রাজনৈতিক ‘সমাজসেবক’ এবং খ্রিষ্টানদের জমি দখল by মাসুদ রানা
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় ‘সমাজসেবক’ রফিকুল ইসলাম ওরফে সিজুর বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তির জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এই ‘সমাজসেবক’ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলামের বড় ভাই। মাইনুল নিজেকে রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় সাংসদ মেহের আফরোজের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন। কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আড়াই শতাধিক খ্রিষ্টান পরিবার শত বছর ধরে বাস করছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সংখ্যালঘু হওয়ায় তাঁরা ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনের শিকার।
কালীগঞ্জের উত্তর ভাদার্ত্তী গ্রামে কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের ত্রিমোড়ের পাশের ১৫ শতাংশ জমি ছিল অমল কস্তার। দীর্ঘদিন আগে তিনি ওই জমি রফিকের কাছে বিক্রি করেন। ওই জমির পূর্ব পাশে গ্যাব্রিয়েল কস্তার ২৪ শতাংশ জমি। তার পূর্ব পাশে বেঞ্জামিন গোমেজের আট শতাংশ জমি।
গ্যাব্রিয়েল কস্তা অভিযোগ করেন, তাঁর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৪ শতাংশ জমি রফিক দখল করে তিন পাশে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। তিনি বাধা দিয়েছেন এবং ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল গাজীপুর আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ২৫ মে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায়। বর্তমানে মামলাটির বিচার চলছে।
আরেক ভুক্তভোগী বেঞ্জামিন গোমেজ অভিযোগ করেন, পৈতৃক সূত্রে তাঁদের ১২ শতাংশ জমি ছিল। বাইপাস সড়ক হওয়ার সময় চার শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি আট শতাংশ জমি গত জুলাই মাসে জোর করে দখল করে পিলার লাগিয়ে দেন রফিক।
রফিকের বিরুদ্ধে জমি দখল ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে বেঞ্জামিন গোমেজ গত ১ আগস্ট কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। কিন্তু প্রতিকার না পাওয়ায় ২৬ সেপ্টেম্বর থানায় আরেকটি মামলা করেন তিনি। এরপর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুবুর রহমান দুই পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেন।
বেঞ্জামিন গোমেজ বলেন, ‘থানায় দুবার অভিযোগ দেওয়ার পরও রফিকের দখল অব্যাহত থাকায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় মামলা করি। জমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণে আদালতের নিষেধ থাকলেও রফিক সেখানে বালু ফেলছেন।’
এলাকায় গেলে ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা ও পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহীম মোল্লা বলেন, ‘বহু বছর ধরে দেখছি, বাইপাস সড়কের ত্রিমোড়ের পাশের ওই জমিগুলোতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন চাষাবাদ করছেন। এত দিন পর কীভাবে ওই জমির মালিক রফিক হয়েছেন, তা আমার জানা নেই।’
একই কথা বললেন গ্রামের একাধিক বাসিন্দা। চা-বিক্রেতা নজরুল ইসলাম ও আলতাফ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি ওই জমিগুলোয় বেঞ্জামিন গোমেজ ও গ্যাব্রিয়েল কস্তার পরিবার চাষাবাদ করেছেন। এখন শুনছি, ওই জমি নাকি রফিকের। এ নিয়ে এলাকায় অনেক বৈঠকও হয়েছে।’
রফিকের জমি দখলের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ মেহের আফরোজের কাছেও অভিযোগ করেছেন। সাংসদ তাঁদের ‘দেখবেন’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার: অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেঞ্জামিন গোমেজ ও গ্যাব্রিয়েল কস্তার জমি দখলের অভিযোগ সত্য নয়। তাঁরা দীর্ঘদিন জমিটির ভোগদখল করলেও জমির প্রকৃত মালিক আমি। তাই সেখানে মাটি ভরাট করাচ্ছি। জমি নিয়ে তাঁদের কখনোই কোনো হুমকি বা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি।’
মাইনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ: স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাই যুবলীগের নেতা মাইনুলই রফিকের শক্তির উৎস। কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, মাইনুল এর আগে কালীগঞ্জের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও হাসপাতালে এক চিকিৎসককে মারধর করেছেন। লোকজন নিয়ে কালীগঞ্জ থানায় ভাঙচুরও চালিয়েছিলেন। থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হওয়ায় গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন মাইনুল। বর্তমানে কালীগঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর, থানায় হামলাসহ আটটি মামলা রয়েছে।
যোগাযোগ করলে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, রফিক গ্যাব্রিয়েল কস্তা ও বেঞ্জামিন গোমেজের জমি দখল করেছেন। তাঁরা দুই ভাই জমি দখল, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করেন না। এর আগে মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে একাধিকবার পুলিশের কাছে ধরাও পড়েছিলেন মাইনুল।’
যুবলীগের নেতা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘মাদক ব্যবসার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে অনেকেই আমার নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসা করে বলে জানতে পেরেছি। আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ অপকর্ম বা মাদক ব্যবসা করে, তাহলে আমার কী করার আছে।’
তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বড় ভাই রফিকের জমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে মাইনুল বলেন, ‘আমার ভাই কোনো জমি দখল করেননি। তিনি ব্যবসা করে ভালো আছেন, তাই মানুষ হিংসা করছে। সাংসদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক থাকায় অনেকেই হিংসার বশবর্তী হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, জমি জবরদখলের অভিযোগ এনে বেঞ্জামিন গোমেজ রফিকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন। ইতিমধ্যে উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, রফিকের ভাই মাইনুলের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের নেতা মাইনুল ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে সাংসদ মেহের আফরোজের পক্ষে কাজ করছেন। ফলে সাংসদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের শক্ত রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সদর উপজেলার মীরের বাজার হয়ে কালীগঞ্জ সদরে ঢুকতেই কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল সড়কে প্রচুর তোরণ দেখা যায়। সাংসদ মেহের আফরোজের বাবা ময়েজউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেগুলো তৈরি করেন রফিক। তোরণের ওপরের অংশে আড়াআড়ি করে টানানো ব্যানারে লেখা ছিল: ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় নেতা শহীদ মো. ময়েজ উদ্দিনের ২৭তম শাহাদাতবার্ষিকীতে কালীগঞ্জ পৌরবাসীর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী—মো. রফিকুল ইসলাম (সিজু), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক।’ ব্যানারের ডান পাশে ছোট করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। আছে সাংসদ মেহের আফরোজ ও রফিকের বেশ বড় আকারের ছবি।
সাংসদের বক্তব্য: গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ মেহের আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খ্রিষ্টান পরিবারের জমি দখলের বিষয়টি আমি জানার পরই পুলিশ পাঠিয়ে দখলের কাজ বন্ধ করিয়েছি। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খ্রিষ্টান পরিবারের যেকোনো সমস্যা আমি গুরুত্ব সহকারে দেখার চেষ্টা করি।’
সাংসদ বলেন, ‘সিজুর ভাই মাইনুল যুবলীগের একজন নেতা। মাইনুলের নামে থানায় একাধিক মামলা থাকায় ও সব সময় পালিয়ে বেড়ায়। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ বা ভালো সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’
গ্যাব্রিয়েল কস্তা অভিযোগ করেন, তাঁর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৪ শতাংশ জমি রফিক দখল করে তিন পাশে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। তিনি বাধা দিয়েছেন এবং ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল গাজীপুর আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ২৫ মে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠায়। বর্তমানে মামলাটির বিচার চলছে।
আরেক ভুক্তভোগী বেঞ্জামিন গোমেজ অভিযোগ করেন, পৈতৃক সূত্রে তাঁদের ১২ শতাংশ জমি ছিল। বাইপাস সড়ক হওয়ার সময় চার শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি আট শতাংশ জমি গত জুলাই মাসে জোর করে দখল করে পিলার লাগিয়ে দেন রফিক।
রফিকের বিরুদ্ধে জমি দখল ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে বেঞ্জামিন গোমেজ গত ১ আগস্ট কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। কিন্তু প্রতিকার না পাওয়ায় ২৬ সেপ্টেম্বর থানায় আরেকটি মামলা করেন তিনি। এরপর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুবুর রহমান দুই পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেন।
বেঞ্জামিন গোমেজ বলেন, ‘থানায় দুবার অভিযোগ দেওয়ার পরও রফিকের দখল অব্যাহত থাকায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় মামলা করি। জমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণে আদালতের নিষেধ থাকলেও রফিক সেখানে বালু ফেলছেন।’
এলাকায় গেলে ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা ও পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহীম মোল্লা বলেন, ‘বহু বছর ধরে দেখছি, বাইপাস সড়কের ত্রিমোড়ের পাশের ওই জমিগুলোতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন চাষাবাদ করছেন। এত দিন পর কীভাবে ওই জমির মালিক রফিক হয়েছেন, তা আমার জানা নেই।’
একই কথা বললেন গ্রামের একাধিক বাসিন্দা। চা-বিক্রেতা নজরুল ইসলাম ও আলতাফ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি ওই জমিগুলোয় বেঞ্জামিন গোমেজ ও গ্যাব্রিয়েল কস্তার পরিবার চাষাবাদ করেছেন। এখন শুনছি, ওই জমি নাকি রফিকের। এ নিয়ে এলাকায় অনেক বৈঠকও হয়েছে।’
রফিকের জমি দখলের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ মেহের আফরোজের কাছেও অভিযোগ করেছেন। সাংসদ তাঁদের ‘দেখবেন’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার: অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেঞ্জামিন গোমেজ ও গ্যাব্রিয়েল কস্তার জমি দখলের অভিযোগ সত্য নয়। তাঁরা দীর্ঘদিন জমিটির ভোগদখল করলেও জমির প্রকৃত মালিক আমি। তাই সেখানে মাটি ভরাট করাচ্ছি। জমি নিয়ে তাঁদের কখনোই কোনো হুমকি বা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি।’
মাইনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ: স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাই যুবলীগের নেতা মাইনুলই রফিকের শক্তির উৎস। কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্র জানায়, মাইনুল এর আগে কালীগঞ্জের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও হাসপাতালে এক চিকিৎসককে মারধর করেছেন। লোকজন নিয়ে কালীগঞ্জ থানায় ভাঙচুরও চালিয়েছিলেন। থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হওয়ায় গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন মাইনুল। বর্তমানে কালীগঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর, থানায় হামলাসহ আটটি মামলা রয়েছে।
যোগাযোগ করলে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, রফিক গ্যাব্রিয়েল কস্তা ও বেঞ্জামিন গোমেজের জমি দখল করেছেন। তাঁরা দুই ভাই জমি দখল, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করেন না। এর আগে মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে একাধিকবার পুলিশের কাছে ধরাও পড়েছিলেন মাইনুল।’
যুবলীগের নেতা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘মাদক ব্যবসার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে অনেকেই আমার নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসা করে বলে জানতে পেরেছি। আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ অপকর্ম বা মাদক ব্যবসা করে, তাহলে আমার কী করার আছে।’
তাঁর প্রভাব খাটিয়ে বড় ভাই রফিকের জমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে মাইনুল বলেন, ‘আমার ভাই কোনো জমি দখল করেননি। তিনি ব্যবসা করে ভালো আছেন, তাই মানুষ হিংসা করছে। সাংসদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক থাকায় অনেকেই হিংসার বশবর্তী হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, জমি জবরদখলের অভিযোগ এনে বেঞ্জামিন গোমেজ রফিকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন। ইতিমধ্যে উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, রফিকের ভাই মাইনুলের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের নেতা মাইনুল ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে সাংসদ মেহের আফরোজের পক্ষে কাজ করছেন। ফলে সাংসদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের শক্ত রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সদর উপজেলার মীরের বাজার হয়ে কালীগঞ্জ সদরে ঢুকতেই কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল সড়কে প্রচুর তোরণ দেখা যায়। সাংসদ মেহের আফরোজের বাবা ময়েজউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেগুলো তৈরি করেন রফিক। তোরণের ওপরের অংশে আড়াআড়ি করে টানানো ব্যানারে লেখা ছিল: ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় নেতা শহীদ মো. ময়েজ উদ্দিনের ২৭তম শাহাদাতবার্ষিকীতে কালীগঞ্জ পৌরবাসীর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী—মো. রফিকুল ইসলাম (সিজু), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক।’ ব্যানারের ডান পাশে ছোট করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। আছে সাংসদ মেহের আফরোজ ও রফিকের বেশ বড় আকারের ছবি।
সাংসদের বক্তব্য: গাজীপুর-৫ আসনের সাংসদ মেহের আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খ্রিষ্টান পরিবারের জমি দখলের বিষয়টি আমি জানার পরই পুলিশ পাঠিয়ে দখলের কাজ বন্ধ করিয়েছি। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খ্রিষ্টান পরিবারের যেকোনো সমস্যা আমি গুরুত্ব সহকারে দেখার চেষ্টা করি।’
সাংসদ বলেন, ‘সিজুর ভাই মাইনুল যুবলীগের একজন নেতা। মাইনুলের নামে থানায় একাধিক মামলা থাকায় ও সব সময় পালিয়ে বেড়ায়। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ বা ভালো সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই ওঠে না।’
No comments