তাদের ‘মানসম্মান’ আছে, লাজ-শরম নেই by সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
ভালো বিষয় নিয়ে লিখতে ভালো লাগে আর খারাপ কিছু নিয়ে লিখতে গেলেও নোংরা মনে হয়। তাই ভেবেছিলাম, ‘মাননীয়’ সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের বিষয় নিয়ে লিখবো না। ইতোমধ্যে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তার চেহারা-চিত্র তুলে ধরে ক’দিন ধরেই লেখালেখি হচ্ছে। বাংলানিউজেও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফজলুল বারী লিখেছেন ‘মণিপুর টু জগন্নাথে শিক্ষার নামে গুণ্ডামি!’
আর অজয় দাশগুপ্ত লিখেছেন ‘কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই’। আরটিভির সাংবাদিক অপর্ণার ওপর কামালের নির্যাতন, ক্যামেরা ভেঙে ফেলার আক্রোশ ও উত্তেজনার ভিডিও আমরা বিদেশে বসে দেখলাম। আর দিবালোকের মতো সত্য জ্বলজ্যান্ত ঘটনা তিনি চমৎকারভাবে অস্বীকার করলেন। সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন ক্ষুব্ধ সাংবাদিককরা। মানববন্ধন থেকে কামাল মজুমদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। পরে তিনি ‘সরি’ বলেছেন। ভাবলাম, অবশেষে বোধোদয় হলো। কিন্তু না। পরদিনই তিনি-একটি দৈনিকের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ/মান হানির মামলা দায়ের করলেন। বাড়তি ভর্তি ফি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথেও রীতিমতো বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হলেন। তার পক্ষে রাস্তায় দাঁড় করালেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ কামাল মজুমদার একজন সম্মানীত ব্যক্তি। তাই তার মান যায়। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর। তাই মন্ত্রী-ফন্ত্রী তার কাছে কিছুই না। আর ভর্তিবাণিজ্যের স্বার্থে তার ‘নিজস্ব’ স্কুলের ছোটছোট বাচ্চাগুলোকে শীতে রাস্তার দাঁড় করিয়ে প্রমাণ করলেন- তিনি একজন ভালো মানুষ। তাই তার বিরুদ্ধে `অপপ্রচার` বন্ধের দাবিতে বাধ্যতামূলক মানববন্ধন করালেন! কারণ- সাংবাদিক, অভিভাবক, মন্ত্রীরা তার ‘ইজ্জত’ নষ্ট করছে।
আমি ঢাকা-১৫ আসনের বাসিন্দা। সেই সূত্রে কামাল মজুমদার আমাদের সাংসদ। মিরপুরের মনিপুর স্কুলটি আমাদের এলাকায়। এবারে সর্বসেরা স্কুলটিতে আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে পড়ে। এই স্কুলের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন (লালন ফরহাদ) আমাদের ভার্সিটি জীবনের বন্ধু। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার প্রিয় মানুষ। আমার বিটিভির অনুষ্ঠানে ২/১ একবার অংশ নিয়েছেন। আর শিক্ষাসচিব কামাল চৌধুরীও কবি-বন্ধু। সব মিলিয়ে আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে না লিখে পারলাম না।
লিখে তো কোনো লাভ নেই। যাদের নিয়ে লিখি, তাদের ‘মানসম্মান’ আছে। মানহানি হয়। কিন্তু লাজ-শরম নেই। তাই মানহানির মামলা করেন, সাংবাদিকদের সাথে মাস্তানি করেন, মন্ত্রীকে ধমক দেন, স্বেচ্ছাচারিভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক বন্ধুবর সৈয়দ জামান মিরপুরে-১১ তে একটি সরকারি প্লট পান। কিন্তু তা আংশিক দখল করে রেখেছে স্থানীয় লোক। যা ৬/৭ বছরেও উদ্ধার করতে পারেননি সৈয়দ জামান। আমরা তখন গিয়েছিলাম কামাল মজুমদারের কার্যালয়ে। তিনি সেদিন ‘টাকা’ দিয়ে জমি উদ্ধারের জটিলতার সমাধান দিতে ছেয়েছিলেন। কিন্তু জামান ভাই রাজি হননি। ফলে সেই জমির জটিলতা আজো মেটেনি! এই হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের দায়দায়িত্ব!
এসব জনপ্রতিনিধিরা বা নেতা-কর্মীরা সরকার তথা দলের জন্য ক্ষতিকর, তা কি আওয়ামী লীগ বোঝে না? এই যে বুয়েটের এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী সুজিত সাহা ও সাইফুল্লাহ শিকদারকে সারা জীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো। অপর দিকে সাতক্ষীরায় কলেজপড়ুয়া এক নৃত্যশিল্পীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা পলাশের কীর্তি প্রকাশ হলো। এই সুজিত-সাইফুল্লাহ, জুয়েল-নাজমুলেরাই একদিন বড়ো হয়ে কামাল আহমেদ মজুমদার হবে।
saifullahdulal@gmail.com
মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ কামাল মজুমদার একজন সম্মানীত ব্যক্তি। তাই তার মান যায়। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর। তাই মন্ত্রী-ফন্ত্রী তার কাছে কিছুই না। আর ভর্তিবাণিজ্যের স্বার্থে তার ‘নিজস্ব’ স্কুলের ছোটছোট বাচ্চাগুলোকে শীতে রাস্তার দাঁড় করিয়ে প্রমাণ করলেন- তিনি একজন ভালো মানুষ। তাই তার বিরুদ্ধে `অপপ্রচার` বন্ধের দাবিতে বাধ্যতামূলক মানববন্ধন করালেন! কারণ- সাংবাদিক, অভিভাবক, মন্ত্রীরা তার ‘ইজ্জত’ নষ্ট করছে।
আমি ঢাকা-১৫ আসনের বাসিন্দা। সেই সূত্রে কামাল মজুমদার আমাদের সাংসদ। মিরপুরের মনিপুর স্কুলটি আমাদের এলাকায়। এবারে সর্বসেরা স্কুলটিতে আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে পড়ে। এই স্কুলের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন (লালন ফরহাদ) আমাদের ভার্সিটি জীবনের বন্ধু। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার প্রিয় মানুষ। আমার বিটিভির অনুষ্ঠানে ২/১ একবার অংশ নিয়েছেন। আর শিক্ষাসচিব কামাল চৌধুরীও কবি-বন্ধু। সব মিলিয়ে আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে না লিখে পারলাম না।
লিখে তো কোনো লাভ নেই। যাদের নিয়ে লিখি, তাদের ‘মানসম্মান’ আছে। মানহানি হয়। কিন্তু লাজ-শরম নেই। তাই মানহানির মামলা করেন, সাংবাদিকদের সাথে মাস্তানি করেন, মন্ত্রীকে ধমক দেন, স্বেচ্ছাচারিভাবে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক বন্ধুবর সৈয়দ জামান মিরপুরে-১১ তে একটি সরকারি প্লট পান। কিন্তু তা আংশিক দখল করে রেখেছে স্থানীয় লোক। যা ৬/৭ বছরেও উদ্ধার করতে পারেননি সৈয়দ জামান। আমরা তখন গিয়েছিলাম কামাল মজুমদারের কার্যালয়ে। তিনি সেদিন ‘টাকা’ দিয়ে জমি উদ্ধারের জটিলতার সমাধান দিতে ছেয়েছিলেন। কিন্তু জামান ভাই রাজি হননি। ফলে সেই জমির জটিলতা আজো মেটেনি! এই হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের দায়দায়িত্ব!
এসব জনপ্রতিনিধিরা বা নেতা-কর্মীরা সরকার তথা দলের জন্য ক্ষতিকর, তা কি আওয়ামী লীগ বোঝে না? এই যে বুয়েটের এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী সুজিত সাহা ও সাইফুল্লাহ শিকদারকে সারা জীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলো। অপর দিকে সাতক্ষীরায় কলেজপড়ুয়া এক নৃত্যশিল্পীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা পলাশের কীর্তি প্রকাশ হলো। এই সুজিত-সাইফুল্লাহ, জুয়েল-নাজমুলেরাই একদিন বড়ো হয়ে কামাল আহমেদ মজুমদার হবে।
saifullahdulal@gmail.com
No comments