খাদ্যকে ছাড়িয়ে গেছে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি

খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গত ডিসেম্বরের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর আগের মাস নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪০


শতাংশ। তা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্যবহির্ভূত সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নভেম্বরে এটি ছিল ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি পণ্যের দাম ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং সেবার দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সব সময়ই খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ গ্রহণও মূল্যস্ফীতি উসকে দিচ্ছে_ এমন মতামত আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা দিয়েছে।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্টম্ফীতি হচ্ছে আগের বছরের নির্দিষ্ট কোনো মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের তুলনায় পরের বছর একই মাসে ওই সূচক যতটুকু বাড়ে তার শতকরা হার। ডিসেম্বরের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা রয়েছে। এ ছাড়া দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। এর প্রভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল বিবিএস কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্টম্ফীতির তথ্য তুলে ধরেন বিবিএসের মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা। এ সময় কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক মিজানুর রহমান, উপ-সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী, পরিচালক আইনুল কবীর, যুগ্ম পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহীন, ড. দীপঙ্কর রায় প্রমুখ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্টম্ফীতি বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডিসেম্বরে বিদ্যুতের দাম ও আগের মাসে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্টম্ফীতির হার বেড়েছে। বিদ্যুতের খরচ, বাড়িভাড়া, বাসভাড়া, পরিধেয় বস্ত্রাদি, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি সমাগ্রী এবং চিকিৎসা খরচ বেড়েছে। ফলে বিবিএস জানিয়েছে, ডিসেম্বরে ডাল, শাকসবজি, ফল, মসলাজাতীয় দ্রব্যের দাম কমায় খাদ্যে মূল্যস্টম্ফীতি কিছুটা কমে গেছে। গ্রাম এলাকায় ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্টম্ফীতি আগের মাসের ১১ দশমিক ৩৭ থেকে কমে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্টম্ফীতির হার আগের মাসের ১১ দশমিক ৮০ থেকে কমে ডিসেম্বরে হয়েছে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে নভেম্বরের ১০ দশমিক ৪৬ থেকে বেড়ে ডিসেম্বরে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শহর এলাকায় ডিসেম্বরে মূল্যস্টম্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। তা নভেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। খাদ্যে মূল্যস্টম্ফীতি ১৪ দশমিক শূন্য ৪ থেকে কমে ১২ দশমিক ২৬ শতাংশে এসেছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৪৭ থেকে বেড়ে ডিসেম্বরে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.