নবায়নযোগ্য শক্তি মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে হবে

বায়নযোগ্য শক্তিকে (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি) দাম ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য শক্তিই যেন মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারে, সে লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নবিষয়ক দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের (আইসিডিআরইটি-২০১২) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। বেসরকারি


বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ধানমন্ডির ইউআইইউ ভবনে আয়োজিত এ সম্মেলনের সহযোগী আয়োজক হিসেবে আছে একাধিক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান সাহায্য সংস্থা জিআইজেড ও দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল), গ্রামীণফোন, চ্যানেল আইসহ প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান।
আইইউআইয়ের উপাচার্য ও সম্মেলনের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান রিজওয়ান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি সাধারণ মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে গবেষণা চালাতে হবে। এই শক্তি উৎপাদনে অর্থ ও বিপুল পরিমাণ জমির প্রয়োজনীয়তার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক ৫০০ মেগাওয়াট সৌর ও ২০০ মেগাওয়াট বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে গৃহস্থালি পর্যায়ে স্থাপিত ১০ লাখেরও বেশি সৌরবিদ্যুতের প্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৩০ মেগাওয়াট পিক বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২০০ বাড়িতে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলনের সাংগঠনিক কমিটির সহ-চেয়ারম্যান শাহরিয়ার এ চৌধুরী। বক্তব্য দেন অধ্যাপক সাইফুর রহমান, জিআইজেডের সমন্বয়কারী এরিক অটোগম, জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের প্রকল্প পরিচালক ক্রিস্টোফার ক্লেইন এবং অধ্যাপক সদরুল ইসলাম। শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ফাইয়াজ খান।
আইইউআইয়ের সেন্টার ফর এনার্জি রিচার্সের পরিচালক শাহরিয়ার এ চৌধুরী বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তিকে অপ্রচলিত উৎস বলার দিন শেষ হয়ে গেছে। ২০১০ সালে পৃথিবীতে প্রাথমিক জ্বালানির চাহিদা ছিল ১২ কোটি (১২ হাজার মিলিয়ন) মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের সমান। এই চাহিদার ১৬ শতাংশ পূরণ করেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে পৃথিবীতে প্রাথমিক জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে প্রতিবছর ২ দশমিক ২ শতাংশ হারে। অথচ পাঁচ বছর ধরে পৃথিবীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে (বড় বড় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদে) ২২ শতাংশ হারে। ২০০৮ সালে ইউরোপে নতুন যত বিদ্যুৎ উৎপাদনে এসেছে তার মধ্যে প্রচলিত জ্বালানির তুলনায় নবায়নযোগ্য ছিল বেশি। ২০০৯ সালে আমেরিকায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে প্রচলিত জ্বালানিভিত্তিক (তেল, গ্যাস, কয়লা প্রভৃতি) বিদ্যুতের তুলনায় নবায়নযোগ্য শক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে এসেছে বেশি। ২০৭০ সাল নাগাদ পৃথিবীর প্রয়োজনীয় মোট শক্তির ৬০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর গতকাল সন্ধ্যায় সম্মেলনের দুটি প্লেনারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর একটিতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশরাফুল আলম। অন্যটিতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
আগামীকাল শনিবার সম্মেলন শেষ হবে। তিন দিনের এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশের বিশেষজ্ঞদের ৯২টি প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সেগুলোর ওপর আলোচনা হবে বলে আয়োজকেরা জনিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.