৩৬(!)তম জন্মদিনঃ হ্যাপি বার্থ ডে টু হুমায়ূন ভাই by সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

জ ১৩ নভেম্বর, আজ কাজল ওরফে বাচ্চু’র জন্মদিন। বাবার স্নেহের কাজল আর মায়ের আদরের বাচ্চু আমাদের নেত্রকোনার প্রিয় হুমায়ূন ভাই, যিনি বাংলা ভাষার জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। আজ তাঁর ৬৩তম জন্মদিন। জন্মদিনে তিনি দেশে নেই,  নিউইয়র্কে। তাই আজ নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝলমলে রোদ। শুধু রোদই নয়, আজ রাতে আমেরিকার আকাশ আলোকিত করবে ফুটফুটে জোছনা।

কারণ, তিনি ও তাঁর পুত্র নিষাদ সাথে করে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের চাঁদ। খুব চমৎকার করে সেই দুঃখিনী চাঁদের কথা বলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। নিষাদ “আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, ‘বাবা, দেখো, বাংলাদেশের চাঁদটা এখানে চলে এসেছে। আকাশে কত বড় চাঁদ!’ তাকিয়ে দেখি, মেপলগাছের ফাঁকে নিউইয়র্ক নগরে সম্পূর্ণ বেমানান এক চাঁদ নির্লজ্জের মতো উঠে বসে আছে। তার তো থাকার কথা বাঁশবাগানে মাথায়। আমি পুত্রকে বললাম, ‘বাংলাদেশের চাঁদ এখানে কীভাবে চলে এসেছে?’ সে গম্ভীর গলায় বলল, ‘আমরা যখন প্লেনে করে এসেছি, তখন প্লেনের পেছনে পেছনে চলে এসেছে। চাঁদটা তোমাকে খুব ভালোবাসে তো, এই জন্য এসেছে।’ (নিউইয়র্ক থেকে হুমায়ূন আহমেদ)

শুধু চাঁদের কথাই নয়; বলেছেন এবং লিখছেন- নিজের কথা, ক্যান্সারের কথা, শাওনের কষ্ট, মাজহারের ছোটাছুটি, প্রবাসী বাঙালিদের কাহিনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দশ হাজার ডলারের চেক, পুত্র নিষাদের রাগ, গাজী কাশেম উপন্যাস `ও আমার আমেরিকা রে`, আমেরিকার চিকিৎসার পদ্ধতি, চিকিৎসার খরচ, সেখানকার হাসপাতালের চিত্র।

এসব পড়ে পাঠকেরা আরো বেশি তাঁর নৈকট্য লাভ করছেন। যেমন, ক্যান্সারে চিকিৎসাধীন আরেক জন, যিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার--রফিকুল ইসলাম, ভ্যাঙ্কুভার থেকে ফোন করে জানান তাঁর প্রতিক্রিয়া। আবার কেউ কেউ ক্যাম্পেইন করছেন- হুমায়ূন আহমেদকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্যও।

হুমায়ূন আহমেদের সাম্প্রতিক লেখালেখির পাশাপাশি তার স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারছি-- অনেক অজানা জীবন যাপনের কথা। যেমন তাঁর সিগারেট টানা নিয়ে নানান দুঃখের কিংবা মজার কথা।

তাঁর ছোটভাই, আমাদের বন্ধু আহসান হাবীব তার `দাদাভাই` সম্পর্কে লিখেছেন- `নন স্মোকার`। এটা একটা ভালো খবর। তার যখন বাইপাস অপারেশন হলো; দেশে ফিরে এসে সে দিব্যি সিগারেট খেতে শুরু করল। কে একজন তাকে ধরল- স্যার, আপনি সিগারেট খাচ্ছেন? -হ্যাঁ ...এত টাকা খরচ করে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি কি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতে?-- তার সরল উত্তর!``

``একদিন তার বাসায় গিয়ে দেখি সে কাকে যেন বোঝাচ্ছে সিগারেটের উপকারিতা সম্পর্কে। সিগারেটের নিকোটিন যে শরীরের অনেক উপকারও করে থাকে তার ওপর রসায়নের অ্যাঙ্গেলে ... জটিল এক লেকচার ... অনেকেই মুগ্ধ হয়ে শুনছে। আমি তার দু`দিন আগে সিরিয়াসলি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। তার লেকচার শুনে বাইরে এসে আবার পাঁচটা বেনসন কিনলাম।``  (জন্মদিন/ আহসান হাবীব, দৈনিক সমকাল, নভেম্বর ১১, ২০১১। ঢাকা )

আজ তাঁর শুভ জন্মদিনে অন্যপ্রকাশ বের করছে- আত্মজীবনীমূলকগ্রন্থ ‘রং পেন্সিল’। আজ একই দিনে বিশ্ব বিখ্যাত বইয়ের দোকান ‘আমাজন ডট কম’-এ যুক্ত হচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ। শুরু হলো শুভদিন- একজন বাঙালি লেখকের আন্তর্জাতিক যাত্রা। কারণ, আমাজনডটকমে এটি হবে প্রথম কোনও বাংলাদেশি লেখকের বই বিক্রির কার্যক্রম। জন্মদিনে ডবল অভিনন্দন হুমায়ূন আহমেদকে।

উল্লেখ্য, আজ থেকে ঠিক দু’মাস আগে অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি সস্ত্রীক নিউইয়র্কে এসেছেন বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যে। চিকিৎসা চলছে। ১৮ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের ক্যাট স্ক্যান করা হবে। কুইন্সের জ্যামাইকায় একটি ভাড়া বাড়িতে  সপরিবারে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর আশেপাশেই থাকেন কবি শহীদ কাদরী। তিনিও ভীষণ অসুস্থ। সপ্তাহে তিনদিন রক্ত ডাইলাসিস করাতে হয়। গত আগস্টে শহীদ ভাইকে দেখে এলাম। ফিরে আসার পর এখনো আমাদের টেলিফোনে আড্ডা হয় আনলিমিটেড। তিনিও জানতে চাইলেন হুমায়ূন আহমেদের খবর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে তাঁর সকল অনুরাগীরা উদ্বিগ্ন। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনও তাঁর জন্য ভীষণ উদগ্রীব। ঢাকার কাগজগুলো তাঁকে নিয়ে নানান নিউজ ছাড়াও গত শুক্রবার সাহিত্যসংখ্যা করেছে। হুমায়ূন নিজেও লিখছেন দু’হাতে। এবার ঈদে তাঁর রচিত দু’টি নাটক প্রচার হলো। এটিএন বাংলায় দেখলাম- রহিমার পতিগৃহে যাত্রা। লিখছেন নতুন বই- `নিউ ইয়র্কের আকাশে ঝকঝকে রোদ`।

তিনি আরো জানিয়েছেন, বাসার বেজমেন্টে বসে অর্থভূতের ভৌতিক বাড়ি নিয়ে পুত্র নিষাদের জন্য লিখবেন ‘ভয়ংকর’ গল্প।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের জামাইকায় তিন রুমের বাসায় এখন তাঁর ভাষায় অস্থায়ী ‘ষষ্ঠ’ সংসার। সাথে আছেন সার্বক্ষণিক সঙ্গী আমাদের বন্ধু মাজহারুল ইসলাম। তিনি যেভাবে হুমায়ূনের সেবায়, সঙ্গে, সাহচর্যে, সান্নিধ্যে আছেন, তা সত্যি বিরল দৃষ্টান্ত! সেজন্য, সংখ্য ধন্যবাদ মাজহারকে। মাজহারের মাধ্যমেই প্রতিদিনই সেলফোনে খোঁজখবর পাচ্ছি হুমায়ূন ভাইয়ের। আজ তরল খাবার খেয়েছেন, কাল কেমো দিতে যাবেন। কিছুটা দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছেন। পরশু থেকে মনোনিবেশ করেছেন লেখালেখিতে। কলম রেখে ফাঁকে ফাঁকে রং তুলিতে ছবি আঁকছেন। ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রিয় গোলাম সারোয়ার ভাইয়ের ভাষায় বলতে চাই, হুমায়ূন আহমেদ এখন অমিত আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান। তাই তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি আরো বেশি টের পাচ্ছি, হূদয়ে অনুভব করছি চির সবুজ হুমায়ূন আহমদের সজীবতা। তিনি ছবি আকঁছেন, লিখছেন নাটক, উপন্যাস, আত্মকথা, ভূতের গল্প, কলাম-কাহিনি। তিনি যেন যুবকের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আরো বেশি তারুণ্যদীপ্ত হয়ে উঠেছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে- আজ তাঁর ৬৩তম নয়; যেনো ৩৬তম জন্মদিন।

লেখক: প্রবাসী লেখক
saifullahdulal@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.