মনিপুর টু জগন্নাথে শিক্ষার নামে গুণ্ডামি! by ফজলুল বারী
নানা কিসিমের দুর্নীতি-গুণ্ডামি এখন আমাদের দেশটার নিত্য সঙ্গী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতি-গুণ্ডামি এসব আজকাল ধারণারও সব সীমা-পরিসীমা ছাড়াচ্ছে। আগে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিলো ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশেষ করে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্রশিবির-ছাত্রসমাজ মার্কা ছাত্র রাজনীতির নামে এক শ্রেণীর তস্করের গুণ্ডামি-দুর্নীতির আধিপত্য! এখন সেখানে ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডারাই সর্বেসর্বা এবং অপ্রতিরোধ্য!
এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীও এদের গায়ে হাত দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না অথবা ইচ্ছা করেন না! সিডনিতে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা সফরে আসার পর তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না কেন? নির্লিপ্ত জবাবে বলা হয়েছে, আগামীতে বিএনপি যখন আন্দোলন করবে, তখন এসব দুষ্টু ছেলেকে কাজে লাগবে তো! সরকারের মনের ভেতরের এই বার্তাটি নিঃসন্দেহে প্রশাসনের কাছে আছে।
অতএব, সরকারি চাকরির বেলায় আনুগত্যের কারণে পুলিশ-র্যাব বাহিনীও এ ব্যাপারে একচোখা অথবা, ‘ছাত্রলীগ দেখিলে চোখ থাকিতে অন্ধ!’
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নানা বিষয়ে রুল ইস্যু করেন। কিন্তু একটি সরকার কেন তার বেয়াড়া ছাত্র সংগঠন নামধারীদের গুণ্ডামি থামাবে না, বা থামাতে পারবে না, এ নিয়ে কিন্তু কোনো বিজ্ঞ আদালতের বিবেকও (!) কখনও কথা বলেন না! এখন কিন্তু আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণ্ডামি-দুর্নীতি শুধুমাত্র ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডাদের মধ্যে বা নামেই সীমিত-সীমাবদ্ধ না। এক শ্রেণীর শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন! অথবা তারা গুণ্ডা হিসাবে ব্যবহার করছেন সরকার দলীয় ক্যাডার লোকজনকে।
সবশেষ মিরপুরের মণিপুর স্কুল আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা বিষয়টির ঘোমটা খুলেছে সবার সামনে। বেরিয়ে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক আরেক নোংরা সন্ত্রাস-গুণ্ডামি-দুর্নীতির স্বরূপ। মণিপুর স্কুলে এ নিয়ে সরকার দলীয় এমপি কামাল মজুমদারের হাতে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে।
সে স্কুলটিতে দেশের আইন সভার এক সদস্যকে সামনে রেখে বেআইনিভাবে অভিভাবকদের কাছ থেকে ডোনেশনের নামে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছিলো। সাম্প্রতিককালে দেশে শিক্ষা-বাণিজ্যের আরেক ভদ্র নাম এই ডোনেশন! এর বাংলা নাম ‘দান’! এটিতো একজন সামর্থ্যবান ব্যক্তি ইচ্ছা এবং সামর্থ্য থাকলে দান করার কথা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেখানে ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের জ্ঞান দান করার কথা সেখানে তারা জ্ঞান দিচ্ছেন, ডোনেশন বাধ্যতামূলক। এটি দিতেই হবে। ইচ্ছে করেন আর না করেন। না পোষালে রাস্তা মাপেন!
আমাদের জোর-জবরদস্তির দেশে যেখানে অভিভাবকরা অসহায় তাই জুলুম হলেও তারা বাধ্য হয়ে এটি দেন। কিন্তু মিরপুরের মণিপুর স্কুলে এই ডোনেশনের নামে নয়া এক জবরদস্তি চালু করা হয়েছিলো! ব্যাংকের মাধ্যমে কুড়ি হাজার, স্কুলের কাউন্টারে আলাদা করে পাঁচ হাজার টাকা! স্কুলের কাউন্টারে যে টাকা নেওয়া হচ্ছিলো এর রশিদও দেয়া হচ্ছিলো না। স্কুলটির অসহায় অভিভাবকরা যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামধারী ব্যবসায়ী শোষক তস্কর প্রতিষ্ঠানটির হাতে জিম্মি, তাই নিরবে টাকা যা চাওয়া হচ্ছিলো, তা দিচ্ছিলেনও।
দেশের এমন অসহায় মানুষজনের দুর্দশার কথা বলার জন্য এখন মিডিয়া ছাড়া কোনো জায়গা নেই। জুলুমের শিকার কোনও অভিভাবক হয়তো প্রতিকার পাবার আশায় বিষয়টি আরটিভি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। অথবা সেখানে আরটিভির কোনো সাংবাদিকের বাচ্চা পড়ে বা ভর্তি হবে। যেভাবেই হোক, সেখানে জুলুমের শিকার অভিভাবকদের কথা শুনতে আরটিভি’র মিডিয়া টিম যায়।
বেআইনি জবরদস্তিমূলক বেশি টাকা নেবার অপরাধে ওই কর্তৃপক্ষের মনে এমনিতে তখন চোর চোর অবস্থা! তাই গেটে প্রহরা বসিয়েছিলেন, যাতে কোনো সাংবাদিক স্কুলের চৌহদ্দিতে ঢুকতে না পারেন! কিন্তু সাংবাদিকরা সেখানে ঢুকে পড়েছিলেন। অভিভাবকদের অভিযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের জবাব জানতে গেলে তারা হৈ হৈ করে ওঠেন।
কর্তৃপক্ষ মানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি। কিন্তু সাংবাদিক শুনে সেখানকার লোকজন গেলেন ক্ষেপে! তথ্য দেওয়ার বদলে কি করে সাংবাদিকরা ঢুকল, কেন ঢুকল এটি হয়ে গেল তাদের অনুসন্ধানের বিষয়? এরপর আমরা আরটিভি’র ফুটেজে দেখলাম নারকীয় আরেক পরিস্থিতি! সাংবাদিক খেদাতে মণিপুর স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী নামধারী একদল লোকের গুণ্ডামি! স্কুলে ঢুকে পড়া একটি মিডিয়া টিমকে তারা কি রকম মস্তানির স্টাইলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছিলেন!
পাবলিকের টাকা নিয়ে একটি স্কুল চালাবেন, অভিভাবকদের অসহায় পেয়ে তাদের সঙ্গে যা খুশি দুই নম্বরি করে বাড়তি টাকা নেবেন, আর এসব নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ সরেজমিন যাচাই করতে মিডিয়ার লোকজন গেলে গায়ের জোরে সেখান থেকে দূর দূর করে বের করে দেবেন? ছি!! (প্লিজ এই মস্তানদেরও চিনে রাখুন)।
এরপর দৃশ্যপটে আসেন এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি আবার স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদ তথা স্কুলভিত্তিক বাণিজ্য মুনাফা কমিটির সভাপতি! গোটা এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা-এমপি! তার আবার এখন নিজের মিডিয়া আছে। ইদানিং দেশে কিছু লোক নানা ব্যক্তিগত স্বার্থে যার যার এমন একটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন! তাদের ধারণা, মিডিয়ার মালিক বনে যেতে পারলে যা খুশি করা যায়! নিজের মিডিয়ার কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিক না দিক, সব মিডিয়ার লোকজনকে তারা নিজের কর্মচারী ভাবতে এক ধরনের সুখ সুখ আনন্দ পান!
মণিপুর স্কুলভিত্তিক শিক্ষা-বাণিজ্যের মুনাফাখোররাও হয়তো সেখানে সাংবাদিক দেখে তাদেরকেও তাদের ‘এমপি স্যারের’ বেতনভূক্ত কর্মচারী ভেবে হৈ হৈ করে তাদেরকে সেখান থেকে মেরে বিদায় করে দিতে চেয়েছেন! তাদের মধ্যে কেউ, হয়তোবা স্বয়ং প্রধান শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানিয়েছেন তাদের এমপি স্যার কামাল মজুমদারকে! ‘স্যার সাংবাদিক’ বলে হয়তো বলতে চেয়েছেন তাদের চুরি ধরা পড়ে যাবার আতঙ্কের খবর! এরপর আর মুহূর্ত দেরি করেননি এমপি। লাটবহর নিয়ে দ্রুত চলে এসেছেন তার সাম্প্রতিক অন্যতম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মনিপুর স্কুলে!
আরটিভি’র ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি তার সঙ্গে পুলিশও ছিলো। অতএব, সেখানে একটি দুর্নীতিবাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিক নিগ্রহসহ যা কিছু ঘটেছে তা পুলিশের উপস্থিতিতেই ঘটেছে! দেশের আইনসভার একজন সদস্য প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে দুর্নীতির পক্ষে বেআইনি নেতৃ্ত্ব দিয়েছেন পুলিশের উপস্থিতিতে! এবং দেশের মানুষ দেখলো পুলিশ কি পরিমাণ দলবাজ অকর্মা!
এখন পর্যন্ত সেই চাক্ষুষ গুণ্ডামির কারণে এমপি অথবা তার চেলাচামুণ্ডা একজনতেও গ্রেপ্তার করলো না! এটিই কী সুশাসনের নমুনা দেশের?
সেখানে হর্সেস মাউথকে সামনাসামনি পেয়ে স্কুলটির শিক্ষা দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এমপি কিভাবে আরটিভি’র রিপোর্টার অপর্ণা সিংহের ক্যামেরা-বুম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন, হাত তুলেছেন দেশের একজন নারী সাংবাদিকের গায়ে সে কাহিনীর ভিডিও ক্লিপিংও এর মাঝে দেখেছেন দেশের মানুষ।
এ নিয়ে আজ আবার এখানে নতুন করে কিছু লিখছি না। ঘটনা নিয়ে এমপির মিথ্যাচার নিয়ে লিখতেই হচ্ছে। মনিপুর স্কুলে অসহায় অভিভাবকদের ঠকিয়ে যে বেশি টাকা নেবার বিষয়টি ঘটনার পরদিনই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ধরা পড়েছে। ওই বৈঠকে বলা হয়, ডোনেশনের টাকা পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেবার আগ পর্যন্ত ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকার থেকে পাওয়া বিনা মূল্যের বইও তার শিক্ষার্থীদের দেয়নি। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়।
অভিভাবকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া সম্পর্কে মণিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সে সভায় বলেন, তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এমপি কামাল মজুমদার তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন!
আর এমপি কামাল মজুমদার কি বলেছেন এ ইস্যুতে? একই দিনে এমপি মিডিয়াকে বলেছেন, কোনো অভিভাবকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় বলে স্কুলের কাউন্টারে আলাদা করে পাঁচ হাজার টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে! একজন অভিভাবক যদি ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে ২০ হাজার টাকা জমা দিতে পারেন, তবে একই সঙ্গে সেখানে বাধ্যতামূলক আরও ৫ হাজার টাকা জমা দিতে পারবেন না কেন? গল্পসল্প বলতেও তো আগপাছের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে একটু হিতাহিত জ্ঞান থাকা দরকার তাই নয় কি?
আর দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়মকানুন, অর্থের বাইরে অভিভাবকদের জিম্মি করে আলাদা টাকা হাতিয়ে নেবার বিষয়টি জায়েজ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে? যেন লোকজন গালি দিলে প্রধানমন্ত্রীকে দিক! প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের লোকজন অনেক কিছু চান। পারলে সবকিছু ফ্রি চান।
আর মণিপুর স্কুলের মতো দেশের সব স্কুল যদি অতিরিক্ত শিক্ষা ব্যবসার নিরাপত্তার স্বার্থে এভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জড়ায় তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী আর তার দপ্তরের কী চেহারা দাঁড়াবে দেশের সাধারণ আমজনতার কাছে? এখন কামাল মজুমদার প্রযোজিত-পরিচালিত মণিপুর স্কুলের শিক্ষা-বাণিজ্য ও দুর্নীতি সম্পর্কে বুঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও একটা বক্তব্য দেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে!
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাইরে বেশি টাকা জমা নেওয়া নিয়ে উত্তেজনা চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে সব সুযোগ-সুবিধা পান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও তাই পাবেন। এর বাইরে এক পয়সাও তাদের কাছ থেকে বেশি নেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি হয়ে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা সরল বিশ্বাসে নিজের পয়সায় মিষ্টি কিনে খেয়েছেন। নিজের পয়সায় আবির কিনে তা মেখে খুশিতে নাচানাচি-ফূর্তি করেছেন! কিন্তু কার্যত দেখা গেলো, তাদের মিষ্টি আর রং কেনার টাকাকড়িই যেন গেছে জলে! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়ন ফি’র নামে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে! এমন শুরুটা সফল-জায়েজ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে বাহানার অভাব হবে না। নানা নামে চলবে টাকা আদায়!
আমাদের ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মতো প্রচলিত প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো যেমন এখন আর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের ধার ধারে না, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে এ ইস্যুতেও ছাত্রলীগ-ছাত্রদল না, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নামে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো, আসিফ মহিউদ্দিনের মতো স্বাধীন ব্লগাররা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা মিছিল নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা অগ্রণী ব্যাংক’র গেটে তালা দিয়েছেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উন্নয়ন ফি’র নামে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছিলো!
এরপর আমরা কি দেখলাম? ছাত্রলীগ নামধারী একদল গুণ্ডা সেখানে হামলা চালালো! এরা কী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাড়ায় সেখানে এসেছিলো? তাদের কাছে কে বড় প্রধানমন্ত্রী না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? প্রধানমন্ত্রীর যদি এমন ইচ্ছা হয় তাহলে তো তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে থেকে এভাবে বার্ষিক উন্নয়ন ফি হিসাবে ৫ হাজার টাকা আদায়ের ঘোষণা আসার কথা! তেমন কেউ কি কিছু শুনেছি কি? বা দেশের এ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব? বড়ই গোলমেলে এক পরিস্থিতি!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এর জবাব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাইরে তারা যে টাকা আদায় শুরু করেছেন, এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েছেন কি না! এই আদায়ের প্রতিবাদ ঠেকাতে যে গুণ্ডামির ঘটনা ঘটেছে, এসব গুণ্ডা তাদের ভাড়া করা কি না, না তারা এমনি এমনিই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে মিজেদের এবং সরকারকে ঠেলে দিতে এসেছে?
এ সরকারের যারা প্রশংসনীয় কাজ করছেন তাদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর হাত এমন মৌচাকে পড়েছে, সেখানে শিক্ষা বাণিজ্যের মুনাফাখোরদের সামলানো অনেক কষ্টের। বাংলাদেশের অসহায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা তাদের হাতে জিম্মি-খেলার পুতুল।
হালের মনিপুর স্কুল, জগন্নাথ দুর্নীতির কেস স্টাডি হাতে নিয়ে একটু জোর দেখিয়ে মাঠে নামুন মন্ত্রী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক গুণ্ডা সেই এমপি, শিক্ষক, ছাত্রলীগ নামধারী যেই হোক এমন এক-দু’জনকে ধরুন, জেলে দিন।
এমন একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হোক। তখন অন্যরাও অটোমেটিক ঠিক হয়ে যাবে। অথবা অন্তত ভয় পাবে। দেশের মানুষজন বড় অসহায়, নাহিদ ভাই। এটা আপনার চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। এসব দুর্বৃত্ত দমনের অন্তত একটা দৃষ্টান্ত উপহার দিন। তাতে দেশের মানুষজন অন্তত ভাবতে শুরু করবেন, সব কিছু একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি।
দায়িত্বে থেকেও তা যদি না পারেন, জবাবদিহি থেকে কিন্তু আপনিও বাদ যাবেন না প্রিয় নাহিদ ভাই!
অতএব, সরকারি চাকরির বেলায় আনুগত্যের কারণে পুলিশ-র্যাব বাহিনীও এ ব্যাপারে একচোখা অথবা, ‘ছাত্রলীগ দেখিলে চোখ থাকিতে অন্ধ!’
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নানা বিষয়ে রুল ইস্যু করেন। কিন্তু একটি সরকার কেন তার বেয়াড়া ছাত্র সংগঠন নামধারীদের গুণ্ডামি থামাবে না, বা থামাতে পারবে না, এ নিয়ে কিন্তু কোনো বিজ্ঞ আদালতের বিবেকও (!) কখনও কথা বলেন না! এখন কিন্তু আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণ্ডামি-দুর্নীতি শুধুমাত্র ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডাদের মধ্যে বা নামেই সীমিত-সীমাবদ্ধ না। এক শ্রেণীর শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন! অথবা তারা গুণ্ডা হিসাবে ব্যবহার করছেন সরকার দলীয় ক্যাডার লোকজনকে।
সবশেষ মিরপুরের মণিপুর স্কুল আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা বিষয়টির ঘোমটা খুলেছে সবার সামনে। বেরিয়ে এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক আরেক নোংরা সন্ত্রাস-গুণ্ডামি-দুর্নীতির স্বরূপ। মণিপুর স্কুলে এ নিয়ে সরকার দলীয় এমপি কামাল মজুমদারের হাতে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে।
সে স্কুলটিতে দেশের আইন সভার এক সদস্যকে সামনে রেখে বেআইনিভাবে অভিভাবকদের কাছ থেকে ডোনেশনের নামে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছিলো। সাম্প্রতিককালে দেশে শিক্ষা-বাণিজ্যের আরেক ভদ্র নাম এই ডোনেশন! এর বাংলা নাম ‘দান’! এটিতো একজন সামর্থ্যবান ব্যক্তি ইচ্ছা এবং সামর্থ্য থাকলে দান করার কথা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেখানে ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের জ্ঞান দান করার কথা সেখানে তারা জ্ঞান দিচ্ছেন, ডোনেশন বাধ্যতামূলক। এটি দিতেই হবে। ইচ্ছে করেন আর না করেন। না পোষালে রাস্তা মাপেন!
আমাদের জোর-জবরদস্তির দেশে যেখানে অভিভাবকরা অসহায় তাই জুলুম হলেও তারা বাধ্য হয়ে এটি দেন। কিন্তু মিরপুরের মণিপুর স্কুলে এই ডোনেশনের নামে নয়া এক জবরদস্তি চালু করা হয়েছিলো! ব্যাংকের মাধ্যমে কুড়ি হাজার, স্কুলের কাউন্টারে আলাদা করে পাঁচ হাজার টাকা! স্কুলের কাউন্টারে যে টাকা নেওয়া হচ্ছিলো এর রশিদও দেয়া হচ্ছিলো না। স্কুলটির অসহায় অভিভাবকরা যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামধারী ব্যবসায়ী শোষক তস্কর প্রতিষ্ঠানটির হাতে জিম্মি, তাই নিরবে টাকা যা চাওয়া হচ্ছিলো, তা দিচ্ছিলেনও।
দেশের এমন অসহায় মানুষজনের দুর্দশার কথা বলার জন্য এখন মিডিয়া ছাড়া কোনো জায়গা নেই। জুলুমের শিকার কোনও অভিভাবক হয়তো প্রতিকার পাবার আশায় বিষয়টি আরটিভি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। অথবা সেখানে আরটিভির কোনো সাংবাদিকের বাচ্চা পড়ে বা ভর্তি হবে। যেভাবেই হোক, সেখানে জুলুমের শিকার অভিভাবকদের কথা শুনতে আরটিভি’র মিডিয়া টিম যায়।
বেআইনি জবরদস্তিমূলক বেশি টাকা নেবার অপরাধে ওই কর্তৃপক্ষের মনে এমনিতে তখন চোর চোর অবস্থা! তাই গেটে প্রহরা বসিয়েছিলেন, যাতে কোনো সাংবাদিক স্কুলের চৌহদ্দিতে ঢুকতে না পারেন! কিন্তু সাংবাদিকরা সেখানে ঢুকে পড়েছিলেন। অভিভাবকদের অভিযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের জবাব জানতে গেলে তারা হৈ হৈ করে ওঠেন।
কর্তৃপক্ষ মানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি। কিন্তু সাংবাদিক শুনে সেখানকার লোকজন গেলেন ক্ষেপে! তথ্য দেওয়ার বদলে কি করে সাংবাদিকরা ঢুকল, কেন ঢুকল এটি হয়ে গেল তাদের অনুসন্ধানের বিষয়? এরপর আমরা আরটিভি’র ফুটেজে দেখলাম নারকীয় আরেক পরিস্থিতি! সাংবাদিক খেদাতে মণিপুর স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী নামধারী একদল লোকের গুণ্ডামি! স্কুলে ঢুকে পড়া একটি মিডিয়া টিমকে তারা কি রকম মস্তানির স্টাইলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছিলেন!
পাবলিকের টাকা নিয়ে একটি স্কুল চালাবেন, অভিভাবকদের অসহায় পেয়ে তাদের সঙ্গে যা খুশি দুই নম্বরি করে বাড়তি টাকা নেবেন, আর এসব নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ সরেজমিন যাচাই করতে মিডিয়ার লোকজন গেলে গায়ের জোরে সেখান থেকে দূর দূর করে বের করে দেবেন? ছি!! (প্লিজ এই মস্তানদেরও চিনে রাখুন)।
এরপর দৃশ্যপটে আসেন এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি আবার স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদ তথা স্কুলভিত্তিক বাণিজ্য মুনাফা কমিটির সভাপতি! গোটা এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা-এমপি! তার আবার এখন নিজের মিডিয়া আছে। ইদানিং দেশে কিছু লোক নানা ব্যক্তিগত স্বার্থে যার যার এমন একটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন! তাদের ধারণা, মিডিয়ার মালিক বনে যেতে পারলে যা খুশি করা যায়! নিজের মিডিয়ার কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিক না দিক, সব মিডিয়ার লোকজনকে তারা নিজের কর্মচারী ভাবতে এক ধরনের সুখ সুখ আনন্দ পান!
মণিপুর স্কুলভিত্তিক শিক্ষা-বাণিজ্যের মুনাফাখোররাও হয়তো সেখানে সাংবাদিক দেখে তাদেরকেও তাদের ‘এমপি স্যারের’ বেতনভূক্ত কর্মচারী ভেবে হৈ হৈ করে তাদেরকে সেখান থেকে মেরে বিদায় করে দিতে চেয়েছেন! তাদের মধ্যে কেউ, হয়তোবা স্বয়ং প্রধান শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানিয়েছেন তাদের এমপি স্যার কামাল মজুমদারকে! ‘স্যার সাংবাদিক’ বলে হয়তো বলতে চেয়েছেন তাদের চুরি ধরা পড়ে যাবার আতঙ্কের খবর! এরপর আর মুহূর্ত দেরি করেননি এমপি। লাটবহর নিয়ে দ্রুত চলে এসেছেন তার সাম্প্রতিক অন্যতম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মনিপুর স্কুলে!
আরটিভি’র ভিডিও ফুটেজে আমরা দেখেছি তার সঙ্গে পুলিশও ছিলো। অতএব, সেখানে একটি দুর্নীতিবাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিক নিগ্রহসহ যা কিছু ঘটেছে তা পুলিশের উপস্থিতিতেই ঘটেছে! দেশের আইনসভার একজন সদস্য প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে দুর্নীতির পক্ষে বেআইনি নেতৃ্ত্ব দিয়েছেন পুলিশের উপস্থিতিতে! এবং দেশের মানুষ দেখলো পুলিশ কি পরিমাণ দলবাজ অকর্মা!
এখন পর্যন্ত সেই চাক্ষুষ গুণ্ডামির কারণে এমপি অথবা তার চেলাচামুণ্ডা একজনতেও গ্রেপ্তার করলো না! এটিই কী সুশাসনের নমুনা দেশের?
সেখানে হর্সেস মাউথকে সামনাসামনি পেয়ে স্কুলটির শিক্ষা দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এমপি কিভাবে আরটিভি’র রিপোর্টার অপর্ণা সিংহের ক্যামেরা-বুম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন, হাত তুলেছেন দেশের একজন নারী সাংবাদিকের গায়ে সে কাহিনীর ভিডিও ক্লিপিংও এর মাঝে দেখেছেন দেশের মানুষ।
এ নিয়ে আজ আবার এখানে নতুন করে কিছু লিখছি না। ঘটনা নিয়ে এমপির মিথ্যাচার নিয়ে লিখতেই হচ্ছে। মনিপুর স্কুলে অসহায় অভিভাবকদের ঠকিয়ে যে বেশি টাকা নেবার বিষয়টি ঘটনার পরদিনই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ধরা পড়েছে। ওই বৈঠকে বলা হয়, ডোনেশনের টাকা পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেবার আগ পর্যন্ত ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকার থেকে পাওয়া বিনা মূল্যের বইও তার শিক্ষার্থীদের দেয়নি। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়।
অভিভাবকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া সম্পর্কে মণিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সে সভায় বলেন, তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এমপি কামাল মজুমদার তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন!
আর এমপি কামাল মজুমদার কি বলেছেন এ ইস্যুতে? একই দিনে এমপি মিডিয়াকে বলেছেন, কোনো অভিভাবকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় বলে স্কুলের কাউন্টারে আলাদা করে পাঁচ হাজার টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে! একজন অভিভাবক যদি ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে ২০ হাজার টাকা জমা দিতে পারেন, তবে একই সঙ্গে সেখানে বাধ্যতামূলক আরও ৫ হাজার টাকা জমা দিতে পারবেন না কেন? গল্পসল্প বলতেও তো আগপাছের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে একটু হিতাহিত জ্ঞান থাকা দরকার তাই নয় কি?
আর দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিয়মকানুন, অর্থের বাইরে অভিভাবকদের জিম্মি করে আলাদা টাকা হাতিয়ে নেবার বিষয়টি জায়েজ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে? যেন লোকজন গালি দিলে প্রধানমন্ত্রীকে দিক! প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের লোকজন অনেক কিছু চান। পারলে সবকিছু ফ্রি চান।
আর মণিপুর স্কুলের মতো দেশের সব স্কুল যদি অতিরিক্ত শিক্ষা ব্যবসার নিরাপত্তার স্বার্থে এভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জড়ায় তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী আর তার দপ্তরের কী চেহারা দাঁড়াবে দেশের সাধারণ আমজনতার কাছে? এখন কামাল মজুমদার প্রযোজিত-পরিচালিত মণিপুর স্কুলের শিক্ষা-বাণিজ্য ও দুর্নীতি সম্পর্কে বুঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও একটা বক্তব্য দেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে!
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাইরে বেশি টাকা জমা নেওয়া নিয়ে উত্তেজনা চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে সব সুযোগ-সুবিধা পান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও তাই পাবেন। এর বাইরে এক পয়সাও তাদের কাছ থেকে বেশি নেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি হয়ে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা সরল বিশ্বাসে নিজের পয়সায় মিষ্টি কিনে খেয়েছেন। নিজের পয়সায় আবির কিনে তা মেখে খুশিতে নাচানাচি-ফূর্তি করেছেন! কিন্তু কার্যত দেখা গেলো, তাদের মিষ্টি আর রং কেনার টাকাকড়িই যেন গেছে জলে! বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়ন ফি’র নামে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে! এমন শুরুটা সফল-জায়েজ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে বাহানার অভাব হবে না। নানা নামে চলবে টাকা আদায়!
আমাদের ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মতো প্রচলিত প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো যেমন এখন আর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের ধার ধারে না, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে এ ইস্যুতেও ছাত্রলীগ-ছাত্রদল না, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নামে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো, আসিফ মহিউদ্দিনের মতো স্বাধীন ব্লগাররা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা মিছিল নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা অগ্রণী ব্যাংক’র গেটে তালা দিয়েছেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উন্নয়ন ফি’র নামে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছিলো!
এরপর আমরা কি দেখলাম? ছাত্রলীগ নামধারী একদল গুণ্ডা সেখানে হামলা চালালো! এরা কী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাড়ায় সেখানে এসেছিলো? তাদের কাছে কে বড় প্রধানমন্ত্রী না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? প্রধানমন্ত্রীর যদি এমন ইচ্ছা হয় তাহলে তো তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে থেকে এভাবে বার্ষিক উন্নয়ন ফি হিসাবে ৫ হাজার টাকা আদায়ের ঘোষণা আসার কথা! তেমন কেউ কি কিছু শুনেছি কি? বা দেশের এ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব? বড়ই গোলমেলে এক পরিস্থিতি!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এর জবাব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাইরে তারা যে টাকা আদায় শুরু করেছেন, এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েছেন কি না! এই আদায়ের প্রতিবাদ ঠেকাতে যে গুণ্ডামির ঘটনা ঘটেছে, এসব গুণ্ডা তাদের ভাড়া করা কি না, না তারা এমনি এমনিই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে মিজেদের এবং সরকারকে ঠেলে দিতে এসেছে?
এ সরকারের যারা প্রশংসনীয় কাজ করছেন তাদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর হাত এমন মৌচাকে পড়েছে, সেখানে শিক্ষা বাণিজ্যের মুনাফাখোরদের সামলানো অনেক কষ্টের। বাংলাদেশের অসহায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা তাদের হাতে জিম্মি-খেলার পুতুল।
হালের মনিপুর স্কুল, জগন্নাথ দুর্নীতির কেস স্টাডি হাতে নিয়ে একটু জোর দেখিয়ে মাঠে নামুন মন্ত্রী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক গুণ্ডা সেই এমপি, শিক্ষক, ছাত্রলীগ নামধারী যেই হোক এমন এক-দু’জনকে ধরুন, জেলে দিন।
এমন একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হোক। তখন অন্যরাও অটোমেটিক ঠিক হয়ে যাবে। অথবা অন্তত ভয় পাবে। দেশের মানুষজন বড় অসহায়, নাহিদ ভাই। এটা আপনার চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। এসব দুর্বৃত্ত দমনের অন্তত একটা দৃষ্টান্ত উপহার দিন। তাতে দেশের মানুষজন অন্তত ভাবতে শুরু করবেন, সব কিছু একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি।
দায়িত্বে থেকেও তা যদি না পারেন, জবাবদিহি থেকে কিন্তু আপনিও বাদ যাবেন না প্রিয় নাহিদ ভাই!
No comments