ইমরান খানের বিস্ময়কর উত্থান-প্লেবয় ক্রিকেটার থেকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী

ত ডিসেম্বরে করাচিতে সমাবেশ করলেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) এটি সবচেয়ে বড় সমাবেশ। এ সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার আগে ইমরান খান সম্পর্কে বলা হয়_ এখন আপনাদের সামনে এমন একজন মানুষকে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যিনি পাকিস্তানকে রক্ষা করবেন। তার বক্তব্যে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৯০ দিনে দুর্নীতি দূর করার ঘোষণা দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সাবেক এ প্লেবয়


ক্রিকেট তারকা। অনেকে এখনই ইমরান খানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা শুরু করেছেন।
রাজনীতির মরু ময়দানে ১৫টি বছর ইতস্তত ঘুরে বেড়ানোর পর এবার ইমরান খানকে সম্ভবত প্রতিশ্রুত ক্ষমতার পথেই হাঁটানো শুরু হয়েছে। কেউ কেউ অবাক হয়ে ভাবতে পারেন, যাকে টক শোতে আলোচনা করতে দেখে মানুষ হাসাহাসি করেছে, হঠাৎ মাস ছয়েক ধরে তার মধ্যে 'পরিত্রাতা ঈসা মসিয়ের' সন্ধান লাভ হলো কীভাবে!
এক বছর বা তারও কিছু আগে পাকিস্তানের কিছু পত্রিকায় একটি খবর ও সংবাদ বিশ্লেষণ দেখা গিয়েছিল। তাতে দেশের এস্টাবলিশমেন্টের একটি পরিকল্পনার কথা ফাঁস করা হয়েছিল। খবরে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টকে (এমকিউএম) দেশের আরও বড় দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে এস্টাবলিশমেন্ট। এ প্রস্তুতি এতই নিখুঁত যে, এমকিউএমে রাজনীতির বড় বড় খেলোয়াড় যোগ দিতে শুরু করেছেন। এভাবে এমকিউএমকে পাঞ্জাবে শক্ত একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসলামাবাদের ক্ষমতায় আরোহণের পথও তৈরি করা শুরু হয়। দলটির নামে জাতীয় পর্যায়ের দলের মতোই তকমা লাগানো শুরু হয়। কিন্তু পিপিপির পদত্যাগী নেতা জুলফিকার মির্জা এমকিউএমের গোপন কিছু তথ্য ফাঁস করে দিলে এস্টাবলিশমেন্টের সব আশা-ভরসা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এতে এস্টাবলিশমেন্টের নতুন ঘোড়ার প্রয়োজন দেখা দেয়।
ইমরান খানের পেছনে এই এস্টাবলিশমেন্টের বিনিয়োগ অনেক। জেনারেল হামিদ গুলের অনেক সময় কেটেছে ইমরান খানকে রাজনীতি শেখাতে। অনেকেরই স্মরণ থাকতে পারে, ১৯৯০ সালে হামিদ গুল, ইমরান খান ও তাদের কয়েক দোসর তৎকালীন বেনজির ভুট্টো সরকারকে উৎখাত করতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফের সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতের পর ইমরান খান ও তার গুরুরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঠিকানা গড়ার সুযোগের বেশ কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। তবে বাস্তব অবস্থা বুঝে হামিদ গুল পরে সরে পড়লেও ইমরান লেগে রইলেন। এস্টাবলিশমেন্টও তাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করতে লাগল। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের পক্ষে প্রকাশ্যে রাস্তায়ও দেখা যেতে লাগল তাকে। তবে বেশি দাবি-দাওয়ার কারণে মোশাররফ এক সময় তাকে বিদায় দিলেন। কাছে টেনে নিলেন এমকিউএমকে।
মোশাররফের পর ক্ষমতায় এলো পিপিপি। কিন্তু সৌদি আরব প্রকাশ্যে তার নারাজি জানিয়ে দিল। পাকিস্তান এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে সৌদি আরবের হৃদ্য সর্বজনবিদিত। ফলে সৌদির বিরাগ উপেক্ষা করা অসম্ভব। পিপিপি সরকারও ব্যাপক ব্যর্থতার পরিচয় দিতে শুরু করল। এ অবস্থায় আবারও এমকিউএমকে সমর্থন দেওয়া শুরু করল এস্টাবলিশমেন্ট। তবে দ্রুতই বুঝতে পারল সিন্ধুর মতো পাঞ্জাব এমকিউএমের জন্য এত সহজ হবে না। লাদেন হত্যা, মেমোগেট কেলেঙ্কারি সব মিলিয়ে বলা যায়, এ সরকারের ভবিষ্যত তালাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এখন তাহলে কে? এককালের বিশ্বস্ত নওয়াজ শরিফ তার প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছেন। চৌধুরীরা আঠার মতো লেগে আছে জারদারির সঙ্গে। পাঞ্জাবে ব্যর্থতার কারণে হিসাবের বাইরে চলে গেছে এমকিউএম। এ অবস্থায় ইমরান খান নামক বেলুনে গরম বাতাস প্রবেশ করানো ছাড়া এস্টাবলিশমেন্টের আর কী করণীয় আছে?
সূত্র :ডেইলি টাইমস, দ্য টাইম

No comments

Powered by Blogger.