রাজনীতি-এবারের রোডমার্চ হোক সংসদ অভিমুখে by শওগাত আলী সাগর
বিরোধীদলীয় নেতাকে অনুরোধ করতে চাই, যত বেশি ইচ্ছা রোডমার্চ করুন, জনগণ আপত্তি করবে না। বরং জনগণের সমর্থনের পাল্লাটা ক্রমে ভারীই হবে। তবে আগামীতে যে কোনো রোডমার্চের আগে সংসদ ভবন অভিমুখে একটা রোডমার্চ করুন। এই রোডমার্চে অংশ নেবেন কেবল দলীয় সংসদ সদস্যরা। আপনার নেতৃত্বে সেই রোডমার্চটি যাবে সংসদ অধিবেশনে'সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনমত তৈরির জন্য চলতি মাসের শেষদিকে আবারও বিএনপির রোডমার্চ শুরু হবে। রোডমার্চ শেষ হলে নতুন কর্মসূচি আপনারা জানতে পারবেন।
আগামী ২০১২ সাল হবে আন্দোলনের বছর।' (সমকাল, ১০ নভেম্বর ২০১১)।
রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিরোধীদলীয় নেতা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য থেকে আঁচ করা যায়, তার দলের নেতৃত্বাধীন জোট নিয়ে তিনি আবারও রাজপথ গরম করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এই প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই। আমরা বরং খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তিনি হরতালের মতো জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচিকে আপাতত বিদায় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটটি যেভাবে হরতালের দিকে এগোচ্ছিল তাতে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠী আতঙ্কবোধ করছিল। হরতাল জনগণ তো দূরের কথা, দলের নেতাকর্মীদেরই টানতে পারছিল না। রোডমার্চে সেই দৃশ্যটা পাল্টে গেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চোখে পড়েছে। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীকে হতাশ করেছে।
'চলতি মাসের শেষের দিকে যে রোডমার্চের' প্রস্তুতি বিরোধী দল নিচ্ছে সেটা নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতার আগামী রোডমার্চটি হোক সংসদ অভিমুখে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে গেছে। গত সংসদের মেয়াদের প্রায় পুরোটা সময়ই আওয়ামী লীগ সংসদের বাইরে ছিল, এই সংসদে বিএনপিও যাচ্ছে না। আমরা ধরে নিতে পারি, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে আজকের আওয়ামী লীগও সংসদের চৌহদ্দি মাড়াবে না। সংসদীয় ব্যবস্থাকে অকার্যকর করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলের মধ্যেই একটি চমৎকার মিল আছে। সংসদ বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংসদীয় পদবির ব্যবহার থেকে বিরত থাকেনি। সুযোগ-সুবিধা নেওয়া থেকেও তারা কেউ বিরত থাকেননি। জনগণের কাছ থেকে তারা ভোট নিয়েছেন জাতীয় সংসদে জনগণের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু দুটি দলই সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছে। অথচ সংসদ সদস্য পরিচয়ে বিদেশ ভ্রমণ, বেতন-ভাতা নেওয়া, শুল্কমুক্ত গাড়ি নেওয়া_ এর কোনোটাই কিন্তু তারা দূরে সরিয়ে রাখছেন না। আপত্তি কেবল সংসদ অধিবেশনে গিয়ে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে।
জানি, বিএনপির একটা যুক্তি আছে। সেই একই যুক্তি আওয়ামী লীগেরও ছিল। বিএনপির যুক্তি হলো, যে সংসদে গিয়ে কথা বলা যায় না, সেই সংসদে গিয়ে লাভ কী? লাভ-লোকসানের হিসাবটা একটু পরে করব। তার আগে বলুন, ভোট চাওয়ার সময় কি জনগণকে বলেছিলেন যে সংসদে গিয়ে কথা বলতে না পারলে সংসদে অনুপস্থিত থাকব? কোন দল সংসদে কী রকম দক্ষতা দেখাতে পারে, কোন সংসদ সদস্য কতটা পারদর্শিতা দেখাতে পারেন_ এগুলো তো যোগ্যতার ব্যাপার। তা ছাড়া জাতীয় সংসদে বিএনপিকে আওয়ামী লীগ বা সরকার মনোনয়ন দেয়নি। সরকার মনোনয়ন দিলে ধরে নিতাম বিএনপিকে কথা বলতে না দেওয়ার একটা দুর্বল হলেও যুক্তি আছে। বিএনপিকে সংসদে পাঠিয়েছে জনগণ। জনগণ তাদের পবিত্র আমানত ভোটটি তাদের দিয়েছে তাদের হয়ে সংসদে কথা বলার জন্যই। বিএনপি যদি সংসদে কথা না-ই বলতে পারে তাহলে তাদের তো উচিত খোলাখুলি জনগণের কাছে সেটি প্রকাশ করে সংসদ থেকেই বিদায় নেওয়া। কিন্তু সংসদ সদস্য পদটি আঁকড়ে ধরে রেখে অধিবেশনে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকা আর যা-ই হোক রাজনৈতিক সততার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না।
অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে ক্ষমতা কাঠামোর কোথায় কী ঘটছে সবকিছুই জনগণ জেনে যায়। বিএনপি সংসদে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে জনগণের সহানুভূতি তাদের দিকেই যাবে। এই যে বিএনপির রোডমার্চের দিকে স্রোতের মতো জনগণ যাচ্ছে, সেটি কি তাদের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে? নাকি সরকারের প্রতি জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে? সংসদে গিয়ে বিএনপি যদি নাজেহালও হয়, জনগণের সহানুভূতিটা কিন্তু তাদের দিকেই যাবে।
সেই বিবেচনা থেকেই বিরোধীদলীয় নেতাকে অনুরোধ করতে চাই, যত বেশি ইচ্ছা রোডমার্চ করুন, জনগণ আপত্তি করবে না। বরং জনগণের সমর্থনের পাল্লাটা ক্রমে ভারীই হবে। তবে আগামীতে যে কোনো রোডমার্চের আগে সংসদ ভবন অভিমুখে একটা রোডমার্চ করুন। এই রোডমার্চে অংশ নেবেন কেবল দলীয় সংসদ সদস্যরা। আপনার নেতৃত্বে সেই রোডমার্চটি যাবে সংসদ অধিবেশনে। রোডমার্চের মাধ্যমে সারাদেশে আপনি যেমন একটা জোয়ার তৈরি করেছেন, সংসদেও তেমনি একটা ঝড় তুলুন। জনগণ দেখবে আপনাদের ভূমিকা। সরকারি দলের ভূমিকাও তারা দেখবে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, সংসদে যাওয়ার পর আপনার রোডমার্চে জনগণের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বৈ কমবে না। মাঝখানে মৃতপ্রায় দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাটাকে বাঁচিয়ে রাখার কৃতিত্বটা আপনারই জুটবে।
কোনো চাকরিজীবী দিনের পর দিন অফিসে না গিয়েও যদি বেতন-ভাতা নেয় সেটি দুর্নীতি হিসেবেই চিহ্নিত হয়। সংসদ সদস্যরাও তো জনগণেরই চাকরি করেন। তারা দিনের পর দিন অফিসে (সংসদে) না গিয়ে বেতন-ভাতা নিলে সেটি দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হবে না কেন? বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আপনি যথার্থই সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কিন্তু আপনার নেতৃত্বে আপনার দলের এমপিদের এই দুর্নীতি থেকে বের না করে সরকারের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার কি কোনো অধিকার থাকে? নাকি থাকা উচিত?
শওগাত আলী সাগর : টরন্টো প্রবাসী সাংবাদিক
shaugat@gmail.com
রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিরোধীদলীয় নেতা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য থেকে আঁচ করা যায়, তার দলের নেতৃত্বাধীন জোট নিয়ে তিনি আবারও রাজপথ গরম করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এই প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই। আমরা বরং খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ দিতে চাই, তিনি হরতালের মতো জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচিকে আপাতত বিদায় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটটি যেভাবে হরতালের দিকে এগোচ্ছিল তাতে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠী আতঙ্কবোধ করছিল। হরতাল জনগণ তো দূরের কথা, দলের নেতাকর্মীদেরই টানতে পারছিল না। রোডমার্চে সেই দৃশ্যটা পাল্টে গেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চোখে পড়েছে। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীকে হতাশ করেছে।
'চলতি মাসের শেষের দিকে যে রোডমার্চের' প্রস্তুতি বিরোধী দল নিচ্ছে সেটা নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতার আগামী রোডমার্চটি হোক সংসদ অভিমুখে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে গেছে। গত সংসদের মেয়াদের প্রায় পুরোটা সময়ই আওয়ামী লীগ সংসদের বাইরে ছিল, এই সংসদে বিএনপিও যাচ্ছে না। আমরা ধরে নিতে পারি, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে আজকের আওয়ামী লীগও সংসদের চৌহদ্দি মাড়াবে না। সংসদীয় ব্যবস্থাকে অকার্যকর করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলের মধ্যেই একটি চমৎকার মিল আছে। সংসদ বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংসদীয় পদবির ব্যবহার থেকে বিরত থাকেনি। সুযোগ-সুবিধা নেওয়া থেকেও তারা কেউ বিরত থাকেননি। জনগণের কাছ থেকে তারা ভোট নিয়েছেন জাতীয় সংসদে জনগণের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু দুটি দলই সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছে। অথচ সংসদ সদস্য পরিচয়ে বিদেশ ভ্রমণ, বেতন-ভাতা নেওয়া, শুল্কমুক্ত গাড়ি নেওয়া_ এর কোনোটাই কিন্তু তারা দূরে সরিয়ে রাখছেন না। আপত্তি কেবল সংসদ অধিবেশনে গিয়ে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে।
জানি, বিএনপির একটা যুক্তি আছে। সেই একই যুক্তি আওয়ামী লীগেরও ছিল। বিএনপির যুক্তি হলো, যে সংসদে গিয়ে কথা বলা যায় না, সেই সংসদে গিয়ে লাভ কী? লাভ-লোকসানের হিসাবটা একটু পরে করব। তার আগে বলুন, ভোট চাওয়ার সময় কি জনগণকে বলেছিলেন যে সংসদে গিয়ে কথা বলতে না পারলে সংসদে অনুপস্থিত থাকব? কোন দল সংসদে কী রকম দক্ষতা দেখাতে পারে, কোন সংসদ সদস্য কতটা পারদর্শিতা দেখাতে পারেন_ এগুলো তো যোগ্যতার ব্যাপার। তা ছাড়া জাতীয় সংসদে বিএনপিকে আওয়ামী লীগ বা সরকার মনোনয়ন দেয়নি। সরকার মনোনয়ন দিলে ধরে নিতাম বিএনপিকে কথা বলতে না দেওয়ার একটা দুর্বল হলেও যুক্তি আছে। বিএনপিকে সংসদে পাঠিয়েছে জনগণ। জনগণ তাদের পবিত্র আমানত ভোটটি তাদের দিয়েছে তাদের হয়ে সংসদে কথা বলার জন্যই। বিএনপি যদি সংসদে কথা না-ই বলতে পারে তাহলে তাদের তো উচিত খোলাখুলি জনগণের কাছে সেটি প্রকাশ করে সংসদ থেকেই বিদায় নেওয়া। কিন্তু সংসদ সদস্য পদটি আঁকড়ে ধরে রেখে অধিবেশনে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকা আর যা-ই হোক রাজনৈতিক সততার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না।
অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে ক্ষমতা কাঠামোর কোথায় কী ঘটছে সবকিছুই জনগণ জেনে যায়। বিএনপি সংসদে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে জনগণের সহানুভূতি তাদের দিকেই যাবে। এই যে বিএনপির রোডমার্চের দিকে স্রোতের মতো জনগণ যাচ্ছে, সেটি কি তাদের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে? নাকি সরকারের প্রতি জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে? সংসদে গিয়ে বিএনপি যদি নাজেহালও হয়, জনগণের সহানুভূতিটা কিন্তু তাদের দিকেই যাবে।
সেই বিবেচনা থেকেই বিরোধীদলীয় নেতাকে অনুরোধ করতে চাই, যত বেশি ইচ্ছা রোডমার্চ করুন, জনগণ আপত্তি করবে না। বরং জনগণের সমর্থনের পাল্লাটা ক্রমে ভারীই হবে। তবে আগামীতে যে কোনো রোডমার্চের আগে সংসদ ভবন অভিমুখে একটা রোডমার্চ করুন। এই রোডমার্চে অংশ নেবেন কেবল দলীয় সংসদ সদস্যরা। আপনার নেতৃত্বে সেই রোডমার্চটি যাবে সংসদ অধিবেশনে। রোডমার্চের মাধ্যমে সারাদেশে আপনি যেমন একটা জোয়ার তৈরি করেছেন, সংসদেও তেমনি একটা ঝড় তুলুন। জনগণ দেখবে আপনাদের ভূমিকা। সরকারি দলের ভূমিকাও তারা দেখবে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, সংসদে যাওয়ার পর আপনার রোডমার্চে জনগণের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বৈ কমবে না। মাঝখানে মৃতপ্রায় দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাটাকে বাঁচিয়ে রাখার কৃতিত্বটা আপনারই জুটবে।
কোনো চাকরিজীবী দিনের পর দিন অফিসে না গিয়েও যদি বেতন-ভাতা নেয় সেটি দুর্নীতি হিসেবেই চিহ্নিত হয়। সংসদ সদস্যরাও তো জনগণেরই চাকরি করেন। তারা দিনের পর দিন অফিসে (সংসদে) না গিয়ে বেতন-ভাতা নিলে সেটি দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হবে না কেন? বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আপনি যথার্থই সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কিন্তু আপনার নেতৃত্বে আপনার দলের এমপিদের এই দুর্নীতি থেকে বের না করে সরকারের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার কি কোনো অধিকার থাকে? নাকি থাকা উচিত?
শওগাত আলী সাগর : টরন্টো প্রবাসী সাংবাদিক
shaugat@gmail.com
No comments