বাড়তি দল এবং পুরস্কারের জাতীয় লিগ শুরু আজ

ল বেড়েছে। অর্থ পুরস্কারের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে আয়োজনের খরচও। তবে খেলোয়াড় সংকটের কারণে দল সংখ্যা বৃদ্ধিতে ম্রিয়মাণ মাঠের ক্রিকেট কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, সংশয়ের সে মেঘ মাথায় নিয়েই আজ মাঠে গড়াচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় লিগ। দেশের চারটি মাঠে একযোগে শুরু হচ্ছে এবারের আসর।জাতীয় লিগ শুরু এবং শেষ হয় পিকনিকের আমেজে। এ অভিযোগ দূর করার প্রতিশ্রুতি শোনা যায় প্রতি মৌসুম শেষেই। কিন্তু ঘুরেফিরে নতুন মৌসুমে একই অভিযোগ ঘাড়ে করে মাঠে গড়ায় দেশের একমাত্র প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর।


তাই এবারের আসরে বেশ কিছু নতুনত্ব থাকার পরও সতর্ক বিসিবি পরিচালক এবং টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, 'ভালো-মন্দ আসলে খেলা মাঠে গড়ানোর আগে বলার উপায় নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর জন্য এবার অর্থ পুরস্কারের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া এবারের পয়েন্ট পদ্ধতিও প্রতিটি দলকে আরো ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
রংপুর বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের সঙ্গে মেট্রোপলিস ফিরে আসায় এবারের জাতীয় লিগে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা আট। 'হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে' পদ্ধতিতে যাত্রা শুরু জাতীয় লিগ বেশ কটি আসর ধরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে! এবারও এর ব্যত্যয় ঘটছে না। যদিও গাজী আশরাফ আশাবাদী, 'ছ'টা মাঠ তৈরি আছে। লিগের মাঝপথে আরো দুটি মাঠ খেলার উপযোগী হয়ে উঠবে।' যেসব উইকেটে বাড়তি প্রাণ থাকবে। পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় দেশের বাইরে খেলার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তামিম ইকবালরা এবারের জাতীয় লিগেও পেতে পারেন বলে বিশ্বাস গাজী আশরাফের।
কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সময়-সুযোগ পেলে খেলবেন তো? নাকি নানা ছুঁতোনাতায় এড়িয়ে যাবেন? সে ব্যাপারে আগাম সতর্কতার কথাই জানিয়েছেন গাজী আশরাফ, 'আশা করি সুস্থ থাকলে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা জাতীয় লিগে খেলবে। বোর্ড সে রকম পদক্ষেপই নিয়েছে এবার।' তবে শুধু তো জাতীয় দলের তারকারাই নন, জাতীয় লিগ চলাকালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ 'এ' দল। এ অবস্থায় দেশের শীর্ষ ৩০ ক্রিকেটারকে ছাড়া আট দলের জাতীয় লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে সংশয় আছে। অবশ্য এ সংশয় শুধু একটি রাউন্ডকে ঘিরে করছেন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ, "জাতীয় দল না থাকলেও 'এ' দলের ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে। আবার 'এ' দল যখন দেশের বাইরে যাবে, তখন জাতীয় দলকে পাওয়া যাবে। সমস্যা হবে শুধু তৃতীয় রাউন্ডে। এ সময় ওই ৩০ জন ক্রিকেটারের কাউকে পাওয়া যাবে না।"
তবে কে জানে, আয়োজকদের চিন্তার পথ ধরে বাড়তি অর্থ পুরস্কার এবং ভালো উইকেটে নতুন কোনো তারকার আবির্ভাব হয় কি না এবারের আসরে! গতবার চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য অর্থ পুরস্কার বরাদ্দ ছিল ১২ লাখ টাকা, এবার যা ২০ লাখ। তেমনি ৮ থেকে বেড়ে রানার আপ দলের হাতে উঠবে ১২ লাখ টাকার চেক। প্রথম রাউন্ডে সরাসরি জয়ী দল ২০ হাজারের পরিবর্তে অর্থ পুরস্কার পাবে ৭৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় রাউন্ডে তা ২৫ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে এক লাখ। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা প্রতিটি দল পাবে পাঁচ লাখ টাকার চেক। আর লিগ প্রস্তুতির জন্য প্রতিটি দলকে চার লাখের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা করে। ব্যক্তিগত পুরস্কার এবং খেলোয়াড়দের দৈনিক ভাতাও কিছুটা বেড়েছে। 'দল এবং পুরস্কারের অর্থ বৃদ্ধির কারণে এবারের বাজেট চার কোটি ৪০ লাখ', জানিয়েছেন লিগ কমিটির সচিব হাফিজ জোয়ার্দার। সে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে এখনো কোনো পৃষ্ঠপোষক জাতীয় লিগের পাশে এসে দাঁড়াননি। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে যে, দু-একদিনের মধ্যে জাতীয় লিগের পৃষ্ঠপোষককে জুটিয়ে চমক দেখাতে পারে বিসিবি!
পুরস্কারের অর্থ বৃদ্ধির পাশাপাশি পয়েন্ট পদ্ধতিতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বীজ রোপণ করার চেষ্টাও হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। অতীতে এমনও দেখা গেছে যে, প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েই সন্তুষ্ট একটি দল। সেটি দূর করতে লিড নেওয়া ইনিংসে বেশি রান করার জন্য বাড়তি বোনাস পয়েন্ট থাকছে। তেমনি পিছিয়ে থাকা দলের জন্যও থাকছে বোনাস পয়েন্ট। বোলিংয়েও বোনাস পয়েন্ট সংযোজন করা হয়েছে যেন আরো ভালো কিছু লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে দলগুলো। যেমন ২০০-২৫০ রান করা দল ১ পয়েন্ট বোনাস হিসেবে পাবে। তবে ২০১ করলে ওই ১ রানের জন্য সে দল পাবে আরো দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট। এতে করে ২৪৯ রান করা দলের প্রাপ্ত ১ ব্যাটিং বোনাস পয়েন্টের সঙ্গে যোগ হবে আরো ১.৯৮ পয়েন্ট। তেমনি ৫ উইকেট নেওয়া দল ১ বোলিং বোনাস পয়েন্ট পাবে। এর সঙ্গে প্রতিটি বাড়তি উইকেটের জন্য ওই দলের সংগ্রহে যোগ হবে আরো দশমিক ৫ শূন্য পয়েন্ট। যা লিগ অবস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে। আর এর প্রভাবে দলগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঝাঁপ দেবে, এমনটাই প্রত্যাশা গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর।

No comments

Powered by Blogger.