সেঞ্চুরিতেই উত্তর মুশফিকের
ক্লাব ক্রিকেট বোধহয় এমনই! মুহূর্তেই কাউকে খলনায়ক বানিয়ে দেয়, আবার মহানায়ক বানাতেও সময় লাগে না। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে নবাগত দল শেখ জামালের হয়ে খেলতে এসে যা হাতে হাতে প্রমাণ পেলেন মুশফিকুর রহিম। আগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে হেরে গিয়ে সমর্থক আর কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন অধিনায়ক মুশফিক। শেষ দিকে স্পিনার মাহমুদুল হাসান লিমনকে নির্বাচন করাটা নাকি মুশফিকের চরম ভুল ছিল। ক্লাবটির একটি মহলের ধারণা,
মুশফিকের দুর্বল অধিনায়কত্বের কারণেই সেদিন ম্যাচটি হেরে গেছে তারা। যার কারণে গতকাল ব্রার্দাসের বিপক্ষে ম্যাচটাতে মুশফিকুর রহিমের হাত থেকে নেতৃত্ব কেড়ে দেওয়া হয়েছিল সোহরাওয়ার্দী শুভকে। একে তো এই ঘটনার বারুদ জমে ছিল মনে, এর ওপর আবার দলের জন্য জয়টাও দরকার ছিল। সব মিলিয়ে এ দিন মিরপুরে ব্যাটিং বিস্ফোরণ করলেন মুশফিক। নিজে ১০৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ৭ উইকেটের জয় এনে দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর লিখে দিলেন। ড্রেসিংরুমে তো বটেই, ক্লাব কর্তাদের বুকেও অবশেষে ঠাঁই পেলেন মুশফিক। 'আসলে তেমন কিছু নয়। ভাগ্যটা ফেভার করছিল না। সে কারণেই এদিন অধিনায়কত্ব বদল করা হয়েছিল। তবে পরের ম্যাচ থেকে মুশফিকই দলকে নেতৃত্ব দেবেন।' ভাগ্য ফেরার পর শেখ জামালের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল সেঞ্চুরির পুরস্কার হিসেবেই যেন মুশফিককে তার অধিনায়কত্বটা ফিরিয়ে দিলেন।
যদিও অধিনায়কত্ব নেওয়া এবং পাওয়া নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না মুশফিক। 'তেমন কিছু তো হয়নি। একটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মধ্যেই অধিনায়কত্বটা বদল হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।' ২০৮ রানের পিছু নিয়ে ১৬ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ইনিংসের হাল ধরে শুধু এবারের প্রিমিয়ার লীগে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিই করেননি, কখনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান দীপক জোনের সঙ্গে ১৩২ রানের জুটি, কখনও লংকান ব্যাটসম্যান জেহান মুবারকের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়ে দলকে এবারের লীগে দ্বিতীয় জয় এনে দিয়েছেন মুশফিক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই টি২০ ম্যাচের মতোই গতকালও জয়সূচক রান করেছিলেন বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে। এমন একটা তৃপ্তির ইনিংস খেলার পর দলের কোচ পরের ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার ইঙ্গিত দিলেও মুশফিক তা সরাসরি গ্রহণ করেননি। 'এখনও ঠিক করিনি পরের ম্যাচে কী করব। হয়তো অধিনায়কত্ব করব, আবার নাও করতে পারি।' মুশফিকের কথাতেই পরিষ্কার একটা চাপা ক্ষোভ ছিল তার নিজের ওপরই। অথচ আগের ম্যাচের চেয়ে গতকাল ব্রার্দাসের বিপক্ষেই বড় একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল শেখ জামালকে। দিনের শুরুতে নাজিমউদ্দিনের ৪৯, আর আফতাবের ২৬ রানে ভর দিয়ে মাত্র ১৭ ওভারেই ২ উইকেটে ৮৩ রান তুলে নিয়েছিলেন ব্রাদার্সের খেলোয়াড়রা; কিন্তু জামালের স্পিনার সুজিত, আরাফাত সানি আর সোহরাওয়ার্দী শুভর হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ানোয় মাত্র ২০৭ রানেই শেষ হয়ে যায় ব্রার্দাসের ইনিংস। এরপর সেই রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানি পেসার সোহেল তানভিরের জোড়া আঘাতে ১৭ রানেই দুই ওপেনার শামসুর রহমান আর মেহরাব জুনিয়রকে হারিয়ে বসে জামাল। এরপরও ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছিল ব্রার্দাসের সামনে। কিন্তু বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হয় তাকে। ৩৯ রানে থাকা মুশফিকের সহজ ক্যাচ স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার নাজিমউদ্দিন ফেলে দেন। একই ওভারে ৩৭ রানে থাকা ভারতীয় ব্যাটসম্যান দীপকের ক্যাচ স্লিপ থেকে ফেলে দেন ব্রার্দাসের পাকিস্তানি ক্রিকেটার আকিল আহমেদ। ব্যস, এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেননি মুশফিক। ১২৪ বলে ১০ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক।
No comments