অতিরিক্ত ভর্তি ফি-অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে

শিক্ষা এখন একটি লাভজনক পণ্য। সেই পণ্য নিয়ে বাণিজ্য করছে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজধানীর অনেক নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে নীতিভঙ্গের অভিযোগ। সরকারের নিয়মনীতি লংঘন করে উন্নয়নের নামে ভর্তির সময় নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। অনেক ক্ষেত্রে অনুদান হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজধানীর নামি স্কুলে ভর্তির মাপকাঠি। অভিভাবকরা এ ক্ষেত্রে স্কুলের কাছে জিম্মি। সরকারও যেন অনেকটা অসহায়। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের সঙ্গে রাজধানীর
বিভিন্ন স্কুলের প্রধানদের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব অভিভাবকই চান তাঁদের সন্তানকে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে। অভিভাবকদের এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কোচিং-ব্যবসা রমরমা অনেক আগে থেকেই। রাজধানীর নামি স্কুলগুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কোচিং করানোর নামে বছরজুড়ে চলে ব্যবসা। নামি স্কুলগুলোর এই ব্যবসা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে। কিন্তু নামি স্কুলগুলো নিজেদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষা নিয়ে যে ব্যবসা শুরু করেছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব স্পষ্ট করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত কোনো ফি নেওয়া যাবে না। অনুদান বা উন্নয়নের জন্য অভিভাবকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করা যাবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে অনেক স্কুলই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া নিয়মনীতি মানতে নারাজ। এর জন্য প্রয়োজনে এমপিও না নেওয়ার পক্ষে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের কথায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্র ও সরকারের চেয়ে বড় কেউ নয়। সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া অঙ্কের অতিরিক্ত ফি আদায় করলে, সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ওই বৈঠকে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আগে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিয়েছে, এমন উদাহরণ টেনে ওই সভায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের কাছ থেকে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অতিরিক্ত ফি আদায়ের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি এক সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন। সরকারদলীয় এক এমপির দিকেই অভিযোগের তীর। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে এ জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন।
ভর্তি-বাণিজ্য, কোচিং, ঘরে বসে প্রাইভেট পড়ানো ইত্যাদি এখন অনেকটাই হালাল করে ফেলা হয়েছে। স্কুলের পর বাড়িতে অধিকাংশ শিক্ষকই প্রাইভেট পড়ান। প্রাইভেট না পড়লে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগও আছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মিলে গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার। সেই কোচিং সেন্টারে ভর্তি না হলে স্কুলের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগও আছে। এসব বাণিজ্য থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করতে হবে। দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির নিয়ম আছে। সরকার ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই নির্দেশনার বাইরে যাওয়া অপরাধ। কোনো প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য করলে তা অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা
করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.