ধেয়ে আসছে বাউন্সারের ঢেউ! by মাসুদ পারভেজ
উদোম শরীরে বৃত্তাকার লাল ছোপ ছোপ দাগ! ঠিক এভাবে কত ব্যাটসম্যান যে আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় বন্দি হয়েছেন! প্রতিপক্ষের ফাস্ট বোলারদের তেড়েফুঁড়ে দিয়ে যাওয়া একের পর এক বাউন্সারের চিহ্ন শরীরে বয়ে বেড়িয়েছেন অনেক খ্যাতিমান ব্যাটসম্যানও। সে রকম কোনো দাগ-টাগ আবার অলক কাপালির শরীরেও পড়ে যায়নি তো? আগের দিন সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের শর্ট বল তো অন্তত তিন-চারবার তাঁর শরীরে আঘাত হেনেছে। প্রশ্নটা অবশ্য অলক শরীরে লাগতে দিলেন না, 'আমার কিছুই হয়নি (হাসি...)। আমার শরীর শক্তপোক্ত আছে, সমস্যা নেই।'
সমস্যা নেই বলছেন কিন্তু ওয়ানডেতেই ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলাররা যে রকম পূর্বাভাস দিয়ে চলেছেন তাতে আসন্ন টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলের বিভীষিকায় ফেলার আগাম ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের বোলিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অনভ্যস্ততার কথা অজানা নয় ক্যারিবীয়দের। কাজেই খুব স্বাভাবিক যে শর্ট বলেই তামিম ইকবালদের ভয় ধরাতে চাইবেন ফিডেল এডওয়ার্ডস-রবি রামপাল-কেমার রোচরা। ওয়ানডেতে তবু কিছু বিধি-নিষেধ আছে কিন্তু টেস্টে সেটা অনেকটাই ঢিলেঢালা হওয়ার সুবিধা তাঁরা আদায় করে নিতে চাইবেনই।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এ দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর নজির অনেক। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের হোম সিরিজে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটার কথাই চলে আসে সবার আগে। ওই টেস্টে ডেইল স্টেইন-মাখায়া এনটিনি-মরনে মরকেল-জ্যাক ক্যালিসরা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে 'যমদূত' হয়েই এসেছিলেন যেন! বাউন্সারে উইকেটের ওপর লুটিয়ে পড়া থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্তও যেতে হয়েছিল আফতাব আহমেদকে। আজ থেকে শুরু জাতীয় ক্রিকেট লিগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের প্রথম ম্যাচ খেলতে কাল বিকেলে বিকেএসপি যাওয়ার পথে তা মনে করিয়ে দিতেই রীতিমতো শিউরে উঠলেন তিনি, 'ক্যালিসের বাউন্সার...ওরে আল্লাহ রে। আরেকটু হলে আমার বাঁ চোখটাই চলে গিয়েছিল।'
ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস (১১৯) প্রথম ইনিংসের (২৫৯) অর্ধেকেরও কম হওয়ার পেছনে ক্রমাগত শর্ট বলের মুখোমুখি হওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলেই ধরে এসেছেন তিনি, 'কারো ইনজুরি হলে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর এর প্রভাব পড়ে। ওই ম্যাচে মনে হয় আমাদের সবার মধ্যেই বাউন্সারভীতি কাজ করছিল। সে কারণে অন্য বলেও আজেবাজে শট খেলে আউট হয়েছিল ব্যাটসম্যানরা।' এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শরীরে বল নিতে নিতে অলক অন্য রকম কিছুর আশায়ই নাকি সজীব হচ্ছিলেন আরো, 'গায়ে বল লাগায় মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় বড় স্কোর করব, কারণ এর আগে এ রকম অবস্থায়ও আমি বড় রান করেছি।' সে রকম এক উদাহরণও হাজির করলেন, '২০০৩ বিশ্বকাপের পরপর দেশের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে গ্লাভস-হেলমেটে তো বটেই, শরীরেও বল লেগেছিল। এনটিনিদের বল খেলে সেই ম্যাচে আমি ৭১ রান করেছিলাম।' ওই টুর্নামেন্ট শেষে দুই টেস্টের সিরিজে এনটিনিরা শর্ট বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নাভিঃশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছিলেন আরো। ঢাকায় সিরিজের শেষ টেস্টে ঝাপটা একটু বেশিই গিয়েছিল নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা আকরাম খানের ওপর দিয়ে। দুই ইনিংসেই এনটিনির বলে আউট হলেও তাঁর সঙ্গে আকরামের দ্বৈরথও তখন খুব আলোচিত হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনায় কালও বেশ আগ্রহীই মনে হলো এখনকার প্রধান নির্বাচককে, কারণ সেটা যে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের 'হাইলাইটস'ও, 'এক ওভারে পাঁচটা বাউন্সার দিয়েছিল এনটিনি। আমি টানা চার বলে বাউন্ডারি মারার পর পাঁচ নম্বরটায় আউট হয়েছিলাম। গ্লাভসে লেগে ক্যাচ হয়েছিল। এর আগে কাঁধে এবং বুকেও বল লেগেছিল বেশ কয়েকটা।'
টেস্ট অঙ্গনে পা রাখার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই দিনে-দিনে প্রতিপক্ষের শর্ট বলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এর সামনে পেরে না ওঠার একটা কারণই দেখেন আফতাব, 'প্রিমিয়ার কিংবা জাতীয় লিগে আমরা বড়জোর ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতির বল খেলি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে গেলেই আমাদের ১৪০ গতির বল খেলতে হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা চেস্ট গার্ড-এলবো গার্ড পরিই না। অথচ আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামলে আমাদের সব পরতে হয়।' বিশেষ করে দেশের মাঠে খেলা হলে শর্ট বল খেলা আরো কঠিন হয়ে যাওয়ার পেছনে এ ব্যাখ্যাই খুঁজে পান অলক, 'অসমান বাউন্সের কারণে আমাদের উইকেটে অনেক সময় বাউন্সারটা ঠিকমতো আসে না। একসময় জোরে তো আবার কখনো স্লো।'
এ সমস্যার কথা বললেন প্রধান নির্বাচকও, 'আমরা ঠিক শর্ট বলে অভ্যস্ত না। তার ওপর জেনুইন ফাস্ট বোলাররা লো উইকেটে বাউন্সার দিলে সেটা সামলানো আরো কঠিন, কারণ লো উইকেটে আপনি যে উচ্চতায় বাউন্সার আশা করবেন, তার চেয়ে কম উচ্চতায় বল আসে। ওটা অ্যাডজাস্ট করতে অনেক সময় লাগে। এটা অ্যাডজাস্ট হয়ে যেত যদি বাংলাদেশে ওরকম ফাস্ট বোলার থাকত।' মূলের এ সমস্যা আজকের নয়, রাতারাতি সমাধানও অসম্ভব। তাই বলে ক্যারিবীয়রা টেস্ট সিরিজে শর্ট বল দিয়ে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা করে থাকলে সমাধান যে একদমই নেই, তাও মনে করছেন না অলক, 'আমাদের এখানে বাউন্সার যা আসার নতুন বলেই ভালো আসে। পুরনো বলে অতটা আসে না। কাজেই ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে নতুন বলটা পার করে দিতে পারলেই কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।'
আকরাম খান ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়াতেই দেখছেন সমাধান, 'শর্ট বল সামলানোর সেরা উপায় হলো কোনো ঝুঁকিতে না যাওয়া। হুক-পুল না করে গ্ল্যান্স করেও কিন্তু রান করা যায়। সেটা আমরা স্টিভ ওয়াহকে করতে দেখতাম।' স্টিভ ওয়াহর ইনজুরিতে ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের হেড কোচ স্টুয়ার্ট ল সেটা নিশ্চয়ই আরো কাছ থেকে দেখেছেন। টেস্ট সিরিজের আগে শিষ্যদের ঝুঁকি না নেওয়ার দীক্ষাও তাই দিয়ে ফেলার কথা। আর অন্যরা অলকের মতো শক্তপোক্ত হলে তো কিছু বল শরীরে নিলেও কোনো সমস্যা নেই!
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এ দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর নজির অনেক। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের হোম সিরিজে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটার কথাই চলে আসে সবার আগে। ওই টেস্টে ডেইল স্টেইন-মাখায়া এনটিনি-মরনে মরকেল-জ্যাক ক্যালিসরা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে 'যমদূত' হয়েই এসেছিলেন যেন! বাউন্সারে উইকেটের ওপর লুটিয়ে পড়া থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্তও যেতে হয়েছিল আফতাব আহমেদকে। আজ থেকে শুরু জাতীয় ক্রিকেট লিগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের প্রথম ম্যাচ খেলতে কাল বিকেলে বিকেএসপি যাওয়ার পথে তা মনে করিয়ে দিতেই রীতিমতো শিউরে উঠলেন তিনি, 'ক্যালিসের বাউন্সার...ওরে আল্লাহ রে। আরেকটু হলে আমার বাঁ চোখটাই চলে গিয়েছিল।'
ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস (১১৯) প্রথম ইনিংসের (২৫৯) অর্ধেকেরও কম হওয়ার পেছনে ক্রমাগত শর্ট বলের মুখোমুখি হওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলেই ধরে এসেছেন তিনি, 'কারো ইনজুরি হলে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর এর প্রভাব পড়ে। ওই ম্যাচে মনে হয় আমাদের সবার মধ্যেই বাউন্সারভীতি কাজ করছিল। সে কারণে অন্য বলেও আজেবাজে শট খেলে আউট হয়েছিল ব্যাটসম্যানরা।' এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শরীরে বল নিতে নিতে অলক অন্য রকম কিছুর আশায়ই নাকি সজীব হচ্ছিলেন আরো, 'গায়ে বল লাগায় মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় বড় স্কোর করব, কারণ এর আগে এ রকম অবস্থায়ও আমি বড় রান করেছি।' সে রকম এক উদাহরণও হাজির করলেন, '২০০৩ বিশ্বকাপের পরপর দেশের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে গ্লাভস-হেলমেটে তো বটেই, শরীরেও বল লেগেছিল। এনটিনিদের বল খেলে সেই ম্যাচে আমি ৭১ রান করেছিলাম।' ওই টুর্নামেন্ট শেষে দুই টেস্টের সিরিজে এনটিনিরা শর্ট বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নাভিঃশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছিলেন আরো। ঢাকায় সিরিজের শেষ টেস্টে ঝাপটা একটু বেশিই গিয়েছিল নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা আকরাম খানের ওপর দিয়ে। দুই ইনিংসেই এনটিনির বলে আউট হলেও তাঁর সঙ্গে আকরামের দ্বৈরথও তখন খুব আলোচিত হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনায় কালও বেশ আগ্রহীই মনে হলো এখনকার প্রধান নির্বাচককে, কারণ সেটা যে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের 'হাইলাইটস'ও, 'এক ওভারে পাঁচটা বাউন্সার দিয়েছিল এনটিনি। আমি টানা চার বলে বাউন্ডারি মারার পর পাঁচ নম্বরটায় আউট হয়েছিলাম। গ্লাভসে লেগে ক্যাচ হয়েছিল। এর আগে কাঁধে এবং বুকেও বল লেগেছিল বেশ কয়েকটা।'
টেস্ট অঙ্গনে পা রাখার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই দিনে-দিনে প্রতিপক্ষের শর্ট বলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এর সামনে পেরে না ওঠার একটা কারণই দেখেন আফতাব, 'প্রিমিয়ার কিংবা জাতীয় লিগে আমরা বড়জোর ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতির বল খেলি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচে গেলেই আমাদের ১৪০ গতির বল খেলতে হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা চেস্ট গার্ড-এলবো গার্ড পরিই না। অথচ আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামলে আমাদের সব পরতে হয়।' বিশেষ করে দেশের মাঠে খেলা হলে শর্ট বল খেলা আরো কঠিন হয়ে যাওয়ার পেছনে এ ব্যাখ্যাই খুঁজে পান অলক, 'অসমান বাউন্সের কারণে আমাদের উইকেটে অনেক সময় বাউন্সারটা ঠিকমতো আসে না। একসময় জোরে তো আবার কখনো স্লো।'
এ সমস্যার কথা বললেন প্রধান নির্বাচকও, 'আমরা ঠিক শর্ট বলে অভ্যস্ত না। তার ওপর জেনুইন ফাস্ট বোলাররা লো উইকেটে বাউন্সার দিলে সেটা সামলানো আরো কঠিন, কারণ লো উইকেটে আপনি যে উচ্চতায় বাউন্সার আশা করবেন, তার চেয়ে কম উচ্চতায় বল আসে। ওটা অ্যাডজাস্ট করতে অনেক সময় লাগে। এটা অ্যাডজাস্ট হয়ে যেত যদি বাংলাদেশে ওরকম ফাস্ট বোলার থাকত।' মূলের এ সমস্যা আজকের নয়, রাতারাতি সমাধানও অসম্ভব। তাই বলে ক্যারিবীয়রা টেস্ট সিরিজে শর্ট বল দিয়ে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা করে থাকলে সমাধান যে একদমই নেই, তাও মনে করছেন না অলক, 'আমাদের এখানে বাউন্সার যা আসার নতুন বলেই ভালো আসে। পুরনো বলে অতটা আসে না। কাজেই ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে নতুন বলটা পার করে দিতে পারলেই কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।'
আকরাম খান ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়াতেই দেখছেন সমাধান, 'শর্ট বল সামলানোর সেরা উপায় হলো কোনো ঝুঁকিতে না যাওয়া। হুক-পুল না করে গ্ল্যান্স করেও কিন্তু রান করা যায়। সেটা আমরা স্টিভ ওয়াহকে করতে দেখতাম।' স্টিভ ওয়াহর ইনজুরিতে ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের হেড কোচ স্টুয়ার্ট ল সেটা নিশ্চয়ই আরো কাছ থেকে দেখেছেন। টেস্ট সিরিজের আগে শিষ্যদের ঝুঁকি না নেওয়ার দীক্ষাও তাই দিয়ে ফেলার কথা। আর অন্যরা অলকের মতো শক্তপোক্ত হলে তো কিছু বল শরীরে নিলেও কোনো সমস্যা নেই!
No comments