শিশু ফকিরের থেরাপি প্রাণ গেল গৃহবধূর-জ্বলন্ত মোমবাতি, ব্লেডে চিকিৎসা! by মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন,
জ্বরের চিকিৎসার জন্য ২০ বছর বয়সী গৃহবধূকে নিয়ে যাওয়া হয় 'পীর' মামা ফকিরের কাছে। পাঁচ বছর বয়সী মামা ফকির শুরু করে 'থেরাপি'। জ্বলন্ত মোমবাতি রোগীর মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ধারালো ব্লেড ধরে টান দেওয়া হয় দুই হাতের কনুই পর্যন্ত। যন্ত্রণায় গৃহবধূ চিৎকার শুরু করেন। দুই হাত রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। পীর এবার হাতে তুলে নেয় তেঁতুলগাছের ডাল। শুরু হয় বেদম প্রহার। টানা পাঁচ ঘণ্টা চলে এই থেরাপি। একপর্যায়ে সংজ্ঞা হারান গৃহবধূ। 'যা, বাইত লই যা; সব ঠিক অই যাব' বলে চিকিৎসা শেষ করে পীর। নিজ বাড়িতে দুই দিন অসহ্য যন্ত্রণায় কাটে গৃহবধূর।
অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার তাঁকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে থেরাপির নামে গৃহবধূকে ক্ষতবিক্ষত করা হয় গত বুধবার। মামা ফকিরের আসল নাম মেহেদী হাসান। অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর নাম শাহজাহান বেগম। তিনি মিরসরাইয়ের পান্তাপুকুর এলাকার হারুনুর রশিদের স্ত্রী। গৃহবধূর বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামে। বাবা মৃত আবু তাহের।
এদিকে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে থানায় খবর না দিয়েই গতকাল দাফন করা হয়েছে গৃহবধূর লাশ। গৃহবধূর চাচা জাফর আহম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা মেয়েকে হারিয়েছি। এরপর পুলিশে খবর দিলে আরো নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হবে। তাই পুলিশের কাছেও অভিযোগ করিনি।' মামা ফকিরের অপচিকিৎসার ব্যাপারে জানতে গতকাল মিরসরাই থানার ওসি ইফতেখার হাসানের সঙ্গে কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিষয়টি জানিয়ে এসএমএস পাঠানোর পরও সাড়া মেলেনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বাড়িও গোপালপুর গ্রামে। ইউপি চেয়ারম্যান গতকাল নিজেই গৃহবূধর লাশ দেখতে পূর্ব দুর্গাপুরে যান। তিনি দাবি করেছেন, এ ঘটনার পর ওই শিশুকে এলাকাছাড়া করা হয়েছে। তবে বিকেলে এ প্রতিবেদক গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখতে পান, আরোগ্য লাভের আশায় মামা ফকিরের কাছে এসেছে বেশ কিছু মানুষ। তাদের কেউই জানে না, শিশুটির অপচিকিৎসার ফলে ইতিমধ্যেই এক গৃহবধূ মারা গেছেন।
গৃহবধূর স্ব্বামী হারুনুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার স্ত্রীর জ্বর ছিল। গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ি। এরই মধ্যে গ্রামের মহিলারা খবর দেন গোপালপুর গ্রামে এক শিশু পীর অনেক জটিল রোগ সারাতে পারেন। বিশ্বাস করে স্ত্রীকে নিয়ে গোপালপুরে যাই। এরপর মামা ফকির মোমবাতি ও ব্লেড দিয়ে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করেন।' তিনি জানান, মামা ফকিরের থেরাপির পর শারীরিক যন্ত্রণায় কাটে শাহজাহানের দুই দিন। অবস্থা খারাপ হলে শুক্রবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল তাঁর স্ত্রী মারা যান।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খোকাও গতকাল খবর পেয়ে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে যান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। রোগ সারানোর নামে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। ওই শিশুকে যারা ব্যবহার করছে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।' তবে মামা ফকিরকে এলাকাছাড়া করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ প্রতিবেদক গতকাল গোপালপুর গ্রামে গিয়ে জানতে পারেন মামা ফকিরের আসল নাম মেহেদী হাসান। পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির নানার বাড়ি এ গ্রামে। মূলত নানা জাকির হোসেন ও মামারা তাকে দিয়ে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা মেহেদী হাসানের থেরাপি বিশ্বাস না করলেও দূর-দূরান্তের মানুষ সহজেই মেনে নিচ্ছে এ অপচিকিৎসা। মামা ফকির নিজে উপস্থিত থেকে কেবল নির্দেশনা দেয়। তার নির্দেশাবলি মোতাবেক কাজ করেন মামা মিজান।
গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসার আশায় হাজির হয়েছেন দূর থেকে আসা বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু। সবার হাতেই পানির বোতল। অনেকের হাতে পান-সুপারি, কারো হাতে মুরগি কিংবা ফলমূল। এগুলো সব মামা ফকিরের জন্য। আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, 'শুনেছি, পীরের চিকিৎসায় অনেক জটিল রোগ ভালো হয়েছে। আমরাও নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এলাম।'
একটু পরেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে মামা ফকির। তাকে কোলে করে নিয়ে উঠানের মাঝখানে বসলেন মামা মিজানুর রহমান। সঙ্গে শিশুর আরো দুই মামা সাইফুল ইসলাম ও আবুল খায়ের। মামা ফকিরের কাছে এ প্রতিবেদক জানতে চান, 'তোমার কাছে কোনো অলৌকিক শক্তি আছে কি না? কিংবা এমন কী আছে, যা দিয়ে তুমি জটিল রোগ সারাও?' কিন্তু শিশুটি কোনো কথা বলে না, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কেবল। কথা বলেন মামা মিজান। মিজান দাবি করেন, অসংখ্য লোক ভালো হয়েছে মামা ফকিরের সেবায়। শুধু রোগ সারানো নয়, অনেকের জিন-ভূত তাড়ানো হয়েছে নিমিষেই।
মিজান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'ব্লেড ও মোমবাতি দিয়েই তাঁর ভাগিনা জ্বর সারায়।' তিনি বলেন, 'মানুষ সেবা না পেলে কি আর এভাবে লাইন ধরে আসত? আমরা তো কারো কাছ থেকে নির্ধারিত ফি নিই না। খুশি হয়ে যে যা দেয়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকে মামা ফকির।' থেরাপিতে আক্রান্ত হয়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন_বিষয়টি বলতেই চুপ হয়ে যান তাঁরা। পরক্ষণে বলেন, 'ফকির তো এমন কিছু করেনি, তার মৃত্যুর দায়ভার তো আমাদের না।'
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরখানেক আগে শিশু মেহেদী হাসান একদিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে প্রলাপ বকতে থাকে শিশুটি। নানা জাকির হোসেন গ্রামের মানুষকে ধরে ধরে বলতে থাকেন তাঁর নাতি পীর হয়েছে। এরপর একপর্যায়ে সরল বিশ্বাসে একজন, দুজন করে লোক আসতে থাকে শিশুটির মামার বাড়িতে।
মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে থেরাপির নামে গৃহবধূকে ক্ষতবিক্ষত করা হয় গত বুধবার। মামা ফকিরের আসল নাম মেহেদী হাসান। অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর নাম শাহজাহান বেগম। তিনি মিরসরাইয়ের পান্তাপুকুর এলাকার হারুনুর রশিদের স্ত্রী। গৃহবধূর বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামে। বাবা মৃত আবু তাহের।
এদিকে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে থানায় খবর না দিয়েই গতকাল দাফন করা হয়েছে গৃহবধূর লাশ। গৃহবধূর চাচা জাফর আহম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা মেয়েকে হারিয়েছি। এরপর পুলিশে খবর দিলে আরো নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হবে। তাই পুলিশের কাছেও অভিযোগ করিনি।' মামা ফকিরের অপচিকিৎসার ব্যাপারে জানতে গতকাল মিরসরাই থানার ওসি ইফতেখার হাসানের সঙ্গে কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিষয়টি জানিয়ে এসএমএস পাঠানোর পরও সাড়া মেলেনি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বাড়িও গোপালপুর গ্রামে। ইউপি চেয়ারম্যান গতকাল নিজেই গৃহবূধর লাশ দেখতে পূর্ব দুর্গাপুরে যান। তিনি দাবি করেছেন, এ ঘটনার পর ওই শিশুকে এলাকাছাড়া করা হয়েছে। তবে বিকেলে এ প্রতিবেদক গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখতে পান, আরোগ্য লাভের আশায় মামা ফকিরের কাছে এসেছে বেশ কিছু মানুষ। তাদের কেউই জানে না, শিশুটির অপচিকিৎসার ফলে ইতিমধ্যেই এক গৃহবধূ মারা গেছেন।
গৃহবধূর স্ব্বামী হারুনুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার স্ত্রীর জ্বর ছিল। গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ি। এরই মধ্যে গ্রামের মহিলারা খবর দেন গোপালপুর গ্রামে এক শিশু পীর অনেক জটিল রোগ সারাতে পারেন। বিশ্বাস করে স্ত্রীকে নিয়ে গোপালপুরে যাই। এরপর মামা ফকির মোমবাতি ও ব্লেড দিয়ে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করেন।' তিনি জানান, মামা ফকিরের থেরাপির পর শারীরিক যন্ত্রণায় কাটে শাহজাহানের দুই দিন। অবস্থা খারাপ হলে শুক্রবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল তাঁর স্ত্রী মারা যান।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খোকাও গতকাল খবর পেয়ে গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে যান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। রোগ সারানোর নামে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। ওই শিশুকে যারা ব্যবহার করছে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।' তবে মামা ফকিরকে এলাকাছাড়া করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ প্রতিবেদক গতকাল গোপালপুর গ্রামে গিয়ে জানতে পারেন মামা ফকিরের আসল নাম মেহেদী হাসান। পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির নানার বাড়ি এ গ্রামে। মূলত নানা জাকির হোসেন ও মামারা তাকে দিয়ে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা মেহেদী হাসানের থেরাপি বিশ্বাস না করলেও দূর-দূরান্তের মানুষ সহজেই মেনে নিচ্ছে এ অপচিকিৎসা। মামা ফকির নিজে উপস্থিত থেকে কেবল নির্দেশনা দেয়। তার নির্দেশাবলি মোতাবেক কাজ করেন মামা মিজান।
গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসার আশায় হাজির হয়েছেন দূর থেকে আসা বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু। সবার হাতেই পানির বোতল। অনেকের হাতে পান-সুপারি, কারো হাতে মুরগি কিংবা ফলমূল। এগুলো সব মামা ফকিরের জন্য। আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, 'শুনেছি, পীরের চিকিৎসায় অনেক জটিল রোগ ভালো হয়েছে। আমরাও নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এলাম।'
একটু পরেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে মামা ফকির। তাকে কোলে করে নিয়ে উঠানের মাঝখানে বসলেন মামা মিজানুর রহমান। সঙ্গে শিশুর আরো দুই মামা সাইফুল ইসলাম ও আবুল খায়ের। মামা ফকিরের কাছে এ প্রতিবেদক জানতে চান, 'তোমার কাছে কোনো অলৌকিক শক্তি আছে কি না? কিংবা এমন কী আছে, যা দিয়ে তুমি জটিল রোগ সারাও?' কিন্তু শিশুটি কোনো কথা বলে না, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কেবল। কথা বলেন মামা মিজান। মিজান দাবি করেন, অসংখ্য লোক ভালো হয়েছে মামা ফকিরের সেবায়। শুধু রোগ সারানো নয়, অনেকের জিন-ভূত তাড়ানো হয়েছে নিমিষেই।
মিজান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'ব্লেড ও মোমবাতি দিয়েই তাঁর ভাগিনা জ্বর সারায়।' তিনি বলেন, 'মানুষ সেবা না পেলে কি আর এভাবে লাইন ধরে আসত? আমরা তো কারো কাছ থেকে নির্ধারিত ফি নিই না। খুশি হয়ে যে যা দেয়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকে মামা ফকির।' থেরাপিতে আক্রান্ত হয়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন_বিষয়টি বলতেই চুপ হয়ে যান তাঁরা। পরক্ষণে বলেন, 'ফকির তো এমন কিছু করেনি, তার মৃত্যুর দায়ভার তো আমাদের না।'
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরখানেক আগে শিশু মেহেদী হাসান একদিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে প্রলাপ বকতে থাকে শিশুটি। নানা জাকির হোসেন গ্রামের মানুষকে ধরে ধরে বলতে থাকেন তাঁর নাতি পীর হয়েছে। এরপর একপর্যায়ে সরল বিশ্বাসে একজন, দুজন করে লোক আসতে থাকে শিশুটির মামার বাড়িতে।
No comments