সেই সাংসদের দাবিঃ জাল বিছানো হয়ে গেছে, রুই-কাতলা চুনোপুঁটিও ধরা পড়বে

‘আমরা ঘুমিয়ে যাইনি, আমাদের প্রিয় নেতা লোকমান হোসেন হত্যার বিচার দেখতে জেগে আছি। লোকমান হত্যাকারীরা বাঁচতে পারবে না। জাল বিছানো হয়ে গেছে, এবার রুই-কাতলা এমনকি চুনোপুঁটিও ধরা পড়বে।’ এই বক্তব্য নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ নজরুল ইসলামের। তিনি গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মেয়র লোকমানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

অথচ এই সাংসদ এক দিন আগে গত বৃহস্পতিবার নরসিংদী জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে লোকমান হত্যার এজাহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি হত্যা মামলার প্রধান আসামি টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর ভাই সালাহউদ্দিনের পক্ষে সাফাই গেয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন।
আর গতকাল পৌরবাসীর ব্যানারে শহরের নওয়াববাড়ী পৌর কামালউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত সমাবেশে সাংসদ নজরুল ইসলাম ভোল পাল্টান। তিনি বলেন, ‘নরসিংদীর মানুষের অপেক্ষা, কখন লোকমান হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। লোকমান হত্যাকারীর ফাঁসির পর তাদের নিয়ে শোকসভা হওয়া তো দূরের কথা, লাশ নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে নরসিংদীর মানুষ বসে আছে।’
পৌরবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সাংসদ বলেন, ‘লোকমান হত্যার বিচার দেখতে হলে আমাদের আর একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম সাংসদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মুখে বললে হবে না, শুধু কথায় পেট ভরবে না, কার্যকারিতা দেখতে চাই। আপনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। আমরা আপনার মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচার দেখতে চাই।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া সাংসদের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় সাংসদ, আমি লোকমান হত্যার বিচার প্রশাসনের কাছে চাই না। এ বিচার আপনার কাছে চাই। প্রশাসন আজ আছে, কাল থাকবে না। আপনার নরসিংদী ত্যাগ করার কোনো রাস্তা নাই।...আপনার দলীয় কার্যালয়ে একজন জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করা হয়েছে। মনে রাখবেন, আপনিও একজন জনপ্রতিনিধি।’
পৌরসভার কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুল আলম, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী, প্যানেল মেয়র জহির আহমেদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির সমাবেশ: নরসিংদী বিএনপি আজ রোববারের মধ্যে দলীয় নেতা খায়রুল কবির খোকনের মুক্তি দাবি করেছে। গতকাল শহরে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে দলটি এ দাবি করে। অন্যথায় দলটি আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে।
সমাবেশে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, মেয়র লোকমান হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামিদের অধিকাংশ টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর অনুগত। আসামিদের বাঁচাতে সরকারি দলের এক সাংসদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় সাফাই গেয়েছেন। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে বিএনপির নেতা খোকনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ একের পর এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে।
গতকাল বিকেলে শহরের গোলাপ চত্বরে নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ খায়রুল কবিরের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জেলা বিএনপি।
সমাবেশে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিশেষ একটি মহলের ইঙ্গিতে লোকমান হত্যা মামলায় খোকনকে ফাঁসাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খোকনের স্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, আজ রোববারের মধ্যে খোকনের মুক্তি দেওয়া না হলে নরসিংদীবাসী ঘরে বসে থাকবে না। তিনি লোকমান হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামিদের ধরতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দীন মোহাম্মদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন: গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল কবির খোকন ও লোকমান হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামি নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) তারেক আহমেদের মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি। অন্যথায় আন্দোলন শুরুর হুমকি দেন দলটির নেতারা।
‘বিএনপির ত্যাগী নেতৃবৃন্দের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিনের বাসায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারেক আহমেদ হজ পালন করতে গেছেন। অন্যায়ভাবে তাঁকে আসামি করা হয়েছে।
সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামও লোকমান হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামি। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর ব্যাপারে কোনো কথা বলা হয়নি। এর কারণ জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. সেলিম বলেন, ‘এজাহারভুক্তদের মধ্যে তারেক আহমেদের বিষয়ে আমরা জ্ঞাত। তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। বাকিদের বেলায় আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ জলিল, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদ নওশের, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি বাবুল সরকার, জেলা যুবদলের সভাপতি বোরহানউদ্দিন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খবিরুল ইসলাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.