পাত্রপাত্রীর পেছনে গোয়েন্দাগিরি!

বিয়ের আগে পাত্র বা পাত্রীর সম্পর্কে খোঁজ নিতে ভারতে বেসরকারি গোয়েন্দাদের কাছে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। পাত্র বা পাত্রীর চরিত্র, যৌন সম্পর্কের তথ্য এবং আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থার খুঁটিনাটি জানতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাহায্য চাওয়া হচ্ছে।ভারতে ইন্টারনেটের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তের নারী-পুরুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে। অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমে বিয়ের ঘটনাও বাড়ছে। তবে এ ধরনের বিয়েতে পরিবারের উদ্যোগ বা সংশ্লিষ্টতা খুব একটা থাকে না। মূলত এ কারণেই বিয়ের আগে পছন্দের পাত্র বা পাত্রীর সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে চান পরিবারের সদস্যরা।


তাঁদের রোজগার, পরিবারের বৃত্তান্ত ও অতীত সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চান তাঁরা। গত কয়েক বছরে বিয়ের আগে গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নেওয়ার ঘটনা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানায় বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
বিয়ের আগে পাত্রপাত্রী সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার কাজ করে_বর্তমানে এমন প্রায় ১৫ হাজার গোয়েন্দা সংস্থা আছে ভারতে। বিয়ের মৌসুমে তারা এখন প্রায় ১০ লাখের মতো তদন্ত করে। ভারতের বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংগঠন 'অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ডিটেকটিভস অব ইন্ডিয়া'র (এপিডিআই) চেয়ারম্যান কুমার বিক্রম সিং জানান, পাঁচ বছর আগের তুলনায় এ ধরনের তদন্তের সংখ্যা এখন তিন গুণ বেড়েছে।
বোনের বিয়ে দেওয়ার আগে হবু জামাই সম্পর্কে জানতে মুম্বাইভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা ভেটেরান ইনভেস্টিগেশনসের কাছে যান আনিতা (ছদ্মনাম)। আনিতা বলেন, 'ভারতে আগে পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন হতো। যার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে, আত্মীয়স্বজন তার সম্পর্কে খোঁজ নিত। কিন্তু এখন তৃতীয় কারো সাহায্য দরকার। বিষয়টিকে আমি গোয়েন্দাগিরি বলব না। আমরা তো কেবল বিয়ের আগে বোনজামাই সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।'
অভিভাবকদের নৈতিক বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ওপর তদন্তের প্রকৃতি নির্ভর করে। ভারতে অতীত প্রেমের সম্পর্ককে এখনো অনেকেই খারাপ চোখে দেখে। আর বিয়ের আগে অর্থিক সংগতির খোঁজ করার বিষয়টিও খুবই সাধারণ। ভেটেরান ইনভেস্টিগেশনের প্রধান রাহুল রায় বলেন, পাত্রদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার ঘটনাই বেশি। 'পাত্রের সঙ্গে অন্য কারো সম্পর্ক আছে কি না, পতিতাদের কাছে যায় কি না, ধূমপান বা মাদক নেয় কি না_এসব জানতে চাওয়া হয়।' রাহুল জানান, সাধারণত একটি তদন্তের পেছনে দুই থেকে তিনজনের একটি দল নিযুক্ত করেন তাঁরা। পাত্রের বিষয়ে অনলাইনে খোঁজখবর ছাড়াও আশপাশের লোকজন ও ব্যক্তির ওপর নজরদারির মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয়। যার পেছনে গোয়েন্দা লাগানো হয়েছে, সে যাতে কিছুই টের না পায়, সেই চেষ্টা থাকে সর্বোচ্চ। এজন্য তারা ঘড়ি, চাবির রিং, লকেট বা শার্টের বোতামে লুকানো ক্যামেরাও ব্যবহার করেন।
রাহুল জানান, তদন্ত করতে গিয়ে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। এক পাত্রের আগে আরো কয়েকটি বিয়ের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। একটি পরিবারের ব্যবসার তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে বিয়েগুলো ভেঙে যায়। তবে পাত্রীপক্ষ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বিশ্বাস করছে না_এমন ঘটনাও ঘটে। এক পাত্রকে সমকামী চিহ্নিত করেন তাঁরা। পাত্রীপক্ষ এ দাবি বিশ্বাস না করে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়। তবে কিছুদিন পরেই তালাক হয়ে যায় ওই দম্পতির। পাত্রের মায়ের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.