দেশের মোট ডায়াবেটিক রোগীর মাত্র ২০ ভাগ চিকিৎসা পায়
১৪ নভেম্বর প্রতি বছর 'বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস' পালন করা হয়। 'ডায়াবেটিস শিক্ষা ও প্রতিরোধ' থিমকে সামনে রেখে এবারও এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের স্লোগান 'ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করুন. এখনই।' বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দেহঘড়ির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খানষ টাইপ-১ ও ২ ডায়াবেটিসের মূল পার্থক্য কী?ষষ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এটি সাধারণত শিশুদের হয়।
এ ক্ষেত্রে ইনসুলিনই একমাত্র চিকিৎসা। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে দেহে যে পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হয় তা পর্যাপ্ত নয় বা পর্যাপ্তভাবে সক্রিয় নয়। এটি সাধারণত বড়দের হয়।
ষ ডায়াবেটিসের জটিলতা কী কী? এগুলো প্রতিরোধের উপায় কী?
ষষ এমন কোনো অঙ্গ নেই যেটিতে ডায়াবেটিস প্রভাব ফেলে না। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, অন্ধত্ব, কিডনি ফেইলিউরের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। এ জটিলতা দূর করতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পালন করতে হবে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, পরিমিত আহার, পরিমিত ব্যায়াম আর ধরন অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট বা ইনসুলিন।
ষ দেশে ডায়াবেটিসের পরিস্থিতি কেমন?
ষষ বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ রোগটি বৃদ্ধির হার আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বেশি। এর মূল কারণ আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তর্ন। মানুষ শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে খোলা মাঠ কমে গেছে। স্কুলগুলোতে খেলার মাঠ নেই। তাই শিশুরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত চর্বর্ি ও শর্কর্রা জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড গ্রহণ করার ফলেও ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি সারাদেশে মাত্র ২৫ ভাগ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে। এখনও ৪৫ থেকে ৫০ লাখ রোগী সেবার আওতার বাইরে রয়েছে। চিকিৎসা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে।
ষ এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ষষ টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি হয়। এটি মোট ডায়াবেটিসের শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ। একটা বিষয় লক্ষণীয়, এ ধরনের ডায়াবেটিসের ৬০-৭০ ভাগ প্রতিরোধ করা যায়। যেমন প্রি-ডায়াবেটিকদের (রক্তের গ্গ্নুকোজ ৬.১ থেকে ৮.০ মিলিমোল/লিটারের মধ্যে) ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক মানুষদের চেয়ে তিন গুণ। প্রি-ডায়াবেটিকদের গ্যাংগ্রিন, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা ডায়াবেটিস রোগীদের মতোই। এরা যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম করে তবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। স্থূলতার হার কমাতে হবে। বাড়াতে হবে কায়িক পরিশ্রম।
ষ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বারডেম বা ডায়াবেটিক সমিতি কী ভূমিকা পালন করছে?
ষষ ডায়াবেটিক সমিতির মূল লক্ষ্যই হলো কোনো ডায়াবেটিস রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় না থাকে। এ জন্য আমরা সারাদেশে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ছড়িয়ে দিতে চাই। সমিতি পরিচালিত বারডেম বিশ্বের সর্বর্বৃহৎ ডায়াবেটিক হাসপাতাল। ৭০০ বেডের এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগী দেখা হয়। বারডেম ছাড়াও ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্কর্ (এনএইচএন) ও হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এইচসিডিপি) ২৪টি কেন্দ্র এবং ৫৯টি অধিভুক্ত সমিতির মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ জেলায় ডায়াবেটিক সেবা সম্প্রসারিত রয়েছে। বর্তর্মানে প্রায় ১৭ লাখ রোগী সমিতির রেজিস্টার্ডর্। আমরা এমন একটি কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি যার ফলে আগামী আড়াই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় একজন প্রশিক্ষিত ডায়াবেটিস ডাক্তার থাকবেন। তার চেম্বার ও প্রশিক্ষণের সহায়তা আমরা দেব। বারডেম নতুন ওষুধ আবিষ্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের গাছ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লান্ট রিসার্চ। নারী ও শিশুর ডায়াবেটিস সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এটি। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে তা নির্ধারণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের ৫০ ভাগ ডায়াবেটিক রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে।
ষ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা কী হতে পারে?
ষষ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমাদের সঙ্গে সরকার কাজ করছে। আমাদের খরচের শতকরা ২৫ ভাগ জোগান দেয় সরকার। দেশের মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতার বড্ড অভাব। সচেতনতা বাড়াতে সরকারকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে আমরা যে প্রশিক্ষণের আয়োজন করি তাতে সরকারি চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর দাতা সংস্থাসহ অবস্থাবান ব্যক্তিদের এক্ষেত্রে আরও এগিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পোস্টার, প্লাকার্ড বা লিফলেটের মাধ্যমে নিয়মিত মানুষকে শিক্ষামূলক প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে সবাইকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।
সোক্ষাৎকার গ্রহণ : ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
ষ ডায়াবেটিসের জটিলতা কী কী? এগুলো প্রতিরোধের উপায় কী?
ষষ এমন কোনো অঙ্গ নেই যেটিতে ডায়াবেটিস প্রভাব ফেলে না। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, অন্ধত্ব, কিডনি ফেইলিউরের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। এ জটিলতা দূর করতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পালন করতে হবে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, পরিমিত আহার, পরিমিত ব্যায়াম আর ধরন অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট বা ইনসুলিন।
ষ দেশে ডায়াবেটিসের পরিস্থিতি কেমন?
ষষ বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। এ রোগটি বৃদ্ধির হার আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বেশি। এর মূল কারণ আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তর্ন। মানুষ শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে খোলা মাঠ কমে গেছে। স্কুলগুলোতে খেলার মাঠ নেই। তাই শিশুরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত চর্বর্ি ও শর্কর্রা জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড গ্রহণ করার ফলেও ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি সারাদেশে মাত্র ২৫ ভাগ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে। এখনও ৪৫ থেকে ৫০ লাখ রোগী সেবার আওতার বাইরে রয়েছে। চিকিৎসা না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে।
ষ এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ষষ টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি হয়। এটি মোট ডায়াবেটিসের শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ। একটা বিষয় লক্ষণীয়, এ ধরনের ডায়াবেটিসের ৬০-৭০ ভাগ প্রতিরোধ করা যায়। যেমন প্রি-ডায়াবেটিকদের (রক্তের গ্গ্নুকোজ ৬.১ থেকে ৮.০ মিলিমোল/লিটারের মধ্যে) ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক মানুষদের চেয়ে তিন গুণ। প্রি-ডায়াবেটিকদের গ্যাংগ্রিন, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা ডায়াবেটিস রোগীদের মতোই। এরা যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম করে তবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। স্থূলতার হার কমাতে হবে। বাড়াতে হবে কায়িক পরিশ্রম।
ষ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বারডেম বা ডায়াবেটিক সমিতি কী ভূমিকা পালন করছে?
ষষ ডায়াবেটিক সমিতির মূল লক্ষ্যই হলো কোনো ডায়াবেটিস রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় না থাকে। এ জন্য আমরা সারাদেশে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ছড়িয়ে দিতে চাই। সমিতি পরিচালিত বারডেম বিশ্বের সর্বর্বৃহৎ ডায়াবেটিক হাসপাতাল। ৭০০ বেডের এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগী দেখা হয়। বারডেম ছাড়াও ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্কর্ (এনএইচএন) ও হেলথকেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এইচসিডিপি) ২৪টি কেন্দ্র এবং ৫৯টি অধিভুক্ত সমিতির মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ জেলায় ডায়াবেটিক সেবা সম্প্রসারিত রয়েছে। বর্তর্মানে প্রায় ১৭ লাখ রোগী সমিতির রেজিস্টার্ডর্। আমরা এমন একটি কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি যার ফলে আগামী আড়াই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় একজন প্রশিক্ষিত ডায়াবেটিস ডাক্তার থাকবেন। তার চেম্বার ও প্রশিক্ষণের সহায়তা আমরা দেব। বারডেম নতুন ওষুধ আবিষ্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের গাছ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্লান্ট রিসার্চ। নারী ও শিশুর ডায়াবেটিস সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এটি। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে তা নির্ধারণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের ৫০ ভাগ ডায়াবেটিক রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে।
ষ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা কী হতে পারে?
ষষ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমাদের সঙ্গে সরকার কাজ করছে। আমাদের খরচের শতকরা ২৫ ভাগ জোগান দেয় সরকার। দেশের মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতার বড্ড অভাব। সচেতনতা বাড়াতে সরকারকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে আমরা যে প্রশিক্ষণের আয়োজন করি তাতে সরকারি চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর দাতা সংস্থাসহ অবস্থাবান ব্যক্তিদের এক্ষেত্রে আরও এগিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পোস্টার, প্লাকার্ড বা লিফলেটের মাধ্যমে নিয়মিত মানুষকে শিক্ষামূলক প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে সবাইকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।
সোক্ষাৎকার গ্রহণ : ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
No comments