আগামীর আবিষ্কার by অর্পিতা নুজহাত

টিএসআইর একটি দল এ প্রজেক্টটি আরও স্বল্প ব্যয়ে বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে, যাকে বলা হয় ব্লুশেড। এ কার্যক্রমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া সমুদ্র উপকূল থেকে কিছু দূরে একটি ত্রুক্রজ লাইনার তৈরির পরিকল্পনা করা হয় আজকের যে আধুনিক সভ্যতা তার ক্রমবিকাশের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বিজ্ঞানের। যা মানুষকে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য, দিয়েছে গতি। প্রাচীন যুগ থেকে এই বিজ্ঞানের প্রসারেই আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা। ঠিক আজকের


বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাও নিয়ে আসবে ভবিষ্যতের সাফল্য। গত শতাব্দীতে যেসব বিষয় কল্পনা ও তত্ত্ব হিসেবে ছিল তার অনেকটাই পরিণত হয়েছে বাস্তবে। ঠিক বর্তমান বিজ্ঞানে যে বিষয়গুলো গবেষণা গ্রন্থের পাতায় আছে, ভবিষ্যতে সেগুলোই হয়ে উঠতে পারে বিজ্ঞানের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। এমন কিছু তাত্তি্বক বিজ্ঞানের বিষয়, যা হতে পারে আগামী দিনের সেরা আবিষ্কার_ তেমন কিছু বিষয় নিয়ে এই প্রতিবেদন।

স্পেস এলিভেটর
বহুদিন ধরেই স্পেস এলিভেটরের কথা শুনে আসছি আমরা। আগামী দিনের বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় শিগগিরই এই স্পেস এলিভেটর যোগ হতে যাচ্ছে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের। স্পেস এলিভেটর এমন এক যন্ত্র যা পৃথিবীর ভূমি থেকে সোজা ওপরের দিকে উঠে যাওয়া প্রচণ্ড শক্ত কিন্তু হালকা একটা কেবল, যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১ লাখ কিলোমিটার। সেটিই হয়ে উঠছে রকেটের বিকল্প। রকেট মহাকাশে যায় একটা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। এ জন্য খরচ হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। এ ধারণাটিকে ভেঙে ফেলতে তৈরি হচ্ছে রকেটের বিকল্প স্পেস এলিভেটর।
ব্যাপারটা অনেকটা লিফটের মতো। এখানে লিফটে করে যাওয়া যাবে মহাকাশে। এতে খরচ হবে বর্তমানে প্রচলিত খরচের সামান্য একটা অংশ। ঝুঁকি অনেক কম। বহুকাল ধরে স্পেস এলিভেটর নামের মহাকাশযানের বিষয়টি ছিল সায়েন্স ফিকশনের ভেতরে। সম্প্রতি নাসা স্পেস এলিভেটর নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নাসার মতে, বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে এক কিলোগ্রাম ওজনের কোনো কিছু নিতে খরচ পড়ে ২০ হাজার ডলার। অনেক গবেষণা করে জানা গেছে, স্পেস এলিভেটর ব্যবহার করলে খরচ হবে মাত্র ২০০ ডলার। এখন একসঙ্গে যদি কয়েকটা এলিভেটর ব্যবহার করা যায়, তাহলে খরচ আরও কমে যাবে_ তখন খরচ হবে কিলোগ্রামপ্রতি মাত্র ১০ ডলার। শুধু তাই নয়, এই স্পেস এলিভেটর। মহাকাশযাত্রাকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার মতো একটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত করবে।

সর্বরোগের মহৌষধ
মানুষের কোনো রোগ থাকবে না। তারা চিরযৌবন হবে_ হাজার হাজার বছর ধরে সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মানুষ। পুরাণেও আছে এমন প্রচেষ্টা নিয়ে কাহিনী। অমরত্ব আর পাওয়া চিরযুবা হওয়ার জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদী সেঁচে অমৃত সন্ধানের পুরাণ কাহিনীর কথা আমরা জানি। কিন্তু সত্যিই যদি এমনটি হয়? একটি বড়ি খেলেই যদি মানুষ হয়ে যায় চিরযুবা, তার কোনো রোগ থাকবে না, পাবে অনন্ত যৌবন?
মানুষকে সে ওষুধ দিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। আর এটা হলে সামনের দিনগুলোতে এটাই হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বকালের সেরা আবিষ্কার। গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষকে চিরযৌবন দিতে তারা শিগগিরই নিয়ে আসছেন এক মহৌষধ। এ ওষুধ মানুষের অকালবার্ধক্যকেই শুধু ঠেকাবে না, সেই সঙ্গে আয়ুও বাড়িয়ে দেবে ১০ বছরের বেশি। এ বিশেষ গবেষণার জন্য তারা হাচিসন গ্গি্নফোর্ড প্রোজেরিয়া সিনড্রোমে (এইচজিপিএস) আক্রান্ত শিশুদের ত্বকের কোষ নিয়েছিলেন। এটি একটি বিরল রোগ। এতে আক্রান্ত শিশুরা দ্রুত বুড়িয়ে যায়। মোটামুটি ১২ বছর বয়সে সাধারণত তাদের মৃত্যু হয়। বিজ্ঞানীরা র‌্যাপামাইসিন নামের এক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে ওই শিশুদের কোষকে সারিয়ে তুলেছেন। বিজ্ঞানীরা এ ওষুধকে বলছেন 'চিরযৌবনের ওষুধ'। এটি মরণব্যাধি এইডস প্রতিরোধে সক্ষম হবে বলেও ধারণা বিজ্ঞানীদের।

আন্তঃনক্ষত্রীয় মহাকাশযান
এতদিন ধরে সায়েন্স ফিকশনের পাতায় আবদ্ধ ছিল আন্তঃনক্ষত্রীয় মহাকাশযানের ধারণা। তবে বর্তমানে এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহ ও নক্ষত্রে যাওয়ার জন্য আন্তঃনক্ষত্রীয় মহাকাশযান বানানোর কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। আন্তঃগ্রহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই যানটি বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম। এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সিতে যোগাযোগে এবং উপনিবেশ স্থাপন করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান খুঁজতে সক্ষম। এটা কি সত্যিই সম্ভব? নাসার ব্রেকথ্রু প্রপালসন ফিজিক্স প্রজেক্ট নিশ্চিত করেছে, এ ধরনের আন্তঃনক্ষত্রীয় মহাকাশযান সম্ভব। তবে এ জন্য ওই মহাকাশযানটিকে সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন হতে হবে। এর জ্বালানি জোগানোর জন্য যানটি চলাচল করা অবস্থায় যাতে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে তার ব্যবস্থাও করতে হবে। তাই আগামী কয়েক দশকে যদি এ যানটি আবিষ্কার হয়েও যায় তবে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

অন্য গ্রহের খোঁজে
পৃথিবীর তাপমাত্রা, আবহাওয়া, ভূপৃষ্ঠের উপরিতল এবং এর বাস্তুসংস্থানের মতো কিংবা এর কাছাকাছি এমন একটি গ্রহ খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে কষ্ট হলেও মানুষ মানিয়ে নিতে পারবে। সে জন্য নেওয়া হয়েছে টেরাফোরিং বা পৃথিবীর গঠন সংক্রান্ত এ প্রজেক্ট। এক্ষেত্রে মূলত পৃথিবীর গঠনের মতোই একটি গ্রহ খোঁজা হচ্ছিল যেখানকার আহাওয়া এবং তাপমাত্রায় মানুষ টিকে থাকতে পারবে। তবে মানুষের অন্যতম স্বপ্ন_ অন্য ছায়াপথ গ্রহে উপনিবেশের স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি। কিন্তু আসলেই কি এটা সম্ভব? তাত্তি্বক বিজ্ঞান বলছে, এটা সম্ভব। ইকোসিনথেসিসি। এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতি একটি প্রতিকূল পরিবেশে স্থাপনা করা। যে পরিবেশে তার জীবনযাত্রা বিঘি্নত হবে তবে; সময়ের সঙ্গে ওই স্থানের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে তা প্রত্যর্পণ করবে।

অ্যান্টিগ্রাভিটি
কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং রহস্যময় ঘটনা। ভারী নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ চাপ যখন মহাকর্ষের কাছে পরাজিত হয় তখন নক্ষত্র কেন্দ্রে বিলীন হয়ে যায় , কিংবা তার হয়তো একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে, যা আমরা বাইরে থেকে নির্ধারণ করতে পারি না। অর্থাৎ তখন মহাকর্ষের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান্টিগ্রাভিটি বা মহাকর্ষবিরোধী শক্তির কোনো স্থান নেই। এ কারণে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর একটি রহস্যময় বিষয়।
মহাকর্ষ আদতে স্থান কাল বক্রতার একটি পরিমাপ, বস্তুর উপস্থিতি কীভাবে তার চারপাশকে প্রভাবিত করে, সেটাই মহাকর্ষের মূল পাঠ্য।
সেখানে বস্তু অন্য সব স্থানের মতোই বাইরের কোনো প্রভাব না থাকলে সরল পথে চলতে থাকে, তবে যেহেতু বস্তুর উপস্থিতি স্থানকে প্রভাবিত করে, সুতরাং বস্তুর সরল পথ সে সমতলের ওপরে সরল পথ হলেও সেটা অন্য স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বক্রাকার ধারণ করে। কৃষ্ণগহ্বরে এই বক্রতার পরিমাণ এতটাই বেশি যে আলো একবার সেখানে পতিত হলে আর বাইরে বের হয়ে আসতে পারে না। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন ভবিষ্যতে এই কৃষ্ণগহ্বর মানুষের পরবর্তী শক্তির উৎস হয়ে উঠবে এই জ্ঞানী উপসংহার নিয়ে। বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্বর থেকে শক্তি আহরণের কথা ভাবছেন। তারা মহাকর্ষ শক্তিকে বিকর্ষণ করে কিংবা এন্টিগ্রাভিটি ম্যাটার_ এমন কিছু আবিষ্কারের চিন্তা করছেন যদিও গবেষণাগ্রন্থের পাতার বাইরে অন্য কোথাও এর উপস্থিতি নেই। চেনা এন্টিগ্রাভিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি পারমাণবিক পরিবেশে এবং সৌরজগতের বিশাল আকৃতিতেও এমন কোনো বস্তুর উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি যা মহাকর্ষীয় বিকর্ষণ অনুভব করে। তার পরও বিজ্ঞানীরা কিছু তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, যেগুলোর মাধ্যমে বর্তমানে তাত্তি্বকভাবে অ্যান্টিগ্র্যাভিটি উপস্থিতি সম্ভব। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এসব তত্ত্ব প্রমাণিত হবে।

ট্রান্স আটলান্টিক টানেল
ট্রান্স আটলান্টিক টানেল হচ্ছে একটি তাত্তি্বক সুড়ঙ্গপথ। যার বিস্তৃতি আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত। তাত্তি্বকভাবে কল্পিত এই সুড়ঙ্গ রাস্তাকে ভবিষ্যতে গণপরিবহনের অন্যতম পথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পথ দিয়ে ৫০০ থেকে ৮ হাজার মাইল গতিবেগে যান চালাচল করতে পারবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। এটি পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্যজনক স্থাপনা। এটি সত্যি হলে নিউইর্য়ক থেকে লন্ডনে আসতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টারও কম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা অসম্ভব কিছুই নয়। যদিও এটা এখনও ধারণাগত পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করতে খরচ পড়বে ১২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। হ

No comments

Powered by Blogger.