স্বাস্থ্য খাত-চিকিৎসাও একটি সেবা by বদিউল আলম মজুমদার

স্তুত যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার আকাশচুম্বী খরচের কারণে সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মধ্যকার দূরত্ব ক্রমাগতভাবে প্রকট হচ্ছে। তবে নিম্নবিত্তের কোনো মেধাবী সন্তান যদি ব্যয়বহুল নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে এবং যা হওয়া সম্ভব, তাহলে পরিবারের আর্থিক দৈন্য তার লেখাপড়ার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তেমনিভাবে কোনো কপর্দকহীন বাস্তুহারাও যদি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাজির হয়, তাকেও হাসপাতাল সেবা দিতে বাধ্য। এ ছাড়া বাস্তুহারাদেরও সরকারি ও বেসরকারি উদোগে এখনও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়


গত জুলাই মাসে বুকের ব্যথা নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে স্কয়ার হাসপাতালে এক রাত কাটিয়েছিলাম। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তৌহিদুজ্জামান এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে 'বল্গক' বা রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা আছে কি-না তা ধরা পড়ে। পরবর্তী সময়ে গ্যাস্ট্রোএনথলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক 'কোলনোস্কপি' বা অন্ত্রনালিতে কোনোরূপ ক্যান্সার জাতীয় 'পলিপ' আছে কি-না তা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের 'কোলন ক্যান্সারে'র কারণে এখন দেশবাসীর এ রোগ সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও হাঙ্গার প্রজেক্টের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ১৬ অক্টোবর নিউইয়র্ক এসে পেঁৗছাই। পূর্বনির্ধারত সময় অনুযায়ী ১৯ তারিখে বিখ্যাত বেথ-ইসরায়েল হাসপাতালে উপস্থিত হই কোলনোস্কপির জন্য। মরক্কো প্রবাসী ডা. মার্ক ওবাদিয়া 'প্রসিডিউর'টি সম্পন্ন করার আগেই আমার সঙ্গে বসেন। তিনি কী করবেন তা আমাকে বুঝিয়ে বলেন এবং আমার কাছ থেকে সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নেন। যদিও এটি একটি অতি সাধারণ প্রসিডিউর, তবুও ধৈর্য সহকারে তিনি আমার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং এর ঝুঁকি সম্পর্কে আমাকে বুঝিয়ে বলেন। বিশেষত অন্ত্রনালিতে যদি কোনো ছিদ্র হয়, যার ঝুঁকি নেই বললেই চলে, তাহলেও আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং আমার ওপর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে। তিনি আমাকে রক্তক্ষরণের ঝুঁকির কথাও বলেন। একই সঙ্গে রোগী হিসেবে আমার কী কী অধিকার আছে সে সম্পর্কিত ১১ পৃষ্ঠার একটি 'প্যাসেন্টস বিল অব রাইটস' আমাকে ধরিয়ে দেন।
আমি রক্ত তরলীকরণ ওষুধ মাত্র চারদিন আগে খাওয়া বন্ধ করেছি। তাই তিনি আমাকে হাসতে হাসতে বলেন, আমার যেন কোনো বড় 'পলিপ' না থাকে! আমিও হাস্যচ্ছলে উত্তর দিই, এ ব্যাপারে আমি 'প্রমিজ' করছি। কিন্তু জেনারেল অ্যানেস্থেশিয়ার মাধ্যমে ১৫ মিনিটে পরিচালিত প্রসিডিউরটি শেষে তিনি আমাকে বললেন, আমার অন্ত্রনালিতে একাধিক বড় (দুই সেন্টিমিটার সাইজের) পলিপ রয়েছে। রক্তক্ষরণের ভয়ে যা তিনি অপসারণ করেননি। তিনি আমাকে আরেকটি কোলনোস্কপি করার পরামর্শ দেন। তবে তার দশ দিন আগে আমি যেন রক্ত তরলীকরণ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করি।
ইতিমধ্যে আমার জন্য নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করার জন্য ২১ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। প্রসঙ্গত, নিউইয়র্ক পেঁৗছেই ১৭ তারিখে আমি দীর্ঘ দিনের পরিচিত কার্ডিওলজিস্ট ডা. মার্ক নাচামির পরামর্শ নেই। তিনিই তার বন্ধু ডা. ফ্রেডরিক ফাইটের সঙ্গে, যিনি ১৯৯৮ সালে আরেকবার আমার এনজিওগ্রাম করেছিলেন, এবারের এনজিওগ্রামেরও সময় নির্ধারণ করে দেন। ডা. নাচামি ডা. ওবাদিয়ার সঙ্গেও কথা বলেন। ডা. ওবাদিয়া রক্ত তরলীকরণ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করার চার দিনের মাথায় রক্তক্ষরণের ভয়ে আমার কোলনোস্কপি করতে রাজি ছিলেন না। আমার সময়ের অভাব এবং ডা. নাচামির আমার পক্ষে ওকালতির কারণেই তিনি শেষ পর্যন্ত রাজি হন। তবে তিনি আমাদের রক্তক্ষরণের ঝুঁকির কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি।
উলেল্গখ্য, ডা. নাচামি স্কয়ার হাসপাতালে ডা. তৌহিদুজ্জামানের প্রদত্ত চিকিৎসা পর্যালোচনা করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আমাকে বলেন, তিনিও ওই অবস্থায় আমাকে একই চিকিৎসা দিতেন। তবে তিনি রক্ত তরলীকরণ ওষুধের সঙ্গে আমাকে অ্যাসপ্রিন খেতে দিতেন। ডা. তৌহিদুজ্জামানের প্রশংসা শুনে আমি পুলকিত হয়েছি, কারণ আমার কাছেও মনে হয়েছে তিনি একজন ভালো ডাক্তার এবং তিনি আমাকে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে চিকিৎসা দিয়েছেন।
এরই মধ্যে আমার দ্বিতীয় ছেলে মাহফুজ, যে শিকাগো শহরে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত, ছেলেবউ ও চার বছরের নাতনিসহ নিউইয়র্কে এসে পেঁৗছেছে। মাহফুজ ও আমার স্ত্রী তাজিমাকে সঙ্গে নিয়ে ১৯ অক্টোবর আমি যথাসময়ে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেঁৗছাই। সেখানে আরেক ধরনের অভিজ্ঞতা। ডা. ফাইট তার সহযোগী ডাক্তারকে নিয়ে এসে আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ খোশগল্প করলেন। ১৯৯৮ সালে সম্পন্ন করা এনজিওগ্রামে কী পাওয়া গিয়েছিল এবং একটি রক্তনালিতে যে 'বেলুনিং' করা হয়েছিল তাও আমার সঙ্গে শেয়ার করলেন। অতীতের একটি 'সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক' সত্ত্বেও আমি এখনও যে সুস্থ আছি তা বলে আমাকে ভরসা দিলেন। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন যে, এনজিওগ্রাম করা এখন অনেকটা ডাল-ভাতের মতো, এতে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। এখানেও আমাকে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হলো।
আমার মনে হয়, এখানেই বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের ডাক্তারদের তফাত। আমাদের খুব কম ডাক্তারই প্রস্তুতি নিয়ে রোগী দেখেন এবং রোগীদের সময় দেন, যদিও যোগ্যতা-দক্ষতার দিক থেকে তাদের অনেকেই বিদেশিদের থেকে কম নন। পূর্ব প্রস্তুতির জন্য তাদের কাছে কোনো ফাইলপত্রও থাকে না। আমি শুনেছি এমনকি স্কয়ারের মতো আধুনিক হাসপাতালেও কম্পিউটারে ধারণ করা ফাইল বেশি দিন সংরক্ষণ করা হয় না (আশা করি স্কয়ার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে)। এ ছাড়াও আমাদের অনেক চিকিৎসকের জন্য ডাক্তারি পেশা মূলত একটি ব্যবসা, সেবা প্রদানের ব্রত নিয়ে অনেকেই, অতি স্বল্পসংখ্যক ব্যতিক্রম ছাড়া কাজটি করেন না। রোগীর সন্তুষ্টি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নয়, অনেকে রোগীর সঙ্গে কথাই বলেন না। কোনো প্রশ্ন করলে অনেকে বিরক্ত হন, এমনকি ধমকও দেন। রোগী নিম্নবিত্তের হলে তারা প্রয়োজনীয় সেবা তো পানই না, বরং অনেক সময় ডাক্তারের এবং তাদের সহযোগীদের দুর্ব্যবহারেরও শিকার হন।
আমাদের দেশে আমি নিজে একাধিক খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখেছি যাদের চেম্বার মূলত পণ্য উৎপাদনের কারখানার মতো 'অ্যাসেম্বলি লাইন'। ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকার পর একাধিক জুনিয়র ডাক্তার রোগীদের কাছ থেকে কিছু তথ্য নেন, এরপর একই বা অন্য একটি গ্রুপ কিছু রুটিন পরীক্ষা করে এবং সর্বশেষে কয়েক মিনিট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথা শুনে সাধারণত একটি লম্বা প্রেসক্রিপশন এবং নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আরও কিছু নতুন টেস্ট-পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে তারা প্রস্থান করেন। ডাক্তারদের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অশুভ ও অনৈতিক ব্যবসায়িক আঁতাতের কথা এখন সর্বজনবিদিত। দুর্ভাগ্যবশত চিকিৎসকদের নিবন্ধন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে কিছু করে না এবং করতে আগ্রহীও নয়। ডাক্তারদের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট প্রদানের এবং অস্ত্রোপচার করার অভিযোগ প্রায় সর্বজনীন। আমি নিজে অন্তত দু'জন রোগীর কথা জানি, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের কারণে যাদের মৃত্যু ঘটেছে। এ ছাড়াও আমাদের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কথায় কথায় অনৈতিকভাবে ধর্মঘটের আশ্রয় নেন। আমার আশঙ্কা, চিকিৎসাও যে একটি সেবাদানমূলক পেশা সে ধারণাই যেন আজ আমাদের দেশে বহুলাংশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও এ সমস্যা যে নেই তা বলা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, পপ আইকন মাইকেল জ্যাকসনের ডাক্তার ডা. কনরাড ম্যারির বিরুদ্ধে 'ইনভলন্টারি ম্যানস্লটার' বা অনিচ্ছাকৃত হত্যা মামলার মূল ইস্যুও তা-ই। ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে ডা. ম্যারি মাইকেল জ্যাকসনকে তার মৃত্যুর আগে ঘুমের জন্য প্রতি রাতে 'প্রপোফল' নামের অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত হয় এমন এক ধরনের 'অ্যানেস্থেসিয়া' দিতেন। শেষ পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত প্রপোফল গ্রহণ এবং অন্য দুটি ওষুধের সঙ্গে এর প্রতিক্রিয়ার কারণেই জ্যাকসনের মৃত্যু ঘটে। ডা. ম্যারির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, জ্যাকসনের সঙ্গে তার ডাক্তার-রোগীর পরিবর্তে এক ধরনের চাকরিদাতা-চাকরিগ্রহীতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে ডা. ম্যারি অর্থের বিনিময়ে জ্যাকসনকে চিকিৎসা দিতেন। মাইকেল জ্যাকসনকে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ডা. ম্যারির প্রধান লক্ষ্য ছিল না অর্থাৎ চিকিৎসক হিসেবে তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। জুরির মাধ্যমে বিচারের ভিত্তিতে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি বিচারালয় গত ৭ নভেম্বর ডা. ম্যারিকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রমাণ করেছেন যে, ডাক্তার-রোগীর মধ্যে এমন ব্যবসায়িক সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
হাসপাতালে পেঁৗছার কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন এবং তিনজন নার্স-টেকনিশিয়ান মিলে, যারা সবাই নারী, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। প্রস্তুতির পর ডা. ফাইট ও তার সহযোগী এনজিওগ্রাম সম্পন্ন করলেন। এর আগে আমাকে এক ধরনের ওষুধ দেওয়া হলো, যার কারণে আমি এনজিওগ্রাম করার সময় জাগ্রত ছিলাম; কিন্তু কোনোরূপ ব্যথা অনুভব করলাম না। বস্তুত আমি টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম কীভাবে আমার শরীরে প্রবেশ করানো 'ক্যাথাটার' আমার হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে প্রবেশ করে রক্ত প্রবাহে প্রতিবদ্ধকতা আছে কি-না তা অনুসন্ধান করছে। প্রসিডিউরটি শেষের পর বহু কষ্ট করে নার্সরা আমার রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন। এরপর আমাকে পর্যবেক্ষণ রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরই মধ্যে ডা. ফাইট ও তার সহযোগী এসে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে ব্রিফ করেন, আমার ডানপাশের একটি রক্তনালিতে ৯৯ শতাংশ এবং আরেকটিতে ৬০ শতাংশ বল্গক পাওয়া গেছে। তবে ডাক্তার বাইপাস বা স্টান্ট করার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ ৭০ শতাংশ বল্গক না হলে তারা স্টান্ট করেন না। আর ৯৯ শতাংশ বল্গকের ক্ষেত্রে অনেকটা প্রাকৃতিক বাইপাস হয়ে গেছে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট রক্তনালিতে কয়েকটি শাখা-প্রশাখা গজিয়েছে। যদিও এনজিওগ্রাম করার জন্য এখন আর হাসপাতালে থাকতে হয় না, রক্তক্ষরণের কারণে তারা আমাকে পর্যবেক্ষণের জন্য রাতে হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
সন্ধ্যায় ডা. নাচামি হাসপাতালে এসে ডাক্তারদের এবং আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আমাকে অ্যাসপ্রিন ও রক্ত তরলীকরণ ওষুধ খাওয়া আবার শুরু করতে বলেন। একই সঙ্গে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ২০ থেকে ৮০ মিলিগ্রামে বাড়িয়ে দেন। এ ছাড়াও আমার জীবনযাত্রা প্রণালি (যেমন, ব্যায়াম করা) এবং খাদ্যাভ্যাস বদলানোর (যেমন গরু-ছাগলের মাংস না খাওয়ার) ওপর গুরুত্ব অরোপ করেন।
লক্ষণীয়, নারী-পুরুষের সমতার ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমার এ সীমিত অভিজ্ঞতা থেকেই দেখা যায় যে, উচ্চ বেতনসম্পন্ন পেশায় সে কাঙ্ক্ষিত সমতা এখনও অর্জিত হয়নি। এখনও নার্স-টেকনিশিয়ানদের অধিকাংশই নারী এবং ডাক্তারদের প্রায় সবাই পুরুষ। আমার মনে আছে, সত্তরের প্রথমদিকে যখন প্রথম আমেরিকায় এসে ক্লারমনট গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হই, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে কয়েকটি অফিসে কয়েকজন পুরুষকে পরিবেষ্টিত করা বহু নারী সাপোর্ট স্টাফ দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। কিন্তু ৪০ বছরে সাধারণ অফিস-আদালতে উচ্চপদে নারীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়লেও ডাক্তারির মতো উচ্চ বেতনসম্পন্ন পেশায় বড় ধরনের পরিবর্তন এখনও তেমন আসেনি।
অবশেষে আমি ডা. ওবাদিয়ার তত্ত্বাবধানে ২ নভেম্বর দ্বিতীয়বার কোলনোস্কপি করাই এবং তিনি বড় সাইজের দুটি পলিপ অপসারণ করেন। সৌভাগ্যবশত বায়োপ্সি করে এগুলোতে ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। এ সুখবর নিয়ে দেশে ফিরলেও প্রতি মুহূর্তেই আমাকে এখন মনে রাখতে হচ্ছে, আমার হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতার অবনতি ঘটেছে এবং আমাকে আরও সাবধান হতে হবে। একই সঙ্গে আমাকে প্রতিবছর কোলনোস্কপি করাতে হবে। প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞরা পঞ্চাশোর্ধ্ব সব ব্যক্তিরই কোলনোস্কপি করার পরামর্শ দেন।
উলেল্গখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার এবং চিকিৎসাসেবার খরচ দিন দিন আকাশচুম্বী হচ্ছে। এখন বীমা ছাড়া খুব কম লোকই গুরুতর অসুস্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে, যে কারণে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বেকারদের স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা দেওয়ার জন্য রিপাবলিকানদের সঙ্গে 'যুদ্ধে' লিপ্ত হতে হয়েছে। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার আকাশচুম্বী খরচের কারণে সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মধ্যকার দূরত্ব ক্রমাগতভাবে প্রকট হচ্ছে। তবে নিম্নবিত্তের কোনো মেধাবী সন্তান যদি ব্যয়বহুল নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে এবং যা হওয়া সম্ভব, তাহলে পরিবারের আর্থিক দৈন্য তার লেখাপড়ার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তেমনিভাবে কোনো কপর্দকহীন বাস্তুহারাও যদি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাজির হয়, তাকেও হাসপাতাল সেবা দিতে বাধ্য। এ ছাড়া বাস্তুহারাদেরও সরকারি ও বেসরকারি উদোগে এখনও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক

No comments

Powered by Blogger.