বিডি ফুডসের হেরোইন পাচার মামলার তদন্তের আট বছরঃ প্রধান আসামি বদরুদ্দোজা মোমিন কোথায়, সিআইডি জানে না by প্রশান্ত কর্মকার
আট বছর ধরে ঝুলে আছে পণ্য রপ্তারির আড়ালে লন্ডনে ৭৫ কেজি হেরোইন পাচারের মামলার তদন্ত। এ পর্যন্ত পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির আর কোনো অগ্রগতি নেই। অভিযোগ রয়েছে, জামায়াতপন্থী বড় এক ব্যবসায়ী আসামি হওয়ায় বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ব্যাপক গাফিলতি ছিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। বর্তমান সরকারের আমলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আদালত সূত্র জানায়, মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করাও হয় না দীর্ঘদিন ধরে।
এমনকি মামলার প্রধান আসামি বিডি ফুডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন এখন কোথায় আছেন, দেশে না বিদেশে, তাও জানেন না বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বদরুদ্দোজা অসুস্থ বলে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন। তাই তিনি কোথায় তা জানেন না।
তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, তদন্তে অনেক অগ্রগতি আছে। কিন্তু কী সেই অগ্রগতি এবং কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
এর আগে পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে গত বছর ২৬ মে আলোচিত এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক মোহম্মদ হোসেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, চার বছর ফাইল বন্দী থাকার পর গত বছর ১ মার্চ বিডি ফুডসের চেয়ারম্যানসহ ছয় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চায় সিআইডি। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। কিন্তু মোমিন অসুস্থ—এ কারণ দেখানোর পর ওই আদেশ বাতিল করা হয়।
এরপর ওই বছর ২৯ জুন আবার ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত বদরুদ্দোজা মোমিন ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক, কর্মচারী নাজমুল হায়দার ওরফে বুলবুল, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার ওরফে সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। কিন্তু এর পরও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আদালতের নথিপত্রে দেখা যায়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো কি না, এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হয়নি।
জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মোহম্মদ হোসেন দাবি করেন, বদরুদ্দোজা ছাড়া বাকি পাঁচ আসামিকে বছর খানেক আগে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তা আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তবে কত তারিখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, সে তারিখও মনে নেই।
ওই পাঁচ আসামির একজন বুলবুল তো কারাগারে, তাঁকে কীভাবে সিআইডিতে ডেকেছেন, এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
এমনকি আদালতে মামলার নথিপত্র ঘেঁটেও তদন্ত কর্মকর্তার এ দাবির প্রমাণ মেলেনি।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে লন্ডনে আটক হেরোইন পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি না মেলায় মামলাটির তদন্ত আটকে আছে।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের আইনে এক কেজির বেশি হেরোইন পাচারে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা মিলছে না। ২০০৮ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাজ্যের জেনারেল অ্যাটর্নি বিভাগ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এ মামলায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়।
নথিপত্র অনুযায়ী, লন্ডনের দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে সবজি ও ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা যায়—এমন টাইলস রপ্তানির আড়ালে হেরোইন পাচার করত বিডি ফুডস। ৭৫ কেজি হেরোইনের এমন একটি চালান ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল সিআইডি বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়।
তখন এসব মামলায় বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক, ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, তাঁদের সহযোগী বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও ইমদাদুল হক আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান আসামি বদরুদ্দোজা ২০০৮ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান। এর পর একে একে জামিন পান বুলবুল ছাড়া বাকি সবাই।
তাঁদের মধ্যে বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মাইনুদ্দিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার ওরফে বুলবুল, বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও গ্রিন হ্যাভেনের অংশীদার কাজী জাফর রেজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হোরোইন পাচারের কথা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে বদরুদ্দোজা মোমিনের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর কার্যালয় থেকে তাঁর আইনজীবী শামসুন নাহার হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
শামসুন নাহার হালিম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আসামি বুলবুলের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। পরে আবার যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বদরুদ্দোজা মোমিন অসুস্থ তা জানিয়ে আমি আবেদন করেছি। তবে মোমিন দেশে না বিদেশে আছে, তা বলতে পারব না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো নম্বর আমার কাছে নেই।’ তিনি আরও জানান, তাঁর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমিন উদ্দিন মূলত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। তিনি হয়তো বলতে পারবেন বদরুদ্দোজা কোথায় আছেন।
যোগাযোগ করা হলে আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, মামলাটি বিডি ফুডসের আইন উপদেষ্টা মামুন উর রশিদ পরিচালনা করেন।
মামুন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমিন উদ্দিনের চেম্বার মামলাটি দেখছে।’ তিনি বলেন, মোমিন কিছুদিন আগে বিদেশ গেছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি মাঝে মাঝে দেশে-বিদেশে যাওয়া-আসা করছেন এবং তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, তদন্তে অনেক অগ্রগতি আছে। কিন্তু কী সেই অগ্রগতি এবং কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
এর আগে পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে গত বছর ২৬ মে আলোচিত এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক মোহম্মদ হোসেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, চার বছর ফাইল বন্দী থাকার পর গত বছর ১ মার্চ বিডি ফুডসের চেয়ারম্যানসহ ছয় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চায় সিআইডি। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। কিন্তু মোমিন অসুস্থ—এ কারণ দেখানোর পর ওই আদেশ বাতিল করা হয়।
এরপর ওই বছর ২৯ জুন আবার ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত বদরুদ্দোজা মোমিন ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক, কর্মচারী নাজমুল হায়দার ওরফে বুলবুল, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার ওরফে সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। কিন্তু এর পরও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আদালতের নথিপত্রে দেখা যায়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো কি না, এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হয়নি।
জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মোহম্মদ হোসেন দাবি করেন, বদরুদ্দোজা ছাড়া বাকি পাঁচ আসামিকে বছর খানেক আগে সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তা আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তবে কত তারিখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, সে তারিখও মনে নেই।
ওই পাঁচ আসামির একজন বুলবুল তো কারাগারে, তাঁকে কীভাবে সিআইডিতে ডেকেছেন, এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
এমনকি আদালতে মামলার নথিপত্র ঘেঁটেও তদন্ত কর্মকর্তার এ দাবির প্রমাণ মেলেনি।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে লন্ডনে আটক হেরোইন পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তরাজ্য যাওয়ার অনুমতি না মেলায় মামলাটির তদন্ত আটকে আছে।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের আইনে এক কেজির বেশি হেরোইন পাচারে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা মিলছে না। ২০০৮ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাজ্যের জেনারেল অ্যাটর্নি বিভাগ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এ মামলায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়।
নথিপত্র অনুযায়ী, লন্ডনের দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে সবজি ও ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা যায়—এমন টাইলস রপ্তানির আড়ালে হেরোইন পাচার করত বিডি ফুডস। ৭৫ কেজি হেরোইনের এমন একটি চালান ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল সিআইডি বাদী হয়ে রাজধানীর মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়।
তখন এসব মামলায় বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার বুলবুল, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক, ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, তাঁদের সহযোগী বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আরেক কোম্পানি গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম ও তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা, দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও ইমদাদুল হক আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান আসামি বদরুদ্দোজা ২০০৮ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পান। এর পর একে একে জামিন পান বুলবুল ছাড়া বাকি সবাই।
তাঁদের মধ্যে বিডি ফুডসের ব্যবস্থাপক মাইনুদ্দিন, কর্মচারী নাজমুল হায়দার ওরফে বুলবুল, বিমানের কার্গো-শ্রমিক নয়ন ও গ্রিন হ্যাভেনের অংশীদার কাজী জাফর রেজা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হোরোইন পাচারের কথা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে বদরুদ্দোজা মোমিনের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর কার্যালয় থেকে তাঁর আইনজীবী শামসুন নাহার হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
শামসুন নাহার হালিম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আসামি বুলবুলের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। পরে আবার যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বদরুদ্দোজা মোমিন অসুস্থ তা জানিয়ে আমি আবেদন করেছি। তবে মোমিন দেশে না বিদেশে আছে, তা বলতে পারব না। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো নম্বর আমার কাছে নেই।’ তিনি আরও জানান, তাঁর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমিন উদ্দিন মূলত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। তিনি হয়তো বলতে পারবেন বদরুদ্দোজা কোথায় আছেন।
যোগাযোগ করা হলে আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, মামলাটি বিডি ফুডসের আইন উপদেষ্টা মামুন উর রশিদ পরিচালনা করেন।
মামুন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমিন উদ্দিনের চেম্বার মামলাটি দেখছে।’ তিনি বলেন, মোমিন কিছুদিন আগে বিদেশ গেছেন চিকিৎসার জন্য। তিনি মাঝে মাঝে দেশে-বিদেশে যাওয়া-আসা করছেন এবং তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
No comments