ফলোআপ-ডায়েরির পাতা থেকে by কেএম আজাদ রহমান,

হরে লেখাপড়া করে আদর্শ পেশা শিক্ষকতা করে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে গ্রামেই থাকতে চেয়েছিলেন মেধাবী শিক্ষিকা শারমিন জাহান সুমু্। কিন্তু ঘাতকের বিকৃত রুচির লোলুপ দৃষ্টি তাকে বাঁচতে দেয়নি। মনের অব্যক্ত কথাগুলো নিজের ডায়েরির পাতায় পাতায় অজান্তেই ব্যক্ত করেছেন, যা এখন তার স্বামীসহ পরিবারের কাছে শুধুই স্মৃতি। "গ্রামে বসবাসের ইচ্ছাটা প্রবল হলো যখন বুঝলাম মাটির স্পর্শে থেকে মাকে চিনব, ভালোবাসব বলে। ধিক আমাকেই। মাটির গান শুনতে, তার কান্নাকে অনুভব করার বাসনা যে নেই তা বলাও ঠিক হবে না। তোমার আদর্শে আমায় গড়ে তোলো। মাটি আমার মা। তোমার আশ্রয়েই আমাকে যেতে হবে।


তার আগে কিছু করণীয় আছে। সভ্যতা আমায় দিয়েছে ধ্বংস, আর তুমি দিয়েছ সান্ত্বনা। বৃক্ষ দিয়েছে সঙ্গ। আমার প্রতিটি সুখ-দুঃখের প্রত্যক্ষ সঙ্গী তুমি। জানি না, মনের কথাগুলো মনের মতো করে বলতে পারছি কি না। আজ নতুন করে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। আমি বড় হতে চাই। খ্যাতি, যশ, প্রভাব_ সবকিছু চাই। কিন্তু নিজেকে ঠিক সেভাবে যেন প্রস্তুত করতে পারছি না। জীবনের কাছে আমার প্রথম জিজ্ঞাসা_ ধর্ম কী এবং কেন? এ প্রশ্নের জবাবে আমার মন বলেছে, মহাকাল মহাস্রোতের সীমা-পরিসীমা পেরিয়ে সেই মহান সত্তার সাথে মিলনের অনন্য যোগসূত্রের নামই ধর্ম। শনি, রবি, সোম_ এভাবেই কেটে যায় দিনগুলো। আর জীবনসায়াহ্নের লগ্ন হয় নিকটবর্তী। অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। আশা আশাই রয়ে যাচ্ছে। সমুখের পথ বহু দূর। এর মাঝে এখনও নিজেকে গুছিয়ে নেয়া হলো না।"
প্রকৃতি, মাতৃত্ববোধ ও স্বদেশপ্রেম ছিল যার প্রেরণা, দেশের জন্য যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেই মেধাবী স্কুলশিক্ষিকা শারমিনকে অকালে প্রাণ দিতে হলো বিকৃত যৌন মানসিকতার ঘাতক আবুলের হাতে। নিহত শারমিনের নিজ হাতে লেখা ডায়েরি থেকে তার ধর্ম, প্রকৃতি, স্বদেশপ্রেম ও মাতৃত্ববোধের ওপর কথাগুলোর মাধ্যমেই তার মানসিকতার স্পষ্ট চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
উল্লেখ্য, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দক্ষিণ গৈলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার সরদার শাহজাহানের মেয়ে ও রাজিহার ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের ইসমাইল তালুকদারের ছেলে সেনা সদস্য জসিম উদ্দিন আনোয়ার ওরফে সোহেল তালুকদারের স্ত্রী পূর্ব সুজনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার গত ১২ অক্টোবর বিকেলে স্কুল থেকে পাঠদান শেষে হেঁটে নিজ ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন। পথে উপজেলার গৈলাবাজারের পশ্চিম পাশে খলিফা বাড়ির ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ওঁৎ পেতে থাকা মধ্য শিহিপাশা গ্রামের মৃত আকু দৌকিদার ওরফে গোমস্তার বখাটে ছেলে আবুল গোমস্তা ধারালো ছুরি দিয়ে শারমিনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। দুই বছর যাবৎ প্রেম নিবেদন করে কোন সুমুর কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। ওই দিনই স্থানীয়দের সহায়তায় আবুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উত্তাল হয়ে ওঠে আগৈলঝাড়ার জনপদ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবুল শারমিন হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার নন্দী জানান। এ ঘটনায় শারমিনের বাবা সরদার শাহজাহান বাদী হয়ে সিরাজুল ইসলাম ওরফে আবুলকে প্রধান আসামি করে আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। যার নং-৮ (১৩/১০/১১)। ওই দিন হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে থানা ঘেরাও করে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন বাবুল ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন আগৈলঝাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, কলেজ শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, গৌরনদী, উজিরপুর, মুলাদি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। কর্মসূচির অংশ হিসাবে উপজেলার ৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বর্জন, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ সর্বস্তরের জনগণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। কিন্তু তারপরও মামলার কাজ এগুচ্ছে না। এলাকাবাসী অপরাধীর দ্রুত শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া শারমিনের চাকরিস্থল পূর্ব সুজনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ এলাকাবাসী নিহত শিক্ষিকা শারমিনের নামে উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠী এতিমখানা থেকে গৈলাবাজার সড়কটি শারমিনের নামে নামকরণের দাবি জানান । frrrrrrrrrrrr

No comments

Powered by Blogger.