প্রথম দু’বছরের তুলনায় শেষ বছর ছিল নাজুক
এমএম মাসুদ: বর্তমান সরকারের তিন বছরের মধ্যে গত বছর অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ছিল দুর্বলতম ও নাজুকতম। বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন ও আমাদের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত অব্যবস্থাপনার কারণে এটা হয়েছে। জীবনযাত্রায় ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। বাড়ি ভাড়া, পরিবহন ব্যয় ইত্যাদির কারণে মূল্যস্ফীতি এখন জনজীবনে হুমকি হিসেবে এসেছে। সব মিলিয়ে ২০১২ সাল অর্থনৈতিকভবে বিভিন্ন ঝুঁকি, সঙ্কট ও শঙ্কার মধ্যে থাকবে এবং বড় শঙ্কার জায়গাটা হলো আগামীতে রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে। এটাই বর্তমান সামষ্টিক নিয়ামক হিসেবে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। মানবজমিন-এ সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিদায়ী ২০১১ সালে দেশের অর্থনীতিটা কেমন ছিল আর ২০১২ সাল কেমন যাবে বলে জানতে চাইলে ড. দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতির বিবেচনায় বর্তমান সরকারের তিন বছরের প্রথম দুই বছরের তুলনায় গত বছরটা নাজুক ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন ও আমাদের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত অব্যবস্থাপনার কারণে এটা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সমস্যাগুলো সূত্রপাতের সময় সরকার এগুলোকে আমলে নেয়নি। যথাসময়ে যদি এগুলোকে বিবেচনায় নেয়া হতো এবং সরকার অস্বীকার করার মনোভাবের ভেতর না থাকতো, তাহলে সরকারই অনেক বেশি উপকৃত হতো। তিনি বলেন, এর শুরুটা হয় মূলত ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটের পর থেকে। যখন বাজেট পেশ করা হয় তখন থেকেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা প্রকাশ পেতে থাকে। এর মধ্যে মুদ্রানীতি, রাজস্ব আয় ও ৬ষ্ঠ বার্ষিকী পরিকল্পনায় বাস্তবতার সঙ্গে কোন মিল ছিল না। এছাড়া গত বছরের সামগ্রিক অর্থনীতির সমস্যার মূল উৎস ছিল সরকারি আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা। আর এর অন্যতম উৎস ছিল ভাড়াটে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকি ও জ্বালানি আমদানি। এই দু’টি জায়গায় যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বাস্তবতার সঙ্গে এর কোন মিল ছিল না। এছাড়া প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সাহায্য ছাড় করতে না পারার ফলে সমস্যা জটিল রূপ ধারণ করে। সরকারকে বিপুল পরিমাণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। ফলে শেষ বিচারে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে টান পড়ে।
সামগ্রিক অর্থনৈতির বিবেচনায় আরও দুর্বল দিক উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে অব্যবস্থাপনা, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়া, বৈদেশিক সাহায্য আরও কমে যাওয়া, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স ওঠানামা করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছাড়াও আলোচ্য বছরে আমদানি বৃদ্ধির হার বেশি কমে যাওয়ায় বণিজ্য ঘাটতি বাড়ে- চলতি হিসাবে দেখা দেয় ঘাটতি, সার্বিকভাবে বৈদেশিক লেনদেন চাপের মধ্যে পড়ে। এর প্রত্যক্ষ ফলাফল দাঁড়ায় টাকার বিনিময় হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া। তবে এবারের অর্থনীতির সাফল্যের দিক ছিল কৃষি, রাজস্ব ও রপ্তানি বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের সরবরাহের ক্ষেত্রে উন্নতি।
অন্যদিকে ২০১২ সালের মূল চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, মূল চ্যালেঞ্জ সকলেই স্বীকার করবে- তাহলো মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য যেমন- বাড়ি ভাড়া, পরিবহন, জ্বালানি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে। এসব সীমিত আয়ের মানুষকে চাপের মধ্যে রাখবে। এ জায়গাটা একটা বড় মনোযোগের কেন্দ্র হবে এবারের ২০১২ সাল। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকার যদি অতি মাত্রায় সঙ্কোচন নীতি অবলম্বন করে তাহলে প্রবৃদ্ধি মার খাবে। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়কে অব্যাহত রাখা এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে বেগবান করা আগামী বছরের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। সামপ্রতিক সময়ে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং এডিবি’র বাস্তবায়ন গতানুগতিকের বাইরে যেতে পারেনি সরকার। এ সবই চলতি বছরের জন্য চ্যালেঞ্জ।
তবে চলতি বছরে আশা ও শঙ্কার দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক যে সাহায্য আটকে আছে সেটাকে ছাড় করা, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা, রপ্তানির বাজারকে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে সমপ্রসারণ করা ও জনশক্তি যে পরিমাণ বাইরে রপ্তানি হচ্ছে এর ধারা অব্যাহত রাখা দরকার। তবে শঙ্কার জায়গাটা হলো আগামীতে রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে। এই ঝুঁকিকে মোকাবিলা করে সরকার তার উন্নয়ন কার্যক্রম কিভাবে চালাবে সেটাই সামগ্রিকভাবে বিবেচ্য বিষয়। এটাই এখন সামষ্টিক নিয়ামক হিসেবে দাঁড়াবে বলে দেবপ্রিয় মন্তব্য করেন।
বিদায়ী ২০১১ সালে দেশের অর্থনীতিটা কেমন ছিল আর ২০১২ সাল কেমন যাবে বলে জানতে চাইলে ড. দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতির বিবেচনায় বর্তমান সরকারের তিন বছরের প্রথম দুই বছরের তুলনায় গত বছরটা নাজুক ছিল। বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন ও আমাদের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত অব্যবস্থাপনার কারণে এটা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সমস্যাগুলো সূত্রপাতের সময় সরকার এগুলোকে আমলে নেয়নি। যথাসময়ে যদি এগুলোকে বিবেচনায় নেয়া হতো এবং সরকার অস্বীকার করার মনোভাবের ভেতর না থাকতো, তাহলে সরকারই অনেক বেশি উপকৃত হতো। তিনি বলেন, এর শুরুটা হয় মূলত ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটের পর থেকে। যখন বাজেট পেশ করা হয় তখন থেকেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা প্রকাশ পেতে থাকে। এর মধ্যে মুদ্রানীতি, রাজস্ব আয় ও ৬ষ্ঠ বার্ষিকী পরিকল্পনায় বাস্তবতার সঙ্গে কোন মিল ছিল না। এছাড়া গত বছরের সামগ্রিক অর্থনীতির সমস্যার মূল উৎস ছিল সরকারি আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা। আর এর অন্যতম উৎস ছিল ভাড়াটে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকি ও জ্বালানি আমদানি। এই দু’টি জায়গায় যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বাস্তবতার সঙ্গে এর কোন মিল ছিল না। এছাড়া প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সাহায্য ছাড় করতে না পারার ফলে সমস্যা জটিল রূপ ধারণ করে। সরকারকে বিপুল পরিমাণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। ফলে শেষ বিচারে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে টান পড়ে।
সামগ্রিক অর্থনৈতির বিবেচনায় আরও দুর্বল দিক উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে অব্যবস্থাপনা, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়া, বৈদেশিক সাহায্য আরও কমে যাওয়া, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স ওঠানামা করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছাড়াও আলোচ্য বছরে আমদানি বৃদ্ধির হার বেশি কমে যাওয়ায় বণিজ্য ঘাটতি বাড়ে- চলতি হিসাবে দেখা দেয় ঘাটতি, সার্বিকভাবে বৈদেশিক লেনদেন চাপের মধ্যে পড়ে। এর প্রত্যক্ষ ফলাফল দাঁড়ায় টাকার বিনিময় হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়া। তবে এবারের অর্থনীতির সাফল্যের দিক ছিল কৃষি, রাজস্ব ও রপ্তানি বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের সরবরাহের ক্ষেত্রে উন্নতি।
অন্যদিকে ২০১২ সালের মূল চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, মূল চ্যালেঞ্জ সকলেই স্বীকার করবে- তাহলো মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য যেমন- বাড়ি ভাড়া, পরিবহন, জ্বালানি ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে। এসব সীমিত আয়ের মানুষকে চাপের মধ্যে রাখবে। এ জায়গাটা একটা বড় মনোযোগের কেন্দ্র হবে এবারের ২০১২ সাল। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকার যদি অতি মাত্রায় সঙ্কোচন নীতি অবলম্বন করে তাহলে প্রবৃদ্ধি মার খাবে। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়কে অব্যাহত রাখা এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে বেগবান করা আগামী বছরের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। সামপ্রতিক সময়ে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং এডিবি’র বাস্তবায়ন গতানুগতিকের বাইরে যেতে পারেনি সরকার। এ সবই চলতি বছরের জন্য চ্যালেঞ্জ।
তবে চলতি বছরে আশা ও শঙ্কার দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক যে সাহায্য আটকে আছে সেটাকে ছাড় করা, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা, রপ্তানির বাজারকে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে সমপ্রসারণ করা ও জনশক্তি যে পরিমাণ বাইরে রপ্তানি হচ্ছে এর ধারা অব্যাহত রাখা দরকার। তবে শঙ্কার জায়গাটা হলো আগামীতে রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে। এই ঝুঁকিকে মোকাবিলা করে সরকার তার উন্নয়ন কার্যক্রম কিভাবে চালাবে সেটাই সামগ্রিকভাবে বিবেচ্য বিষয়। এটাই এখন সামষ্টিক নিয়ামক হিসেবে দাঁড়াবে বলে দেবপ্রিয় মন্তব্য করেন।
No comments