মিরসরাইয়ে গ্রাহকের আমানত নিয়ে উধাও সমবায় প্রতিষ্ঠান by মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন,

ট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় কয়েক শ আমানতকারীর টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান। সঞ্চয়ের বিপরীতে আকর্ষণীয় মুনাফা দেওয়ার কথা বলে দেশ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেয়। এ উপজেলায় দুটিসহ প্রতিষ্ঠানটির তিনটি কার্যালয় রয়েছে। তিনটি কার্যালয়েই তালা ঝুলছে অন্তত ২০ দিন ধরে। মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাটে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়। উপজেলার করেরহাটে রয়েছে আরেকটি শাখা। এ শাখার কয়েকজন বিনিয়োগকারী জানান, এখানে অন্তত ২৫০ জন আমানতকারী রয়েছেন।


তাঁদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। আমানত ফেরত দেওয়ার সর্বশেষ নির্ধারিত দিন ছিল গত শনিবার। কয়েকজন গ্রাহক কার্যালয়ে এসে তালা ঝুলতে দেখেন। তাঁরা অপেক্ষা করেও কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
বিনিয়োগকারীরা জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্থার করেরহাট কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। আমানতকারীরা প্রধান কার্যালয় বারইয়ারহাটে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সেটি বন্ধ রয়েছে আরো আগে থেকে। একইভাবে অন্য শাখা ফেনীর পরশুরাম কার্যালয়টিও তালাবদ্ধ। তিনটি কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। বাড়ি গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁরা সপরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন। জানা গেছে, ২০০৬ সালে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন (নম্বর ০৮৬৫৫) নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। সংস্থার চেয়ারম্যান মঈনুল আহসান পারভেজ। তিনি উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের মিঠানালা গ্রামের বাসিন্দা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আবছার ভুঁইয়া ওরফে ইসমাইলের বাড়ি ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ধনীকুণ্ডা গ্রামে। করেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সুজাপুর গ্রামের কাজী বাড়ির বাসিন্দা।
সংস্থায় আমানত ও সঞ্চয়ী স্কিমে মোট ছয় ধরনের হিসাব চালু করা হয়। সেগুলো হলো সঞ্চয়ী হিসাব (এসএ), মেয়াদি আমানত জমা (এফডিআর), মাসিক উপার্জন প্রকল্প (আইডিআর), মাসিক সঞ্চয় আমানত প্রকল্প (এমএসএ), দৈনিক সঞ্চয় আমানত প্রকল্প (ডিএসএ) এবং মুদারাবা হজ সঞ্চয় প্রকল্প (এমএইচএসপি)।
প্রতিষ্ঠানটির করেরহাট শাখার একাধিক গ্রাহক জানান, এ শাখায় করেরহাট বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জিত বণিক ১৫ লাখ টাকা, সুজন পাল চার লাখ, ওবায়দুল হক কোম্পানী তিন লাখ, শাকিল সাড়ে তিন লাখ, রিফাত মঈন এক লাখ, নাসির উদ্দিন সাড়ে চার লাখ, করেরহাট আদর্শ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ছয় লাখ ৭০ হাজার, শামসুদ্দীন দুই লাখ, রিপন পাল ৬০ হাজার, রবিউল হোসেন সাড়ে ১৩ হাজার, ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ ৯৭ হাজার, গৌতম বণিক ৭২ হাজার, শুঁটকি ব্যবসায়ী খগেন্দ্র ভৌমিক ৮৫ হাজার, মো. ইয়াছিন টিটু এক লাখ ২৬ হাজার, পান ব্যবসায়ী আবু ছালেক এক লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন বিভিন্ন হিসাবে।
শনিবার বিকেলে সংস্থার করেরহাট কার্যালয়ের সামনে এ বিনিয়োগকারীরা জড়ো হন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। ওই সময় তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেন, দু-তিন মাস আগে থেকে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ে টাকা দিতে বারবার ব্যর্থ হয়। এই অবস্থা দেখে গ্রাহকরা আমানত ফেরত দিতে চাপ দেন। কয়েক দফা প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁরা টাকা পাননি।

No comments

Powered by Blogger.