অপঘাতে মৃত্যু-দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা নিন

দেশে স্বাস্থ্য খাতের বেহাল অবস্থা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র কতটা করুণ, তারই একটি চিত্র ফুটে উঠেছে গত বুধবারের দৈনিক কালের কণ্ঠের এক রিপোর্টে। জানা গেছে, সরকারি তথ্যমতেই দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের অপঘাতে ২২ লাখেরও বেশি মানুষ আহত বা অসুস্থ হয়ে থাকে এবং তাদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ৭০ হাজার। যদিও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এ হিসাব থেকেই বোঝা যায়, দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা


সুদূরপরাহত। বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সভাপতি বলেছেন, দ্রুত ও উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণেই এত অধিকসংখ্যক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আহতদের দ্রুত ও যথোপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রেই জীবন রক্ষা করা সম্ভব। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের অনুরোধে এ খাতে জরুরি সহযোগিতা দিতে শুরু করেছে। এর আওতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
একটি সরকারকে দেশের সব ধরনের সেবা ও দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে হয়। তবে এর মধ্যে কোন দায়িত্বগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে, তা চিহ্নিত করার ওপর সরকারের দক্ষতা ও ব্যর্থতা অনেকটাই নির্ভর করে। বর্তমান সরকারের তিন বছর পার হতে চলল। মানুষের জীবন-মৃত্যুর মতো এতবড় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি এখনো 'শুরু হয়েছে' উল্লেখ করা হয়, তা গ্র্রহণযোগ্য নয়। সরকার বিষয়টিতে আরো আগে গুরুত্ব দিলে হয়তো মূল্যবান কিছু জীবন রক্ষা পেত। তবে শুধু অপঘাত পাওয়া রোগীর দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসাই নয়, বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, অপঘাত থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার মুখ্য দায়িত্বও সরকারের। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিবছর ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এ দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে আমরা দৈব-দুর্বিপাক বলে মেনে নিতে পারি না। সড়কব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো গেলে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, মানুষের মৃত্যুহারও অনেক কমে যেতে পারত। মোদ্দাকথা, চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করার চেয়ে চিকিৎসার যাতে প্রয়োজন না হয়, সে ব্যবস্থা করাটাই অধিক জরুরি। নিশ্চয়ই একটি আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। সে অধিকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.