সফলতা-ব্যর্থতা by শাহেদ চৌধুরী
তিন বছরে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা চলছে পাশাপাশি। এই সময়ে চোখে পড়ার মতো বড় সাফল্য বিদ্যুৎ সংকট অনেকটা কেটেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাচ্ছে পাঠ্যবই। কৃষিপণ্য উৎপাদনেও এসেছে বড় ধরনের সাফল্য। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও সাফল্যের নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি হচ্ছে আজ
শুক্রবার। এ সময়ে সরকারের সাফল্যের পাশাপাশি উল্টো চিত্রও আছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। বিরোধী দলকে আস্থায় আনতে পারেনি সরকার। ফলে সংসদ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। সরকারি দলের কিছু নেতাকর্মীর টেন্ডার ও চাঁদাবাজির ঘটনা ছিল লক্ষণীয়।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, প্রিয় স্বদেশের বর্তমান পরিবেশ প্রগতির অনুকূলে। অন্ধকারের অপশক্তি ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। এর বিপক্ষেও মত আছে।
সাফল্য :বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ায় সংকট কাটতে শুরু করেছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি এবং বাণিজ্যিকভাবে ছোট ও মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বেশ উত্তরণ ঘটেছে। যদিও বেসরকারি এ বিদ্যুতের জন্য সরকারের ভর্তুকির মাসুল গুনতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু
হবে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে এক কাতারে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই পেঁৗছে দিয়ে সরকার সাধুবাদ কুড়িয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা প্রশংসিত হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক করার প্রস্তুতি চলছে। প্রণীত হয়েছে শিক্ষানীতি। গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বর্ণাঢ্য আয়োজন প্রশংসিত হয়েছে।
কৃষি খাতে অব্যাহত সহযোগিতার পাশাপাশি নানা প্রণোদনা, ভর্তুকি, কৃষকদের কৃষিঋণের আওতায় আনা, সার ও ডিজেলের দাম কমানো, কৃষক পরিবারকে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া এবং বিনামূল্যে সেচ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী। মঙ্গা মোকাবেলায় সরকারের বিশেষ কর্মসূচির কাজে এসেছে। দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে কমে এসেছে ৩০ ভাগ।
নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতি ৩৪ বছরের কলঙ্কের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার শুরুতেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিস্থিতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছেন শেখ হাসিনা। এখন ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে। সরকারি চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হয়েছে।
নির্বাচনী ইশতেহারে জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমনের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশ সফলতা এসেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় রাজনীতিকে সঠিক পথে আনার এক অনবদ্য কাজ হয়েছে গত তিন বছরে।
জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগে জনমনে স্বস্তি এসেছে। রংপুরকে নতুন বিভাগ করার ঘোষণায় উৎফুল্ল হয়েছে বৃহত্তর রংপুরবাসী।
এ সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন কাটতে শুরু করেছে। প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পে-স্কেল ঘোষণাও প্রশংসনীয়।
প্রথম অধিবেশনেই প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংসদীয় রাজনীতিতে ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে। শীর্ষ ১০ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়ার ঘটনাও সরকারের সাফল্যের পালক বাড়িয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন, সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিকদের জন্য একবেলার পরিবর্তে দু'বেলা মাছ-মাংস অথবা ডিম সরবরাহ ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছরে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্তও সাফল্যের পালক। ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে উপজেলা এবং দ্বিতীয়-তৃতীয় বছরে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কারচুপির উল্লেখযোগ্য অভিযোগ ওঠেনি।
ব্যর্থতা
তিন বছরের কিছু অপ্রিয় ঘটনা সরকারের জন্য বড্ড অস্বস্তিকর হয়ে আছে। বিপথগামী নেতাকর্মীর অপকীর্তির কারণে গোটা আওয়ামী লীগ পরিবারের মুখে চুনকালি লেগেছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু কর্মী দখল, ভর্তি ও টেন্ডার-বাণিজ্যের ঘটনা সরকারের বড় অর্জনগুলোকে ম্লান করেছে।
কয়েকজন সাংসদের দখল-বাণিজ্যসহ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল বড্ড বেমানান। বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রীও।
সরকার আমলানির্ভর হয়ে উঠছে। 'ভোট ও ভাতের অধিকার, দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার' শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার 'দিনবদলের সনদ' অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। সম্পদের হিসাব প্রতি বছর জনসমক্ষে প্রকাশ করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, এমপি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাবসহ আয়ের উৎস প্রকাশ করা হয়নি।
এ সময়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের দূরত্ব বেড়েছে। শরিকদের সঙ্গেও দূরত্ব রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিরোধী দলকে আস্থায় আনা সম্ভব হয়নি। সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সংসদ কার্যকরের বেলায় সরকারি দলের মনোভাবও তেমন একটা ইতিবাচক নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক সংস্কৃৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে ওঠেনি।
সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য কমিয়ে অবাক করা বড় ধরনের সফলতা দেখালেও পর্যায়ক্রমে সেটা মিলিয়ে গেছে। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও আশাপ্রদ উন্নতি হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ার হয়েছে। গুম হত্যার ঘটনা ঘটছে।
কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বেড়েছে। চাঁদাবাজি চলছে। ঢালাওভাবে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির বিতর্ক, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থতা সরকারকে কিছুটা কাবু করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
শেয়ারবাজারে ধস ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ভাব চলছে। বিনিয়োগ কমে গেছে। সরকারের ঋণের ভারে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট হচ্ছে। মেট্রোরেল প্রকল্প আটকে আছে। স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনে চলছে দলীয়করণ। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণা কার্যকর হয়নি।
গত মার্চে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অব্যাহতির ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত। বেহাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সরকারকে বিধ্বস্ত করেছে। সব মিলিয়ে বিপুল সম্ভাবনা, জনসমর্থন এবং প্রত্যাশা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার অনেক প্রত্যাশা পরিপূর্ণ করতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, প্রিয় স্বদেশের বর্তমান পরিবেশ প্রগতির অনুকূলে। অন্ধকারের অপশক্তি ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। এর বিপক্ষেও মত আছে।
সাফল্য :বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ায় সংকট কাটতে শুরু করেছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি এবং বাণিজ্যিকভাবে ছোট ও মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বেশ উত্তরণ ঘটেছে। যদিও বেসরকারি এ বিদ্যুতের জন্য সরকারের ভর্তুকির মাসুল গুনতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু
হবে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে এক কাতারে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই পেঁৗছে দিয়ে সরকার সাধুবাদ কুড়িয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা প্রশংসিত হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক করার প্রস্তুতি চলছে। প্রণীত হয়েছে শিক্ষানীতি। গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বর্ণাঢ্য আয়োজন প্রশংসিত হয়েছে।
কৃষি খাতে অব্যাহত সহযোগিতার পাশাপাশি নানা প্রণোদনা, ভর্তুকি, কৃষকদের কৃষিঋণের আওতায় আনা, সার ও ডিজেলের দাম কমানো, কৃষক পরিবারকে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া এবং বিনামূল্যে সেচ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী। মঙ্গা মোকাবেলায় সরকারের বিশেষ কর্মসূচির কাজে এসেছে। দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে কমে এসেছে ৩০ ভাগ।
নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতি ৩৪ বছরের কলঙ্কের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার শুরুতেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিস্থিতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছেন শেখ হাসিনা। এখন ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে। সরকারি চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হয়েছে।
নির্বাচনী ইশতেহারে জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমনের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশ সফলতা এসেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় রাজনীতিকে সঠিক পথে আনার এক অনবদ্য কাজ হয়েছে গত তিন বছরে।
জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করার উদ্যোগে জনমনে স্বস্তি এসেছে। রংপুরকে নতুন বিভাগ করার ঘোষণায় উৎফুল্ল হয়েছে বৃহত্তর রংপুরবাসী।
এ সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন কাটতে শুরু করেছে। প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পে-স্কেল ঘোষণাও প্রশংসনীয়।
প্রথম অধিবেশনেই প্রতিটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংসদীয় রাজনীতিতে ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে। শীর্ষ ১০ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়ার ঘটনাও সরকারের সাফল্যের পালক বাড়িয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন, সশস্ত্র বাহিনীর সৈনিকদের জন্য একবেলার পরিবর্তে দু'বেলা মাছ-মাংস অথবা ডিম সরবরাহ ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছরে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্তও সাফল্যের পালক। ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে উপজেলা এবং দ্বিতীয়-তৃতীয় বছরে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কারচুপির উল্লেখযোগ্য অভিযোগ ওঠেনি।
ব্যর্থতা
তিন বছরের কিছু অপ্রিয় ঘটনা সরকারের জন্য বড্ড অস্বস্তিকর হয়ে আছে। বিপথগামী নেতাকর্মীর অপকীর্তির কারণে গোটা আওয়ামী লীগ পরিবারের মুখে চুনকালি লেগেছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু কর্মী দখল, ভর্তি ও টেন্ডার-বাণিজ্যের ঘটনা সরকারের বড় অর্জনগুলোকে ম্লান করেছে।
কয়েকজন সাংসদের দখল-বাণিজ্যসহ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল বড্ড বেমানান। বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রীও।
সরকার আমলানির্ভর হয়ে উঠছে। 'ভোট ও ভাতের অধিকার, দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার' শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহার 'দিনবদলের সনদ' অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। সম্পদের হিসাব প্রতি বছর জনসমক্ষে প্রকাশ করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, এমপি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাবসহ আয়ের উৎস প্রকাশ করা হয়নি।
এ সময়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের দূরত্ব বেড়েছে। শরিকদের সঙ্গেও দূরত্ব রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিরোধী দলকে আস্থায় আনা সম্ভব হয়নি। সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সংসদ কার্যকরের বেলায় সরকারি দলের মনোভাবও তেমন একটা ইতিবাচক নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক সংস্কৃৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে ওঠেনি।
সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য কমিয়ে অবাক করা বড় ধরনের সফলতা দেখালেও পর্যায়ক্রমে সেটা মিলিয়ে গেছে। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও আশাপ্রদ উন্নতি হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ক্রসফায়ার হয়েছে। গুম হত্যার ঘটনা ঘটছে।
কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বেড়েছে। চাঁদাবাজি চলছে। ঢালাওভাবে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির বিতর্ক, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থতা সরকারকে কিছুটা কাবু করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
শেয়ারবাজারে ধস ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ভাব চলছে। বিনিয়োগ কমে গেছে। সরকারের ঋণের ভারে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট হচ্ছে। মেট্রোরেল প্রকল্প আটকে আছে। স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনে চলছে দলীয়করণ। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণা কার্যকর হয়নি।
গত মার্চে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অব্যাহতির ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত। বেহাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সরকারকে বিধ্বস্ত করেছে। সব মিলিয়ে বিপুল সম্ভাবনা, জনসমর্থন এবং প্রত্যাশা নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার অনেক প্রত্যাশা পরিপূর্ণ করতে পারেনি।
No comments