কবে জাগবে মানবিক বোধ! by সাকিলা মতিন মৃদুলা
'৯টা সিটও নেবেন। অন্য সিটেও মেয়ে বলে বাড়তি সুবিধা খুঁজবেন। সমান অধিকার বলে চিৎকার করবেন, আবার মেয়ে বলে সুযোগও নেবেন।' ভিড়ের ভেতর একটু সরে দাঁড়াতে বলায় এতগুলো মন্তব্য কিংবা বক্তব্য। 'ইস, যদি মেয়ে হতাম! প্রমোশন কনফার্ম।' 'আপনাদের কত সুবিধা! একটু মিষ্টি করে কথা বললেই কাজ হয়ে যায়।' শুধু কি বাসের ভিড় কিংবা কর্মস্থল? শিক্ষাজীবনও ব্যতিক্রম নয়। ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা_ 'ও তো ফার্স্টক্লাস পাবেই। যেভাবে মিষ্টি করে কথা বলে, টিউটোরিয়ালে তো ফুল মার্কস।'
এরা কারা? আর যা-ই হোক এরা সুস্থ মানুষ নয়, ব্যক্তিত্ববান পুরুষও নয়। পুরুষ হলে তো মানুষ হতো। তাহলে মানবিক আচরণ, বিবেক আর সুরুচিবোধ থাকত।
বিষয়টা এখানে নারী কিংবা পুরুষের নয়। বিষয়টা মানবিকতার। অমানবিক, অশোভন আচরণ, হিংস্র্র্র্রতা নারী কিংবা পুরুষ কারও কাছে কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। অন্যায় তো অন্যায়ই। বাসের ভিড়ে নারীর অশোভন দৃষ্টিতে পুরুষ যেদিন অস্বস্তিবোধ করবে কিংবা নারী যখন ভিড়ের ভেতর দুর্বল পেয়ে পুরুষের সুযোগ নিতে চাইবে; অবশ্যই পুরুষের জন্য আলাদা সিট করে দেওয়ার প্রয়োজন হবে।
পুরুষগুলো ভিড়ের ভেতর যতটা সহজে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে, নারীরা পারছে না। যদিও এই ব্যর্থতার দায়িত্ব সমাজব্যবস্থার, তারপরও দায়ভার নিতে হচ্ছে পুরোপুরি নারীকেই। কৈশোরে পা দেওয়ার আগেই ছোট হয়ে যাওয়া পৃথিবী হঠাৎ করেই বড় হয়। খুলে যায় দীর্ঘদিনের বন্ধ দরজা-জানালা। স্কুল-কলেজ আর বাসার গণ্ডিতে আবদ্ধ মেয়েগুলো খোলা প্রান্তরে যুদ্ধে নামে। ঘুড়ির নাটাই, ক্রিকেটের ব্যাট কিংবা পায়ে ফুটবল ব্যালেন্স করবার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। কিন্তু বাস্তবতায় জীবনকে ব্যালেন্স করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হোঁচট খাবারই কথা। খাচ্ছেও তাই। চলন্ত বাস থেকে নামতে মেয়েগুলো তাই ব্যর্থ। ড্রাইভার কিংবা হেলপারের মৃদু ধমক 'তাড়াতাড়ি নামেন। বাম পা আগে দেন। বাসে ওঠেন কেন?' তাই বলে কি মেয়েরা বাসে উঠবে না? মাথাব্যথা হলে মাথা যেমন কাটার নয় তেমনি বাসে ওঠাও বন্ধ হওয়ার নয়।
অযাচিত মন্তব্য কিংবা আচরণ দুটোই বিধিগতভাবে নির্যাতন। 'যদি আমাদের সঙ্গে চা খান, তবে সব কাজ সময়মতো পেয়ে যাবেন।' অফিসের সহকর্মীর এহেন মন্তব্য হুমকি, নির্যাতন; নাকি অধিকার বোধ? ঊর্ধ্বতন হওয়ার সুযোগে নারী সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে কাজ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলে অপমান ঊর্ধ্বর্তনের নিচু মানসিকতার পরিচয়, পুরুষত্বের নয়। যৌক্তিকতা এবং যোগ্যতায় হেরে যাওয়ার পর আনঅফিসিয়াল আচরণ, সম্বোধনে তিরস্কারের স্পর্ধা কি শুধু নারীর প্রতিই সম্ভব? হয়তো কিংবা হয়তো না। ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা_ এরা পুরুষ নয়। পুরুষ হলে তো মানুষ হতো। মানুষ হলে বোধোদয় হতো। যারা মানুষ তাদের বোধ আছে। আছে বিবেক, নৈতিকতা এবং দৃঢ়তা।
মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অনুপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় বৈষম্য। কখনও নারীর সঙ্গে পুরুষের, কখনও পুরুষের সঙ্গে নারীর। সবকিছুর মূলে ভালোবাসার অনুপস্থিতি। কোথায় ভালোবাসা? না আছে নিজের কাছে নিজের প্রতি, না আছে অপরের জন্য অপরের প্রতি। যার যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই চলছে। আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে। পাশের মানুষ, পাশের বাড়ি, পাশের গাড়ি কোনো কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ নেই। পথচারীর গায়ের ওপর রিকশা, রিকশার গায়ের ওপর গাড়ি, গাড়ির ওপর বাস, বাসের ওপর ট্রাক। একের ভুল অপরের মাশুল। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে অন্ধত্ব। বৈষম্য, প্রতিশোধ কিংবা প্রবঞ্চনা অমানুষের কাজ, নারী কিংবা পুরুষের নয়। শাসনের নামে শোষণ কিংবা শারীরিক, মানসিক নির্যাতন কেবল অমানুষের দ্বারাই সম্ভব। নারী কিংবা পুরুষ পরিচয় এদের ক্ষেত্রে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির জোরে বঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুর পরিহাসে বঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ জুড়ে নারীর অবস্থান। ক্ষুদ্র হয়েও বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধুর একেবারে দোরগোড়ায় আজ নারী। পুরুষদেরও সিন্ধুর বাইরে রাখার ইচ্ছে নেই। কেন থাকবে? ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা। সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষের পৃথিবীর বিশাল সিন্ধুতে তাই মানুষের অধিকার সর্বাগ্রে। পুরুষ কিংবা নারী এখানে বিষয় নয়। বিষয় মনুষ্যত্বের, বোধের এবং নৈতিকতার। বোধসম্পন্ন মানুষমাত্রই জানে এবং বোঝে_ একজন নারী কতটা অসহায়ত্বের মাঝেও সহায়হীন না হয়ে টিকে থাকে,বেঁচে থাকে । ঠিক যেন অপরাজিতা। পরাজিত হয়ে হয়েও অপরাজিত। অফিস, বাসা, রাস্তা সর্বত্রই রয়েছে কটূক্তি, অসহযোগিতা, অসম্পূর্ণতা। এরই মাঝেই বেঁচে থাকা। বাঁচার মতো বাঁচা। দৃঢ়চিত্তে, শক্তভাবে হেঁটে যাওয়া পথ থেকে প্রান্তরে। অসুন্দরের মাঝে সুন্দরকে আলিঙ্গন করা। বাসের ভিড়ে, কর্মস্থলে অসংখ্য মজা নেয়া আর মজা করা পুরুষের ভিড়ে একটি দুটি মানুষ পুরুষ ঠিক ঠিক খুঁজে পাওয়া। সংখ্যায় কম হলেও বিশালতা আর দৃঢ়তায় ওরা অনড়, অপ্রতিদ্বন্দী। অপরাজিতা আর অপরাজিত মেয়েগুলোর যথার্থ বন্ধু । অন্যায় আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার বন্ধুদের সঙ্গে করে মেয়েরা ঠিক ঠিক হেঁটে যায় এলোমেলো পথে। মজা করা পুরুষরা পিছিয়ে যায়, ভয় পায়। যাবেই তো! সবার উপরে যে মানুষ সত্য।
বিষয়টা এখানে নারী কিংবা পুরুষের নয়। বিষয়টা মানবিকতার। অমানবিক, অশোভন আচরণ, হিংস্র্র্র্রতা নারী কিংবা পুরুষ কারও কাছে কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। অন্যায় তো অন্যায়ই। বাসের ভিড়ে নারীর অশোভন দৃষ্টিতে পুরুষ যেদিন অস্বস্তিবোধ করবে কিংবা নারী যখন ভিড়ের ভেতর দুর্বল পেয়ে পুরুষের সুযোগ নিতে চাইবে; অবশ্যই পুরুষের জন্য আলাদা সিট করে দেওয়ার প্রয়োজন হবে।
পুরুষগুলো ভিড়ের ভেতর যতটা সহজে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে, নারীরা পারছে না। যদিও এই ব্যর্থতার দায়িত্ব সমাজব্যবস্থার, তারপরও দায়ভার নিতে হচ্ছে পুরোপুরি নারীকেই। কৈশোরে পা দেওয়ার আগেই ছোট হয়ে যাওয়া পৃথিবী হঠাৎ করেই বড় হয়। খুলে যায় দীর্ঘদিনের বন্ধ দরজা-জানালা। স্কুল-কলেজ আর বাসার গণ্ডিতে আবদ্ধ মেয়েগুলো খোলা প্রান্তরে যুদ্ধে নামে। ঘুড়ির নাটাই, ক্রিকেটের ব্যাট কিংবা পায়ে ফুটবল ব্যালেন্স করবার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। কিন্তু বাস্তবতায় জীবনকে ব্যালেন্স করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হোঁচট খাবারই কথা। খাচ্ছেও তাই। চলন্ত বাস থেকে নামতে মেয়েগুলো তাই ব্যর্থ। ড্রাইভার কিংবা হেলপারের মৃদু ধমক 'তাড়াতাড়ি নামেন। বাম পা আগে দেন। বাসে ওঠেন কেন?' তাই বলে কি মেয়েরা বাসে উঠবে না? মাথাব্যথা হলে মাথা যেমন কাটার নয় তেমনি বাসে ওঠাও বন্ধ হওয়ার নয়।
অযাচিত মন্তব্য কিংবা আচরণ দুটোই বিধিগতভাবে নির্যাতন। 'যদি আমাদের সঙ্গে চা খান, তবে সব কাজ সময়মতো পেয়ে যাবেন।' অফিসের সহকর্মীর এহেন মন্তব্য হুমকি, নির্যাতন; নাকি অধিকার বোধ? ঊর্ধ্বতন হওয়ার সুযোগে নারী সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে কাজ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলে অপমান ঊর্ধ্বর্তনের নিচু মানসিকতার পরিচয়, পুরুষত্বের নয়। যৌক্তিকতা এবং যোগ্যতায় হেরে যাওয়ার পর আনঅফিসিয়াল আচরণ, সম্বোধনে তিরস্কারের স্পর্ধা কি শুধু নারীর প্রতিই সম্ভব? হয়তো কিংবা হয়তো না। ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা_ এরা পুরুষ নয়। পুরুষ হলে তো মানুষ হতো। মানুষ হলে বোধোদয় হতো। যারা মানুষ তাদের বোধ আছে। আছে বিবেক, নৈতিকতা এবং দৃঢ়তা।
মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অনুপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় বৈষম্য। কখনও নারীর সঙ্গে পুরুষের, কখনও পুরুষের সঙ্গে নারীর। সবকিছুর মূলে ভালোবাসার অনুপস্থিতি। কোথায় ভালোবাসা? না আছে নিজের কাছে নিজের প্রতি, না আছে অপরের জন্য অপরের প্রতি। যার যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই চলছে। আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে। পাশের মানুষ, পাশের বাড়ি, পাশের গাড়ি কোনো কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ নেই। পথচারীর গায়ের ওপর রিকশা, রিকশার গায়ের ওপর গাড়ি, গাড়ির ওপর বাস, বাসের ওপর ট্রাক। একের ভুল অপরের মাশুল। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে অন্ধত্ব। বৈষম্য, প্রতিশোধ কিংবা প্রবঞ্চনা অমানুষের কাজ, নারী কিংবা পুরুষের নয়। শাসনের নামে শোষণ কিংবা শারীরিক, মানসিক নির্যাতন কেবল অমানুষের দ্বারাই সম্ভব। নারী কিংবা পুরুষ পরিচয় এদের ক্ষেত্রে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির জোরে বঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুর পরিহাসে বঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ জুড়ে নারীর অবস্থান। ক্ষুদ্র হয়েও বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধুর একেবারে দোরগোড়ায় আজ নারী। পুরুষদেরও সিন্ধুর বাইরে রাখার ইচ্ছে নেই। কেন থাকবে? ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা। সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষের পৃথিবীর বিশাল সিন্ধুতে তাই মানুষের অধিকার সর্বাগ্রে। পুরুষ কিংবা নারী এখানে বিষয় নয়। বিষয় মনুষ্যত্বের, বোধের এবং নৈতিকতার। বোধসম্পন্ন মানুষমাত্রই জানে এবং বোঝে_ একজন নারী কতটা অসহায়ত্বের মাঝেও সহায়হীন না হয়ে টিকে থাকে,বেঁচে থাকে । ঠিক যেন অপরাজিতা। পরাজিত হয়ে হয়েও অপরাজিত। অফিস, বাসা, রাস্তা সর্বত্রই রয়েছে কটূক্তি, অসহযোগিতা, অসম্পূর্ণতা। এরই মাঝেই বেঁচে থাকা। বাঁচার মতো বাঁচা। দৃঢ়চিত্তে, শক্তভাবে হেঁটে যাওয়া পথ থেকে প্রান্তরে। অসুন্দরের মাঝে সুন্দরকে আলিঙ্গন করা। বাসের ভিড়ে, কর্মস্থলে অসংখ্য মজা নেয়া আর মজা করা পুরুষের ভিড়ে একটি দুটি মানুষ পুরুষ ঠিক ঠিক খুঁজে পাওয়া। সংখ্যায় কম হলেও বিশালতা আর দৃঢ়তায় ওরা অনড়, অপ্রতিদ্বন্দী। অপরাজিতা আর অপরাজিত মেয়েগুলোর যথার্থ বন্ধু । অন্যায় আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার বন্ধুদের সঙ্গে করে মেয়েরা ঠিক ঠিক হেঁটে যায় এলোমেলো পথে। মজা করা পুরুষরা পিছিয়ে যায়, ভয় পায়। যাবেই তো! সবার উপরে যে মানুষ সত্য।
No comments