ডায়াবেটিসকে জানুন
ডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীর পরিমাণ মতো ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। পরিমাণে ঠিক থাকলেও তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এ কারণে রক্তে গ্গ্নুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।ল্যাবরেটরি ডায়াগনোসিসের ধারণাস্বাভাবিক : নাশতার আগে ৬ মিমোল/লি. বা তার কম; খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৭.৮ মিমোল/লি. বা তার কম।প্রি ডায়াবেটিস : নাশতার আগে ৬.১ মিমোল/লি. থেকে ৬.৯ মিমোল/লি.। খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৭.৮ থেকে ১১.১ মিমোল/লি.।
ডায়াবেটিস : নাশতার আগে ৭ মিমোল/লি. ও ৭-এর বেশি; খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ১১.১ মিমোল/লি. ও তার বেশি।
ডায়াবেটিসের কারণ : ডায়াবেটিস বংশগত রোগ। আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেটাই আসল কথা নয়। অনেকের বাপ-দাদার ডায়াবেটিস না থাকলেও তাদের ডায়াবেটিস হয়। জীবনযাত্রার বদলে ডায়াবেটিসও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ডায়াবেটিস তাই যে কোনো লোকের যে কোনো বয়সে যে কোনো সময়ে হতে পারে। তবে বংশে থাকলে আশঙ্কা বেশি। জন্মের সময় ওজন কম থাকলে, বয়ঃসন্ধিকালে মোটা থাকলে ও ডায়াবেটিস আছে এমন গর্ভবতী মায়ের বাচ্চাদের ডায়াবেটিস বেশি হয়।
চিকিৎসা : তিনটি জিনিস অপরিহার্য। ১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ২. ব্যায়াম, ৩. ওষুধ। খাদ্যাভাস ও ব্যায়াম পালন না করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব। এর মূল হলো ওজন স্বাভাবিক রাখা।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য : স্বাভাবিক মানুষের মতোই তবে ফাইন সুগার চিনি, মিষ্টি খাওয়া যাবে না। খাওয়ার পরিমাণ এমন হতে হবে যেন ওজন ঠিক থাকে। সব ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন কিছু টক ফল খাওয়া ভালো। ডায়াবেটিসের জটিলতার কারণে নিষেধ না থাকলে সবারই প্রতিদিন একটা মিষ্টি ফল, এক কাপ দুধ, একটা ডিম খাওয়া ভালো। খাদ্যাভ্যাস বদলানোর আসল উদ্দেশ্য হলো নিয়ন্ত্রিত ক্যালোরি।
সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম; দিনে একনাগাড়ে ৪৫ মিনিট হাঁটতে পারলে ভালো। প্রতিদিন একই সময় হাঁটতে হবে। হাঁটুতে, মাজায় অস্টিওআরথ্রাইটিসের রোগী ব্যথার অজুহাতে হাঁটতে চান না। সমতল ভূমিতে হাঁটলে ব্যথা বাড়ার কথা নয়। সময়, সামাজিক সমস্যা থাকলে মেশিনে হাঁটা যেতে পারে। ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার থেকে ৬, ৭ স্পিডে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিটার চালালে ২০০ বা তার বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হবে। এটাই যথেষ্ট।
ডায়াবেটিসের ওষুধ
ট্যাবলেট : চারভাবে ট্যাবলেট কাজ করে।
১. সিক্রেটগগ, সালফোনিলুরিয়া। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন যেটুকু থাকে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সিক্রেটগগ, সালফোনিলুরিয়া-প্যানিক্রয়াসকে স্টিমুলেট করে যেটুকু ইনসুলিন পাওয়া যায় তা নিঃসরণ করায়। গ্গ্নাইবেনক্লামাইড, গ্গি্নক্লাজাইড, গ্গি্নমিপ্রাইড, গ্গি্ননাইডস এ ধরনের ওষুধ।
২. সেনসিটাইজার : টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আরেকটা কারণ হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকলেও কাজ করে না। মেটফরমিন ও গ্গি্নটাজনগুলো এই রেজিস্ট্যান্স কমায় বা ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়।
৩. একারবোজ জাতীয় ওষুধগুলো খাদ্যনালি থেকে গ্গ্নুকোজকে রক্তে যেতে দেয় না।
৪. এনক্রেটিন মাইমেটিকস-(গ্গি্নপটিনস,গ্গ্নুটাইডস) নতুন এ ওষুধগুলো প্যানিক্রয়াসের কোষগুলোকে মরতে দেয় না। তাত্তি্বকভাবে তাই এরা ডায়াবেট প্রতিরোধে সাহায্য করে। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যনালিতে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়, যেটা প্যানিক্রয়াসে গিয়ে ইনসুলিন নিঃসরণ করে।
যাদের ইনসুলিন দিতেই হবে : গর্ভবতী মহিলা, অনেক বেশি সুগার, কিটোনুরিয়া, সার্জারি ও ডায়াবেটিসের ইমার্জেন্সি থাকলে ইনসুলিনের বিকল্প নেই।
ওষুধ যে সময়ে শুরু করবেন : একজনের খাওয়ার পরে সুগার এলো ৭.৫। ভয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করলেন এই বুঝি ডায়াবেটিস হয়ে গেল। আবার নাশতার আগে ৬.৮, খাওয়ার পরে ৭.৪, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লেন কী করবেন! এসব পরিস্থিতিতে হিমগ্গ্নোবিন এ১সি সহায়ক হবে। হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি ৬.৫ শতাংশ, অন্য রিপোর্ট যাই হোক চিকিৎসা শুরু করতে হবে, বিশেঘ করে লাইফ স্টাইল বদলাতে হবে। যদি স্থূলকায় হয় মেটফরমিন দিতে হবে। মেটফরমিন ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মেটফরমিন ডায়াবেটিস প্রতিরোধক হিসেবে প্রি-ডায়াবেটিকদেরও দেওয়া হয়। হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি ৭-এর বেশি হলে ওষুধ শুরু করতে হবে।
নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড : নাশতার আগে ৬ মিমোল বা তার কম; খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৮ মিমোল থেকে কম। হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি-৬.৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ, টাইপ-২ ডায়াবেটিকদের অধিকাংশেরই হাইপারটেনশন ও কোলেস্টেরল বেশি থাকে। নিয়ন্ত্রণ বলতে তাই এগুলোও স্বাভাবিক রাখা বোঝায়। ধূমপান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
কখন ,কী পরীক্ষা করবেন
বাসায় নিয়মিত গ্গ্নুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষা করুন। মাসে একবার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করান। তিন মাসে একবার হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি, কোলেস্টেরল এবং ৬ মাসে একবার কিডনি পরীক্ষা করা উচিত। বছরে একবার হার্ট ও চোখ পরীক্ষা করাবেন।
অেধ্যাপক ডা. খাজা নাজিম উদ্দীন
মেডিসিন বিভাগ, বারডেম, ঢাকা
ডায়াবেটিসের কারণ : ডায়াবেটিস বংশগত রোগ। আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেটাই আসল কথা নয়। অনেকের বাপ-দাদার ডায়াবেটিস না থাকলেও তাদের ডায়াবেটিস হয়। জীবনযাত্রার বদলে ডায়াবেটিসও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ডায়াবেটিস তাই যে কোনো লোকের যে কোনো বয়সে যে কোনো সময়ে হতে পারে। তবে বংশে থাকলে আশঙ্কা বেশি। জন্মের সময় ওজন কম থাকলে, বয়ঃসন্ধিকালে মোটা থাকলে ও ডায়াবেটিস আছে এমন গর্ভবতী মায়ের বাচ্চাদের ডায়াবেটিস বেশি হয়।
চিকিৎসা : তিনটি জিনিস অপরিহার্য। ১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ২. ব্যায়াম, ৩. ওষুধ। খাদ্যাভাস ও ব্যায়াম পালন না করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব। এর মূল হলো ওজন স্বাভাবিক রাখা।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য : স্বাভাবিক মানুষের মতোই তবে ফাইন সুগার চিনি, মিষ্টি খাওয়া যাবে না। খাওয়ার পরিমাণ এমন হতে হবে যেন ওজন ঠিক থাকে। সব ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন কিছু টক ফল খাওয়া ভালো। ডায়াবেটিসের জটিলতার কারণে নিষেধ না থাকলে সবারই প্রতিদিন একটা মিষ্টি ফল, এক কাপ দুধ, একটা ডিম খাওয়া ভালো। খাদ্যাভ্যাস বদলানোর আসল উদ্দেশ্য হলো নিয়ন্ত্রিত ক্যালোরি।
সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম; দিনে একনাগাড়ে ৪৫ মিনিট হাঁটতে পারলে ভালো। প্রতিদিন একই সময় হাঁটতে হবে। হাঁটুতে, মাজায় অস্টিওআরথ্রাইটিসের রোগী ব্যথার অজুহাতে হাঁটতে চান না। সমতল ভূমিতে হাঁটলে ব্যথা বাড়ার কথা নয়। সময়, সামাজিক সমস্যা থাকলে মেশিনে হাঁটা যেতে পারে। ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার থেকে ৬, ৭ স্পিডে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিটার চালালে ২০০ বা তার বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হবে। এটাই যথেষ্ট।
ডায়াবেটিসের ওষুধ
ট্যাবলেট : চারভাবে ট্যাবলেট কাজ করে।
১. সিক্রেটগগ, সালফোনিলুরিয়া। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন যেটুকু থাকে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সিক্রেটগগ, সালফোনিলুরিয়া-প্যানিক্রয়াসকে স্টিমুলেট করে যেটুকু ইনসুলিন পাওয়া যায় তা নিঃসরণ করায়। গ্গ্নাইবেনক্লামাইড, গ্গি্নক্লাজাইড, গ্গি্নমিপ্রাইড, গ্গি্ননাইডস এ ধরনের ওষুধ।
২. সেনসিটাইজার : টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আরেকটা কারণ হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকলেও কাজ করে না। মেটফরমিন ও গ্গি্নটাজনগুলো এই রেজিস্ট্যান্স কমায় বা ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়।
৩. একারবোজ জাতীয় ওষুধগুলো খাদ্যনালি থেকে গ্গ্নুকোজকে রক্তে যেতে দেয় না।
৪. এনক্রেটিন মাইমেটিকস-(গ্গি্নপটিনস,গ্গ্নুটাইডস) নতুন এ ওষুধগুলো প্যানিক্রয়াসের কোষগুলোকে মরতে দেয় না। তাত্তি্বকভাবে তাই এরা ডায়াবেট প্রতিরোধে সাহায্য করে। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যনালিতে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়, যেটা প্যানিক্রয়াসে গিয়ে ইনসুলিন নিঃসরণ করে।
যাদের ইনসুলিন দিতেই হবে : গর্ভবতী মহিলা, অনেক বেশি সুগার, কিটোনুরিয়া, সার্জারি ও ডায়াবেটিসের ইমার্জেন্সি থাকলে ইনসুলিনের বিকল্প নেই।
ওষুধ যে সময়ে শুরু করবেন : একজনের খাওয়ার পরে সুগার এলো ৭.৫। ভয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করলেন এই বুঝি ডায়াবেটিস হয়ে গেল। আবার নাশতার আগে ৬.৮, খাওয়ার পরে ৭.৪, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লেন কী করবেন! এসব পরিস্থিতিতে হিমগ্গ্নোবিন এ১সি সহায়ক হবে। হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি ৬.৫ শতাংশ, অন্য রিপোর্ট যাই হোক চিকিৎসা শুরু করতে হবে, বিশেঘ করে লাইফ স্টাইল বদলাতে হবে। যদি স্থূলকায় হয় মেটফরমিন দিতে হবে। মেটফরমিন ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মেটফরমিন ডায়াবেটিস প্রতিরোধক হিসেবে প্রি-ডায়াবেটিকদেরও দেওয়া হয়। হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি ৭-এর বেশি হলে ওষুধ শুরু করতে হবে।
নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড : নাশতার আগে ৬ মিমোল বা তার কম; খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৮ মিমোল থেকে কম। হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি-৬.৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ, টাইপ-২ ডায়াবেটিকদের অধিকাংশেরই হাইপারটেনশন ও কোলেস্টেরল বেশি থাকে। নিয়ন্ত্রণ বলতে তাই এগুলোও স্বাভাবিক রাখা বোঝায়। ধূমপান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
কখন ,কী পরীক্ষা করবেন
বাসায় নিয়মিত গ্গ্নুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষা করুন। মাসে একবার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করান। তিন মাসে একবার হিমোগ্গ্নোবিন এ১সি, কোলেস্টেরল এবং ৬ মাসে একবার কিডনি পরীক্ষা করা উচিত। বছরে একবার হার্ট ও চোখ পরীক্ষা করাবেন।
অেধ্যাপক ডা. খাজা নাজিম উদ্দীন
মেডিসিন বিভাগ, বারডেম, ঢাকা
No comments