব হতো। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আমাদের বিচারব্যবস্থা জুয়ার আড্ডায় পরিণত হয়েছে। তবে সময় এসেছে নৈতিকতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করে দেশকে রক্ষার।


‘এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ বছরপূর্তি উপলক্ষে দিনব্যাপী এক কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
ড. খান বলেন, ব্রিটিশরা যেমন তাদের আইনের মাধ্যমে নিরীহ লোকদের সম্পত্তি গ্রাস করত, গ্রামের একশ্রেণীর অসত্ লোক এ কাজ করত—দেশে বর্তমানে বিদ্যমান আইনেও সত্য-মিথ্যার কোনো পার্থক্য নেই।
ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতে বিচারের অপেক্ষায় থাকা মামলার বিচার করতে হলে সময় লাগবে ৩০ হাজার বছর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে কত বছর লাগবে, তার হিসাব নেই।
এথিকস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এথিকস আইনের ক্ষেত্রে একটি সফল ভিত্তি হতে পারে। কোনো কাজ ভালো না মন্দ হবে, তা আমাদের নীতি ও নৈতিকতার মাধ্যমেই বিচার করতে হবে।
ধর্মের নৈতিকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ধর্মে কাজ করার এবং এর ফলাফল সম্পর্কে ধারণা রাখার তাগিদ রয়েছে। কারণ পৃথিবীতে শুধু সাদা-কালো এই দু’ধরনের রঙ নেই। আরও অনেক রঙ আছে। তাই ভালো-মন্দ বিষয়টিকে নৈতিকতার মাধ্যমেই নির্ধারণ করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে জনাব খান বলেন, স্পষ্ট বিচার হচ্ছে ন্যায়বিচার। পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের মাধ্যমেই আমাদের বিচার করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, যতদিন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বজায় থাকবে ততদিন সমাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা হবে না। তিনি বলেন, অন্যের চেয়ে ভালো থাকার নাম নৈতিকতা নয়; বরং সামগ্রিকভাবে ভালো থাকা হওয়ার নামই নৈতিকতা। এজন্য সমাজে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ এথিকস ক্লাবের সভাপতি লোকমান হোসাইনের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তাসলিমা মানসুর। অন্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাকিব উদ্দিন আহমেদ, এম ই চৌধুরী শামীম বক্তৃতা করেন।

No comments

Powered by Blogger.