স্মরণ-মানবতার মূর্ত প্রতীক ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীজি
ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন। প্রভু জগবন্ধু সুন্দরের আদি লীলাভূমি। প্রভু সুন্দরের আদরের দুলাল আধ্যা@ি@@@ক জগতের প্রাণপুরুষ ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী। তাঁর দিব্যজীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে এ পবিত্র প্রতিষ্ঠানে। তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন ১৯০৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। দিব্যলীলা সংবরণ করে তিনি ১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর মহাপ্রয়াণে গমন করেন। আজ ড. ব্রহ্মচারীজির সেই মহাপ্রয়াণ দিবস। ড. ব্রহ্মচারীজির পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলার খালিশাকোটা
গ্রামে। বাবা কালিদাস দাসগুপ্ত। মা কামিনী সুন্দরী দেবী। শৈশবকালে মা-বাবা তাঁকে আদর করে 'কান্ত' বলে ডাকতেন। পরে তাঁর নাম রাখা হয় 'বঙ্কিম চন্দ্র'। মহানামব্রত ব্রহ্মচারী তাঁর গুরুদেব মহেন্দ্রজির প্রদত্ত নাম। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩০ সালে দর্শন ও সংস্কৃত শাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। সংস্কৃত বিভাগে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৩৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে ভারতের বৃন্দাবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডিলিট উপাধি পান। ভারত সরকার তাঁকে মহামহোপাধ্যায় ও ভারত শিরোমনি উপাধিতে ভূষিত করে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি ও ব্রিটিশ বিরোধিতার ঢেউ বঙ্কিম চন্দ্রের কচি মনে রেখাপাত করে। তাঁর মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগ্রত হয়। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায় খদ্দরের পোশাক ব্যবহার করতে শুরু করেন। এভাবেই কিশোর বঙ্কিমের মনে যে সেবাধর্মের বীজ অঙ্কুরিত হয়, তা পরবর্তী সময়ে আধ্যা@ি@@@কতার জগতে মহীরুহ হিসেবে দেখা দেয়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ড. ব্রহ্মচারীজির বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল অকুণ্ঠ সমর্থন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অসুস্থতার কারণে সাময়িকভাবে তিনি কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। ফরিদপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রবেশের সময় প্রথম টার্গেট করে শ্রীঅঙ্গনকে। পাষণ্ড পাকিস্তানি সেনারা শ্রীঅঙ্গনে কীর্তনরত আট সন্ন্যাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী একাধারে দার্শনিক ও আধ্যা@ি@@@ক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, সর্বধর্ম সমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক। ড. ব্রহ্মচারীজি ধর্মকে নিছক আচার-অনুষ্ঠানের বেড়াজালে আবদ্ধ করতে চাননি। ধর্মচর্চা ছিল তাঁর কাছে মানবকল্যাণ সাধনের একটি পথ মাত্র। তাঁর মতে যিনি সৎ, নিষ্ঠাবান, ভদ্র, বিনয়ী এবং অসাম্প্রদায়িক মনের অধিকারী, তিনিই তো পরম ধার্মিক। তিনিই তো প্রকৃত মানুষ। মনুষ্যত্ব অর্জনই হলো ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য। মানুষের ধর্ম মানবধর্ম। সাধনা তাঁর মানবকল্যাণ। আর এই সাধনায় জাতি, ধর্ম, বর্ণে কোনো ভেদাভেদ নেই। বিশ্বসভায় ইসলাম সম্পর্কে ড. ব্রহ্মচারীজির কাছে জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ইসলামের মর্মবাণী 'বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ও বিশ্বমানবতার মূল সুর' 'ওঝখঅগ' কথাটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে। ও ঝযধষষ খড়াব অষষ গধহশরহফ_এটাই হলো ওঝখঅগ.
ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীজি শুধু পারলৌকিক ধর্মীয় চিন্তাতেই মগ্ন থাকতেন না, সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত ও আর্তমানবতার সেবা এবং সমাজের কল্যাণই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামি বা সংকীর্ণতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক।
সুবল চন্দ্র সাহা
ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীজি শুধু পারলৌকিক ধর্মীয় চিন্তাতেই মগ্ন থাকতেন না, সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত ও আর্তমানবতার সেবা এবং সমাজের কল্যাণই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামি বা সংকীর্ণতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক।
সুবল চন্দ্র সাহা
No comments