দাবায় মকাদ্দেসের আরেকটি তামাশা by শাহজাহান কবির

পমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার হয়ে বাংলাদেশে যে খেলাটাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিলেন নিয়াজ মোর্শেদ, সেই দাবা অঙ্গন এখন তামাশার জায়গায় পরিণত হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগের মতো আসর নিয়ে গতকালও ঘটেছে লোক হাসানোর মতো ঘটনা। কাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেলা ৩টায় লিগ শুরু হওয়ার কথা, অথচ খেলোয়াড়রা ফেডারেশন ভবনে গিয়ে জানতে পারলেন খেলা হচ্ছে না।


তার মানে, আগের দিনও ফেডারেশন যেখানে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানাল ১২ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে লিগ, ড্র পর্যন্ত সেরে ফেলা হলো_পরের দিন সবই মিথ্যে, অর্থহীন! অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস হোসেন মনে করেন এমন হওয়া খুবই স্বাভাবিক, এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই, 'হঠাৎ করে একটা সমস্যা তো হতেই পারে। দেখলাম ব্যানার-ট্যানার ঠিক নেই, ছুটির দিন দেখে ওসব কোথাও থেকে ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া স্পনসরেরও একটু সমস্যা ছিল, প্রধান অতিথিও ঠিক হয়নি, বিদেশি খেলোয়াড়রাও সবাই এসে পেঁৗছায়নি_তাই একদিন পিছিয়ে দিয়েছি খেলা।'
গত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাই দাবায় হুট করে একদিন খেলা স্থগিত করে দিয়েছিলেন মোকাদ্দেস। কারণ হিসেবে জানানো হলো, ফেডারেশনের একমাত্র কম্পিউটারটি 'ক্র্যাশ' করেছে, সেটি সারানো যায়নি তাই খেলা চালানো সম্ভব নয়। সেই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল আরেক নাটক দিয়ে। উদ্বোধনী দিনে দাবাড়ুরা এসে বসে আছেন, কিন্তু খেলা শুরু করা যাচ্ছে না। দাবার বোর্ড, ঘুঁটি, ঘড়িগুলো যে আলমারিতে সেটাতে তালা। চাবি মোকাদ্দেস হোসেনের পকেটে। তিনি ব্যক্তিগত সমস্যায় পড়ে ফেডারেশনে আসতে পারছেন না, তাই খেলাও শুরু করা যাচ্ছে না!
এবার শুধু এক দিনের জন্য খেলা স্থগিত নয়, পুরো টুর্নামেন্টই তিনি পিছিয়ে দিয়েছেন। ব্যানার নেই, প্রধান অতিথি ঠিক হয়নি, স্পনসরের সমস্যা, বিদেশি খেলোয়াড়দের সবাই আসেননি বলে যে কারণগুলো তুলে ধরছেন তিনি, তাতে তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সামান্যতম বাধলেও, অযোগ্যতা এবং অদক্ষতা নিয়ে কারো মনে কোনো প্রশ্ন জাগবে কি না সন্দেহ।
স্পনসর চূড়ান্ত করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারা যেকোনো সংগঠকের দক্ষতার প্রাথমিক মাপকাঠি। মোকাদ্দেস সেখানে ব্যর্থ এবং হাস্যকরভাবে সব দায় খোদ স্পনসরের কাঁধে চাপাতেও সচেষ্ট। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মোকাদ্দেস হোসেনের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে স্পনসর অনির্বাণ হোল্ডিংসের কর্মকর্তা আজিজুর রহমান সিরাজীকে ফোন করলে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে পরিচয় দিলেও খেলা পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরেকটি নম্বর দিয়ে অনুরোধ জানান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কিন্তু অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও কথিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফোন ধরেননি।
লিগে অংশ নিতে যাওয়া ১০টি দলের মধ্যে ভারতীয় খেলোয়াড়দের রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে মোহামেডান, বিমান, নারায়ণগঞ্জের প্রিতম-প্রিজম ক্লাব ও তিতাস। কিন্তু কোনো দলের পক্ষ থেকেই বিদেশি খেলোয়াড়রা আসেননি বলে টুর্নামেন্ট পিছিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠেনি। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে এটাকেও টুর্নামেন্ট পেছানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অবলীলায়। পাড়ার কোনো সংগঠকও বোধহয় ব্যানার না টানাতে পারাটাকে কারণ হিসেবে দেখাতে লজ্জা পেতেন, জাতীয় দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তা পাননি! উদ্বোধনের দিনেও প্রধান অতিথি ঠিক করতে না পারা তাঁর কাছে আমলে নেওয়ার মতো কোনো ব্যাপারই মনে হয় না। হুট করে পিছিয়ে দেওয়া যায় প্রিমিয়ার লিগের মতো আয়োজন। কাল সন্ধ্যায় অবশ্য ফেডারেশন থেকে পাঠানো নতুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার থেকে আসর শুরু করার আরেকটি ঘোষণা এসেছে। এক দিন দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করার নূ্যনতম সৌজন্যটুকুও দেখানো হয়নি সেখানে!
কাল মায়ের হাত ধরে বাড্ডা থেকে ফেডারেশনে এসেছিল খুদে দাবাড়ু ফাহাদ রহমান। খেলা হবে না শুনে তার চোখ ছলছল, মায়ের কণ্ঠও ভেজা, 'দীপু ভাইকে (মাসুদুর রহমান মলি্লক দীপু, যুগ্ম সম্পাদক) বললাম, আমাদের আগে থেকে জানালে তো এত কষ্ট করে আসতে হতো না। তিনি বললেন, আরে আমিই তো জানতাম না, আপনাদের জানাব কিভাবে!'

মোকাদ্দেস আছেন বলে...
* দুই গ্র্যান্ড মাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব এবং এনামুল হোসেন রাজীব প্রায় দুই বছর ধরে দাবা থেকে বিচ্ছিন্ন।
* বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে কোনো গ্র্যান্ড মাস্টার ছাড়া। গত বছরের সেই আসরেই স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে ফল।
* 'গ্র্যান্ড মাস্টার্স দাবা' এবং 'আন্তর্জাতিক মাস্টার্স দাবা' বন্ধ। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে স্পনসর ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স।
* স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক অনাস্থা জানানোয় হচ্ছে না স্কুল দাবা।
* নভেম্বরে হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ এখনো শুরুর অপেক্ষায়।
* বছর শেষ হতে চলল, অথচ হয়নি জাতীয় দাবা।
* জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি থেকে কোনো নতুন প্রতিভা উঠে আসেনি। কাজ সারা হয় জুনিয়র, সাব-জুনিয়র চ্যাম্পিয়নদের মতো পরিচিতদের নিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.