চবিতে কোরবানি হয়নি ফায়দা নিয়েছে শিবির by ফরহান অভি,

দুল আজহা উপলক্ষে তিন দিন ধরে পোলাও-মাংসসহ বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা ছিল এতিমখানাগুলোতে পর্যন্ত। কিন্তু বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তো দূরে থাক এক টুকরো মাংসের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য।পরীক্ষার কারণে চবির আবাসিক হল ও বেসরকারি ছাত্রাবাসের (কটেজ) প্রায় সহস্র শিক্ষার্থীকে এবার কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।


দু'দশকের নিয়মের বাইরে গিয়ে এ বছর আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য কোরবানির মাংসের ব্যবস্থা করেনি চবি কর্তৃপক্ষ। এদিকে কর্তৃপক্ষের এ উদাসীনতাকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হলের জন্য তারা বরাদ্দ করে তিন লাখ টাকা মূল্যের ছয়টি গরু। বেশ ধুমধাম করে এ আয়োজনের সঙ্গে তারা ক্যাম্পাসজুড়ে চালিয়ে যায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গরু ও ছাগল জবাই করে কোরবানির ব্যবস্থা করলেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। কোরবানির দিন টোকেনের বিনিময়ে ছোট্ট এক টুকরো মুরগির মাংস ও সবজি দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাতের খাবারের আয়োজন করে হল কর্তৃপক্ষ। আবার তাও জোটেনি অনেক শিক্ষার্থীর ভাগ্যে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাবারের টোকেন সংগ্রহ করতে না পারায় তাদের থাকতে হয়েছে না খেয়ে। পেট ভরে খেতে পারেনি বেসরকারি ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরাও। ঈদ উপলক্ষে বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসের ব্যক্তিমালিকানাধীন সব দোকান, হোটেল ও ক্যান্টিন। আবার হল ডাইনিংয়েও খাবারের ব্যবস্থা ছিল না তাদের। তাই ঈদের দিন তাদের একপ্রকার উপোস থেকেই কাটাতে হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি কটেজে থাকা শিক্ষার্থী রবিউল ক্ষোভ প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, 'আমরা কটেজের শিক্ষার্থীরা কোথায় খাব এ মানবিক দিকটুকু বিবেচনা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন আচরণ আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে আশা করিনি।'
অন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, 'ঈদে বাড়ি যেতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পসংখ্যক আবাসিক শিক্ষার্থীর জন্য প্রশাসন এক বেলা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারায় এর রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছে মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির, যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক।'
তারা জানান, '১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী চবি একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষার্থীকে হলে সিট দিতে বাধ্য। সীমাবদ্ধতা থাকায় তারা সিট দিতে পারেনি। তাই বলে কি খাবারও বন্ধ করে দেবে? আমরা যারা কটেজে থাকি তারা অনাবাসিক শিক্ষার্থী, কিন্তু অবৈধ তো নই।'
এদিকে বরাদ্দ না থাকায় চবি কর্তৃপক্ষের একটি ছাগল পর্যন্ত কেনার সামর্থ্য নেই বলে উল্লেখ করেন প্রভোস্ট কমিটির আহ্বায়ক ড. মোঃ কলিম উদ্দিন ভূইঞা। তিনি সমকালকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কোরবানি দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কর্তৃপক্ষ।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক হল প্রভোস্ট বলেন, 'প্রতিষ্ঠান কখনও কোরবানি করে না। কোরবানি করে ব্যক্তি। তা ছাড়া প্রতিটি হলেই ঈদে অবস্থান করে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের আপ্যায়নের জন্য একটি ছাগলের প্রয়োজন হয় না।'
গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্ব-স্ব হল কর্তৃপক্ষ অন্তত একটি করে ছাগল কোরবানি দিত। এবারই শুধু এর ব্যতিক্রম হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, 'কারাগারের কয়েদিদের চেয়েও প্রশাসনের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মূল্য কম। তাই আমাদের জন্য প্রশাসন ছোট্ট এক টুকরো মুরগি ও সবজি দিয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন করেছে। যে বিশেষ খাবার আমরা প্রতিদিনই খেয়ে থাকি।'
এদিকে চবি কর্তৃপক্ষ কোরবানি না করলেও ঈদের পরদিন শিবির ক্যাম্পাসে তিন লাখ টাকা মূল্যের ছয়টি গরু কোরবানি দেয়। চবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ আয়োজন করে। ক্যাম্পাসে রান্না করার অনুমতি না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে তারা রান্নার আয়োজন করে। এরপর বেশ ঘটা করে দাওয়াত দেয় হলে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থী ও কটেজের শিক্ষার্থীদের। চবি কর্তৃপক্ষের সামনেই রাতের বেলা প্রত্যেক হলের শিবির নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এনে খাওয়ানো হয় পোলাও-মাংস। এরপর তারা শিবিরের বিভিন্ন প্রকাশনা তুলে দেয় শিক্ষার্থীদের হাতে। এসবের মাঝে অনুষ্ঠিত হয় দাওয়াতি সভাও। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সমকালকে বলেন, 'প্রতিবারের মতো এবারও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা শিক্ষার্থী ও দুস্থদের জন্য কোরবানির আয়োজন করেছি। এতে আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।

No comments

Powered by Blogger.