সাংবাদিক নিপীড়ন-আইনপ্রণেতা কি আইনের ঊর্ধে?
মিরপুরের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার মঙ্গলবার যেভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়েছেন, তা আমাদের ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত করেছে। বিশ্বাস করা কঠিন, একজন জনপ্রতিনিধি পাড়ার মাস্তানের মতো নিন্দিত আচরণ করতে পারেন! ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালকের এই বিবৃতির সঙ্গে আমরা একমত যে, জনাব মজুমদার জাতীয় সংসদের অবমাননা এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার নৈতিক যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
যদিও তিনি পরদিন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেছেন, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত ওই অঘটনের ভিডিও ফুটেজ তাকে সমর্থন করে না। অভিভাবক ও স্থানীয় নাগরিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও স্পষ্টতই সাংসদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। নানা কারণে আলোচিত এই সাংসদ বলেছেন যে, সাংবাদিকরা 'মনঃক্ষুণ্ন' হলে তিনি 'ক্ষমাপ্রার্থী'। আবার তার নিয়ন্ত্রিত স্কুলের পক্ষ থেকে ঘটনার শিকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ জাগায়। তাকে এও স্মরণ করিয়ে দেওয়া জরুরি, এটা ব্যক্তিগত বিষয় নয় যে নামকাওয়াস্তে ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়েই মিটিয়ে ফেলা যাবে। বস্তুত এর সঙ্গে আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার ও সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। জড়িত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকারের প্রশ্ন। ক্ষমতাসীন দলের উচিত হবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা। ব্যক্তির দুষ্কর্মের জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে কেন? এই অঘটনে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রশাসনও শিক্ষায়তনসুলভ নৈতিকতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা জানি, উন্নয়ন ফির নামে অভিভাবকদের গলাকাটা সম্পর্কে প্রতিবেদন করতে সাংবাদিকরা সেখানে গিয়েছিলেন। সে ব্যাপারেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিদ্যায়তনের মতো পবিত্র প্রতিষ্ঠান সংসদ সদস্যের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হতে পারে না। আমরা আশা করি, এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি শুধু প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও যথাসময়ে জমা দেবে না; জনসমক্ষেও প্রকাশ করবে। এর আগে বিভিন্ন তদন্ত প্রক্রিয়ার দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির পুনরাবৃত্তি চাই না। প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে আইনপ্রণেতাও আইনের অধীন।
No comments