কল্পকথার গল্প-রাজনীতি ও কয়েকটি ধার করা জোক by আলী হাবিব
রাজনীতি নিয়েই পড়া যাক। রাজনীতির মাঠ বেশ গরম। একদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নানা রাজনৈতিক খেলা চলছে। অন্যদিকে আজ আবার রোডমার্চ, রাজশাহী অভিমুখে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কে কার প্রার্থী, তা নিয়ে পাবলিকের মধ্যে একটু ধন্দ আছে। কিন্তু প্রচার চলছে জোর। ওদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে যে রোডমার্চ আজ শুরু হবে, তার পরিণতি কি সিলেটের মতো হবে? নানা মুনির নানা মত। কে একজন একটু রসিকতা করে
বলেছিলেন, 'রাজনীতির মধ্যে পলিটিঙ্ ঢুকে গেছে।' তো, রাজনীতি জিনিসটা কী? রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির দিকে একটু চোখ দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন দুই দিকে নিবদ্ধ। একদিকে নারায়ণগঞ্জ, অন্যদিকে রোডমার্চ। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী, বিএনপির প্রার্থী একজন। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জে। তাঁরা তাঁদের সমর্থন দিয়ে এসেছেন এক প্রার্থীকে। অন্য প্রার্থী বলেছেন, ওটা নিতান্তই ব্যক্তিগত। ওতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অন্যদিকে রোডমার্চের পর সিলেটের জনসভা নিয়ে জোর আলোচনা। সেখানকার এক নেতা অভিযোগ করেছেন, মঞ্চে বেগম জিয়ার পাশে বসার সুযোগ পেতে তিনি এক নেতাকে অনেক টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগ ঢাকায় খালেদা জিয়ার জনসভা নিয়েও আছে। তবে সেখানে টাকার লেনদেনের ব্যাপারে কোনো কথা শোনা যায়নি। এখন রাজশাহীতে কী হবে? সেখানেও কি টাকার খেলা হয়েছে বা হচ্ছে? যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কী বলবেন তিনি? এখানে রাজনীতিকদের একটি জোক নিয়ে আমরা 'জাবর কাটতে' পারি। কোথাও একটা বাস দুর্ঘটনার পর এলাকার মানুষ বাসের সব যাত্রীর দাফন সম্পন্ন করে ফেলল। ঘটনার পরদিন সেখানে গেল পুলিশ। পুলিশ গিয়ে জানতে চাইল, বাসের সব যাত্রীই মারা গিয়েছিল কি না। এলাকাবাসী পুলিশকে জানাল, দু-একজন বলেছিলেন, তাঁরা বেঁচে আছেন। কিন্তু বাসের সব যাত্রীই তো ছিলেন রাজনীতিবিদ। রাজনীতিবিদদের কথা বিশ্বাস করে কে? কিন্তু আমরা বিশ্বাস করতে চাই।
তো, যে কথা হচ্ছিল রাজনীতি নিয়ে। সেই রাজনীতি কী? অভিধান বলছে, রাজনীতি হচ্ছে রাজ্যশাসন ও পরিচালনার নীতি বা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র আছে। থাক। আমরা জানি, এই রাজনীতি যাঁরা করেন (অর্থাৎ রাজনীতি যাঁদের পেশা) তাঁরা দেশের জন্য ভাবেন। দেশের ভালো ও মন্দ বুঝে তাঁরা তাঁদের মত নিয়ে জনগণের কাছে যান। এর বিনিময়ে জনগণের কাছ থেকে তাঁদের একটাই দাবি_ভোট। পাঁচ বছর পর পর ভোট আসে আমাদের দেশে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালের কথা অবশ্য আলাদা। পৃথিবীর সব দেশেরই রাজনীতিকদের চরিত্র 'ফুলের মতো পবিত্র'। কারো কারো চরিত্র 'ফুলের চেয়েও পবিত্র' হলেও তাতে জনগণের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে রাজনীতিতে এক কথার একাধিক অর্থ করা যায়। কোনো কোনো সময় মৌনতা সম্মতির লক্ষণ হয়ে দেখা যায়। কখনো কখনো মৌনতার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না এবং এটা মানতে হবে, রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে 'কায়দা' জানতে হয়। কায়দা না জানলে রাজনীতি থেকে ফায়দা লাভের কোনো সুযোগ নেই। কায়দা জানলে নেতা হওয়া যায়। নেতারা কী করেন?
আজকাল দিন বদলে গেছে। রাজ্যশাসন ও পরিচালনার নীতি থেকে রাজনীতি এখন রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হয়েছে। কারণ রাজতন্ত্রের দিন গেছে। রাজা নেই, রাজ্য নেই_তার পরও রাজটিকা যে কারো কারো কপালে শোভা পায়, এটা অস্বীকার করা যাবে না। না থাক রাজবাড়ি, রাজদর্শনের সুযোগ অনেকেই পেতে চান। আমাদের দেশে রাজকবি কিংবা রাজজ্যোতিষী নেই। ক্ষমতা এখন জনগণের হাতে, যে হাত দিয়ে জনগণ ভোট দেয়। তাই কি! ভোটের বাইরে অন্য কিছু হাতে থাকলে সেটাও যে ক্ষমতার উৎস হতে পারে, তার উদাহরণও তো আছে। সেই অন্য কিছুর জোরে কত রাজন্য রাজধর্ম পালন করে গেলেন এবং এটাও দেখা যায়, অনেকের মাথায় এখনো রাজছত্র ভেঙে পড়ে। আজকাল বিপ্লবের পরিবর্তে অনেকে চান রাজত্ব দীর্ঘজীবী হোক। তো রাজা নেই, রানি নেই তাতে কী হয়েছে! রাজরাজড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক কিছুই আছে। রাজদ্রোহী না থাকলেও রাজসাক্ষীর প্রয়োজন পড়ে এখনো। রাজমুকুট নেই তো কী হয়েছে, রাজভোগ তো আর বাজার থেকে উঠে যায়নি। নতুন বেশে রাজপুরুষদের দেখা মিলছে আজকাল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজসূয়যজ্ঞের মতো আয়োজনও হয় আজকাল। দিতে হয় রাজস্ব। দেশে দেশে রাজধানী আছে। আছে রাজপথ। সেই রাজপথ দখলের লড়াই আছে। রাজসিক ব্যাপার-স্যাপারও আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু তার পরও মাথায় প্রশ্ন, রাজনীতি জিনিসটা কী_খায়, না মাথায় মাখে? একটা পুরনো জোক নতুন করে বলা যাক।
একটি ছেলে তার বাবার কাছে গিয়ে জানতে চাইল, রাজনীতি জিনিসটা কী? ছেলের বাবা বললেন, 'বিষয়টা বলতে হলে একটু বিস্তারিত বলতে হবে। এই যে আমি এই বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কিন্তু আমি যা আয় করি, তা তোমার মায়ের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আমাদের নেতা। আবার উপার্জন করি বলে আমি হচ্ছি ধনিক শ্রেণী। আমরা তোমাকে প্রতিপালন করছি, তুমি হচ্ছো জনগণ। তোমার ছোট ভাইটি হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ। আর আমাদের বাড়িতে যে মেয়েটি কাজ করে, সে হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী।' ছেলেটি রাতে ঘুমোতে গেল। একসময় ঘুম ভেঙে গেল তার। সে দেখতে পেল পাশে শুয়ে থাকা ছোট ভাইটির বিছানা ভেজা। সে গেল মায়ের ঘরে। অনেক ডাকাডাকির পরও মায়ের ঘুম ভাঙল না। সে গেল বাবাকে খুঁজতে। বাবা তখন কাজের মেয়েটিকে মাসের বেতন দিতে গিয়ে ঠকাচ্ছে। পরদিন সকালে ছেলেটি তার বাবাকে গিয়ে বলল, রাজনীতির অর্থ সে বুঝে গেছে। বাবা খুশি হয়ে বললেন, আমাকে বুঝিয়ে দাও। ছেলেটি বলল, যখন ভবিষ্যৎ ভেসে যায়, তখন সরকার ঘুমিয়ে থাকে, আর ধনিক শ্রেণী যখন শ্রমিক শ্রেণীকে ঠকায়, তখন তাকে রাজনীতি বলে।
কিন্তু আমরা ওভাবে রাজনীতিকে দেখতে চাই না। আমাদের রাজনীতি আন্দোলননির্ভর। আমরা আন্দোলনে বিশ্বাসী। সেই বিশ্বাস থেকেই বোধহয় বিএনপি রোডমার্চের ঘোষণা দিয়েছে। রোডমার্চ কোন পথে যাবে, সেটা স্থির করা আছে। বিরোধী দলের নেত্রী সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নতুন এক যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। সেই যুদ্ধে তিনি জনগণের সঙ্গে থাকবেন, এটাও বলেছেন। যুদ্ধটা কেমন হবে, সেটা এখনো আমরা বুঝতে অপারগ। কিন্তু ওই ছোট ছেলেটির মতো করে না বুঝলেও আমরা রাজনীতি বুঝি। আমাদের রাজনীতিতে নেতা লাগে। আমরা নেতা চিনি, নেত্রীও। নেতা কেমন? একটা জোক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা যাক। সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারত_এই তিন দেশের তিন ভদ্রলোক তাঁদের দেশের নেতাদের নিয়ে আলাপ করছিলেন। তাঁদের বলা হলো, তাঁদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বড় কোনো কিছুর তুলনা করতে, যাতে রাজনৈতিক নেতাদের বিশালত্ব প্রকাশ পায়। চীনের ভদ্রলোক বললেন, 'আমাদের দেশের নেতারা চীনের প্রাচীরের মতোই বিশাল। তাঁরা পুরনো কিন্তু চীনের প্রাচীরের ইটের মতোই শক্ত ও পোক্ত।' সিঙ্গাপুরের ভদ্রলোকের পালা এল। তিনি বললেন, 'আমার দেশের নেতারা আমাদের দেশের হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের মতোই বিশাল। আমাদের দেশটাকে তাঁরা উঁচুতে নিয়ে গেছেন।' এবার ভারতের নাগরিকের পালা। তিনি বললেন, 'আমার দেশের নেতারা হিমালয় পর্বতের মতো। দীর্ঘদিন কোনো কিছু না করে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছেন।'
এবার হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে একটি জোক। হিলারি ক্লিনটন এক দিন এক স্কুল পরিদর্শনে গেছেন। তিনি ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তাদের বললেন, তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারো। এক ছাত্র হাত তুলল। তিনি তাকে প্রশ্ন করতে বললেন। প্রতিটি ক্লাসেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো তাঁকে। বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
যাকগে, রাজনীতি করতে গেলে রাজনৈতিক দল লাগে। রাজনৈতিক দল চালাতে গেলে নেতা লাগে। এবার এক নেতার গল্প করা যাক। এই নেতার গাড়ি আছে, বাড়ি আছে। বাড়িতে কাজের লোক আছে। গাড়ির ড্রাইভার আছে। নেতা রোজ গাড়ি চড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাতে সেই গাড়িতে আবার ঘরে ফিরে আসেন। একদিন তাঁর গাড়ি চালানোর শখ হলো। তিনি ড্রাইভারকে বললেন গাড়ি থেকে নামতে। তিনি গাড়ি চালাবেন। ড্রাইভার কোনোভাবেই রাজি নন। ভদ্রলোকও নাছোড়বান্দা। এত বড় একটা দল চালান তিনি, এক দিন গাড়ি চালাতে পারবেন না? তিনি রীতিমতো ধমক দিয়ে বসলেন গাড়ির চালককে। চালক বিরক্ত। কিন্তু ভদ্রলোককে বোঝানো যাচ্ছে না। তিনি গোঁ ধরেছেন, গাড়ি চালাবেনই। চালককে আরেকবার ধমক দিয়ে সে কথা বলতেই চালক বললেন, 'স্যার এটা আপনার রাজনৈতিক দল নয় যে যেমন ইচ্ছে তেমন চালাবেন। এটা একটা গাড়ি। গাড়ি চালানোর কিছু নিয়ম আছে।'
লেখক : সাংবাদিক
habib.alihabib@yahoo.com
তো, যে কথা হচ্ছিল রাজনীতি নিয়ে। সেই রাজনীতি কী? অভিধান বলছে, রাজনীতি হচ্ছে রাজ্যশাসন ও পরিচালনার নীতি বা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র আছে। থাক। আমরা জানি, এই রাজনীতি যাঁরা করেন (অর্থাৎ রাজনীতি যাঁদের পেশা) তাঁরা দেশের জন্য ভাবেন। দেশের ভালো ও মন্দ বুঝে তাঁরা তাঁদের মত নিয়ে জনগণের কাছে যান। এর বিনিময়ে জনগণের কাছ থেকে তাঁদের একটাই দাবি_ভোট। পাঁচ বছর পর পর ভোট আসে আমাদের দেশে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালের কথা অবশ্য আলাদা। পৃথিবীর সব দেশেরই রাজনীতিকদের চরিত্র 'ফুলের মতো পবিত্র'। কারো কারো চরিত্র 'ফুলের চেয়েও পবিত্র' হলেও তাতে জনগণের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে রাজনীতিতে এক কথার একাধিক অর্থ করা যায়। কোনো কোনো সময় মৌনতা সম্মতির লক্ষণ হয়ে দেখা যায়। কখনো কখনো মৌনতার অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না এবং এটা মানতে হবে, রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে 'কায়দা' জানতে হয়। কায়দা না জানলে রাজনীতি থেকে ফায়দা লাভের কোনো সুযোগ নেই। কায়দা জানলে নেতা হওয়া যায়। নেতারা কী করেন?
আজকাল দিন বদলে গেছে। রাজ্যশাসন ও পরিচালনার নীতি থেকে রাজনীতি এখন রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হয়েছে। কারণ রাজতন্ত্রের দিন গেছে। রাজা নেই, রাজ্য নেই_তার পরও রাজটিকা যে কারো কারো কপালে শোভা পায়, এটা অস্বীকার করা যাবে না। না থাক রাজবাড়ি, রাজদর্শনের সুযোগ অনেকেই পেতে চান। আমাদের দেশে রাজকবি কিংবা রাজজ্যোতিষী নেই। ক্ষমতা এখন জনগণের হাতে, যে হাত দিয়ে জনগণ ভোট দেয়। তাই কি! ভোটের বাইরে অন্য কিছু হাতে থাকলে সেটাও যে ক্ষমতার উৎস হতে পারে, তার উদাহরণও তো আছে। সেই অন্য কিছুর জোরে কত রাজন্য রাজধর্ম পালন করে গেলেন এবং এটাও দেখা যায়, অনেকের মাথায় এখনো রাজছত্র ভেঙে পড়ে। আজকাল বিপ্লবের পরিবর্তে অনেকে চান রাজত্ব দীর্ঘজীবী হোক। তো রাজা নেই, রানি নেই তাতে কী হয়েছে! রাজরাজড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক কিছুই আছে। রাজদ্রোহী না থাকলেও রাজসাক্ষীর প্রয়োজন পড়ে এখনো। রাজমুকুট নেই তো কী হয়েছে, রাজভোগ তো আর বাজার থেকে উঠে যায়নি। নতুন বেশে রাজপুরুষদের দেখা মিলছে আজকাল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজসূয়যজ্ঞের মতো আয়োজনও হয় আজকাল। দিতে হয় রাজস্ব। দেশে দেশে রাজধানী আছে। আছে রাজপথ। সেই রাজপথ দখলের লড়াই আছে। রাজসিক ব্যাপার-স্যাপারও আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু তার পরও মাথায় প্রশ্ন, রাজনীতি জিনিসটা কী_খায়, না মাথায় মাখে? একটা পুরনো জোক নতুন করে বলা যাক।
একটি ছেলে তার বাবার কাছে গিয়ে জানতে চাইল, রাজনীতি জিনিসটা কী? ছেলের বাবা বললেন, 'বিষয়টা বলতে হলে একটু বিস্তারিত বলতে হবে। এই যে আমি এই বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কিন্তু আমি যা আয় করি, তা তোমার মায়ের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। সুতরাং তিনিই হচ্ছেন আমাদের নেতা। আবার উপার্জন করি বলে আমি হচ্ছি ধনিক শ্রেণী। আমরা তোমাকে প্রতিপালন করছি, তুমি হচ্ছো জনগণ। তোমার ছোট ভাইটি হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ। আর আমাদের বাড়িতে যে মেয়েটি কাজ করে, সে হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী।' ছেলেটি রাতে ঘুমোতে গেল। একসময় ঘুম ভেঙে গেল তার। সে দেখতে পেল পাশে শুয়ে থাকা ছোট ভাইটির বিছানা ভেজা। সে গেল মায়ের ঘরে। অনেক ডাকাডাকির পরও মায়ের ঘুম ভাঙল না। সে গেল বাবাকে খুঁজতে। বাবা তখন কাজের মেয়েটিকে মাসের বেতন দিতে গিয়ে ঠকাচ্ছে। পরদিন সকালে ছেলেটি তার বাবাকে গিয়ে বলল, রাজনীতির অর্থ সে বুঝে গেছে। বাবা খুশি হয়ে বললেন, আমাকে বুঝিয়ে দাও। ছেলেটি বলল, যখন ভবিষ্যৎ ভেসে যায়, তখন সরকার ঘুমিয়ে থাকে, আর ধনিক শ্রেণী যখন শ্রমিক শ্রেণীকে ঠকায়, তখন তাকে রাজনীতি বলে।
কিন্তু আমরা ওভাবে রাজনীতিকে দেখতে চাই না। আমাদের রাজনীতি আন্দোলননির্ভর। আমরা আন্দোলনে বিশ্বাসী। সেই বিশ্বাস থেকেই বোধহয় বিএনপি রোডমার্চের ঘোষণা দিয়েছে। রোডমার্চ কোন পথে যাবে, সেটা স্থির করা আছে। বিরোধী দলের নেত্রী সিলেটের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নতুন এক যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। সেই যুদ্ধে তিনি জনগণের সঙ্গে থাকবেন, এটাও বলেছেন। যুদ্ধটা কেমন হবে, সেটা এখনো আমরা বুঝতে অপারগ। কিন্তু ওই ছোট ছেলেটির মতো করে না বুঝলেও আমরা রাজনীতি বুঝি। আমাদের রাজনীতিতে নেতা লাগে। আমরা নেতা চিনি, নেত্রীও। নেতা কেমন? একটা জোক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা যাক। সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারত_এই তিন দেশের তিন ভদ্রলোক তাঁদের দেশের নেতাদের নিয়ে আলাপ করছিলেন। তাঁদের বলা হলো, তাঁদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বড় কোনো কিছুর তুলনা করতে, যাতে রাজনৈতিক নেতাদের বিশালত্ব প্রকাশ পায়। চীনের ভদ্রলোক বললেন, 'আমাদের দেশের নেতারা চীনের প্রাচীরের মতোই বিশাল। তাঁরা পুরনো কিন্তু চীনের প্রাচীরের ইটের মতোই শক্ত ও পোক্ত।' সিঙ্গাপুরের ভদ্রলোকের পালা এল। তিনি বললেন, 'আমার দেশের নেতারা আমাদের দেশের হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের মতোই বিশাল। আমাদের দেশটাকে তাঁরা উঁচুতে নিয়ে গেছেন।' এবার ভারতের নাগরিকের পালা। তিনি বললেন, 'আমার দেশের নেতারা হিমালয় পর্বতের মতো। দীর্ঘদিন কোনো কিছু না করে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছেন।'
এবার হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে একটি জোক। হিলারি ক্লিনটন এক দিন এক স্কুল পরিদর্শনে গেছেন। তিনি ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তাদের বললেন, তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারো। এক ছাত্র হাত তুলল। তিনি তাকে প্রশ্ন করতে বললেন। প্রতিটি ক্লাসেই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো তাঁকে। বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
যাকগে, রাজনীতি করতে গেলে রাজনৈতিক দল লাগে। রাজনৈতিক দল চালাতে গেলে নেতা লাগে। এবার এক নেতার গল্প করা যাক। এই নেতার গাড়ি আছে, বাড়ি আছে। বাড়িতে কাজের লোক আছে। গাড়ির ড্রাইভার আছে। নেতা রোজ গাড়ি চড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাতে সেই গাড়িতে আবার ঘরে ফিরে আসেন। একদিন তাঁর গাড়ি চালানোর শখ হলো। তিনি ড্রাইভারকে বললেন গাড়ি থেকে নামতে। তিনি গাড়ি চালাবেন। ড্রাইভার কোনোভাবেই রাজি নন। ভদ্রলোকও নাছোড়বান্দা। এত বড় একটা দল চালান তিনি, এক দিন গাড়ি চালাতে পারবেন না? তিনি রীতিমতো ধমক দিয়ে বসলেন গাড়ির চালককে। চালক বিরক্ত। কিন্তু ভদ্রলোককে বোঝানো যাচ্ছে না। তিনি গোঁ ধরেছেন, গাড়ি চালাবেনই। চালককে আরেকবার ধমক দিয়ে সে কথা বলতেই চালক বললেন, 'স্যার এটা আপনার রাজনৈতিক দল নয় যে যেমন ইচ্ছে তেমন চালাবেন। এটা একটা গাড়ি। গাড়ি চালানোর কিছু নিয়ম আছে।'
লেখক : সাংবাদিক
habib.alihabib@yahoo.com
No comments