জাগছে আশা তবে...
মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন: হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, খালিদ মাহমুদ মিঠু, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মাসুদ কায়নাত এবং মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের পথ ধরে এখন ছোটপর্দার অনেক নির্মাতাই চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে আসছেন। এরই মধ্যে কেউ কেউ ছবি নির্মাণ শুরুও করে দিয়েছেন। দু-একজন শেষও করে ফেলেছেন। হুমায়ূন আহমেদ, ফারুকী, মিঠু ও রাজেরা প্রশংসনীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, ছোটপর্দা থেকে এসে বড়পর্দায় সফল হয়েছেন। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করা গেছে, উপরোক্ত নির্মাতাদের প্রথম তিনজনই একটি বিশেষ শ্রেণীর দর্শকদের টার্গেট করে নির্মাণ করেছেন। সিনেপ্লেক্স এবং বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডকেন্দ্রিক ছিল তাদের ছবি। সেই তুলনায় গিয়াসউদ্দিন সেলিম ‘মনপুরা’ বানিয়ে সারাদেশের সিনেমাপ্রেমীকদের মনে ব্যাপকভাবে আলোড়ন তোলেন। ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এরই পথ ধরে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ চেষ্টা করেছেন তার পরিচালিত ‘প্রজাপতি’কে সারাদেশের সিনেমা দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তিনি পুরোপুরি সফল না হলেও তার ছবিটি বেশ ক’জন দর্শক দেখেছে। এখনও দেখছে এবং সেটা প্রশংসিত হচ্ছে। সমপ্রতি ছোটপর্দার বেশ সফল নির্মাতা ছবি নির্মাণে হাত দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনিমেষ আইচ, রেদোয়ান রনি, শাহিন কবির টুটুল, নোমান রবিন, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, স্বপন আহমেদের নাম উল্লেখযোগ্য। অনিমেষ আইচ ‘না মানুষ’, নোমান রবিন ‘কমন জেন্ডার’, রেদোয়ান রনি ‘চোরাবালী’, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি ‘টু বি কন্টিনিউড’, শাহিন কবির টুটুল ‘এইতো ভালাবাসা’ এবং স্বপন আহমেদ ‘লালটিপ’ নামে ছবি নির্মাণ করছেন। এ রকম আরও কয়েকজন নির্মাতাই চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বিষয় চলচ্চিত্রের জন্য। নতুন নতুন স্বপ্ন, চিন্তা-চেতনা নিয়ে তরুণরা আসছেন, ভাল সিনেমা নির্মাণের জন্য উদ্যোগী হচ্ছেন। এদের ছবি দেখার জন্য একশ্রেণীর দর্শক প্রস্তুতও থাকছেন। তবে চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের মতে কোন বিশেষ শ্রেণী কিংবা সিনেপ্লেক্সকে টার্গেট করে ছবি নির্মাণ করলেও চলচ্চিত্র শিল্পের কোন উপকার হবে না। বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স ছয় মাস হাউসফুল থাকলেও চলচ্চিত্র দর্শকদের জন্য সিনেমাটা নির্মাণ করা হবে না। কারণ বাংলাদেশের সিনেমার যারা মূল দর্শক তাদের ৯৫ ভাগ সিনেপ্লেক্সে যেতে পারেন না। কারণ একটি মাত্র সিনেপ্লেক্স, তা-ও রাজধানী ঢাকায়। আর এলাকার তিনটি ছোট ছোট প্রেক্ষাগৃহে দিনে গড়ে এক হাজার দর্শক সিনেমা উপভোগ করতে পারেন, যেখানে একমাত্র মধুমিতা সিনেমা হলে এক শো’তেই দেখতে পারেন ১২শ’ দর্শক। সারাদেশের কথা তো বাদই রইলো। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের কথা হচ্ছে সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের টার্গেট করে এসব নতুন নির্মাতাদের সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। সমপ্রতি ‘অন্ধ নিরঙ্গম’ নামে একটি ছবি কেবলমাত্র স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে ঢাকার অন্য কোন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে কেবলমাত্র স্টার সিনেপ্লেক্সে কতজন দর্শক এই ছবিটি দেখবেন? কেন ছবিটি অধিকসংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়নি? নতুন নির্মাতাদের এসব চিন্তা মাথায় রেখে সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। গিয়াসউদ্দিন সেলিম আর ‘মনপুরা’-কে সামনে রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। যদি এটা সম্ভব হয় তাহলে অনিমেষ আইচ, রেদোয়ান রনি ও স্বপন আহমেদরা চলচ্চিত্র শিল্পের চেহারা কিছুটা হলেও বদলে দিতে পারেন এমন আশা করাই যায়।
No comments