সংরক্ষিত বনের পাশে সাত ইটভাটা by আরিফুল হক

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে অবৈধভাবে সাতটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ইটভাটাগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স নেই। এর মধ্যে দুটি আবার সংরক্ষিত বন ও কলাখেতের পাশে। এ দুটি ভাটা গত বছর গড়ে তোলা হয়েছে। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহীদুল ইসলাম জনবসতির পাশে দুটি ইটভাটা করেছেন। এগুলোর কোনো অনুমতিপত্র নেই। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর
চৌধুরীর একটি ইটভাটা রয়েছে। ‘চৌধুরী ব্রিকস’ নামের ভাটাটি সানেরহাট ইউনিয়নের রায়পি সাদুল্লাপুর গ্রামে অবস্থিত। এটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও অনুমতিপত্র নেই বলে জাহাঙ্গীর চৌধুরী স্বীকার করেছেন।
মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা বনাঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত বিট কর্মকর্তা আনিসুল হক জানান, ভাটার মালিকদের মৌখিকভাবে নিষেধ করা হলেও তাঁরা শোনেননি। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তিনি আরও জানান, বনের পাশের ভাটাগুলোয় রাতে কাঠ পোড়ানো হয়।
ইটভাটা মালিক সমিতি, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জে ২০০৯ সালে ২৫টি ইটভাটা ছিল। ২০১০ সালে আরও ছয়টি ভাটা হয়। গত বছর সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০। এর মধ্যে ছয়টির অনুমতিপত্র আছে।
রংপুর বিভাগীয় বন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
মদনখালী ইউনিয়নের কাদিরাবাদ বনবিট ও পত্নীচড়া বনবিট বনাঞ্চলের কয়েক শ গজের মধ্যে যে সাতটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো হলো: মদনখালী ইউনিয়নে থিরারপাড়া গ্রামের ‘এএলএন’, একই গ্রামের ‘এমএএইচ’, ঠাকুরদাশ গ্রামের ‘জিএনএম’, চৈত্রকল ইউনিয়নে ‘এমএবি’ ও ‘এসআরবি’, টুকরিয়ার হরনাথপুরে ‘এমআরএ’ এবং কাদিরাবাদের ‘এমএনকে’। এর মধ্যে শেষের চারটি ইটভাটা গত বছর নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাদিরাবাদ বনাঞ্চলের ৫০০ গজ দক্ষিণে সাবেক সাংসদ নূর মোহাম্মদ মণ্ডলের ভাই মানিক মণ্ডলের এমএনকে নামের ইটভাটাটি অবস্থিত। একই বনের পশ্চিমে ৫০০-৭০০ গজের মধ্যে এমআরএ ও এমএবি নামের দুটি ইটভাটা রয়েছে। একই বনবিটের উত্তর-পূর্ব কোণে টুকুরিয়া ইউনিয়নের হরনাথপুরে এসআরবি ও আরএনবি নামে দুটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
জিএনএমের মালিক মোস্তাফিজার রহমান দাবি করেন, ইটভাটা থেকে বন অনেক দূরে। তবে কত দূরে, তা তিনি বলতে পারেননি। এএলএন ইটভাটার মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বনের জমির কোনো ক্ষতি তো করা হয়নি।’ একই এলাকার এমএএইচ ইটভাটার মালিক আবদুল আজিজ বলেন, ‘নিজের জায়গায় ইটভাটা করেছি, এতে তো কারও ক্ষতি হচ্ছে না।’
পীরগঞ্জ ইটভাটার মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মালিক হয়েও বলতে চাই, বনের পাশে এসব ইটভাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কয়েকবার ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি। প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে আমি হতাশ।’ তাঁর ভাটাটি রায়পুর ইউনিয়নের দাড়িকাপাড়া গ্রামে অবস্থিত।

No comments

Powered by Blogger.