ঐতিহ্য রক্ষায় নবউদ্যোগ by গৌতম লাহিড়ী
একটাই আশার কথা যে, দিলি্ল সরকার গোটা শহরটাকেই 'হেরিটেজ সিটির' আওতায় আনতে চাইছে না। মূলত শহরের চারটি অঞ্চল_ মেহরলিশাহজাহানাবাদ নয়াদিলি্ল এবং নিজামুদ্দিনকে নিয়েই ঐতিহ্য নগরীর পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের হেরিটেজ সংরক্ষণ সংস্থা 'ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ' অক্টোবর মাসে ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব জমা দিয়েছেরাজধানী হিসেবে দিলি্লর একশ' বছর হয়ে গেল। রাজনীতির টানাপড়েনের বাইরে এক নতুন কৌতূহল নিয়ে শুরু হয়েছে টানটান উত্তেজনা।
দিলি্ল নগরীকে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্য নগরী বা 'হেরিটেজ সিটি' হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনেস্কোর কাছে আর্জি জানাতে চলেছে দিলি্লর প্রাদেশিক সরকার। কিন্তু এই আর্জির মূল ভিত্তি ব্রিটিশদের তৈরি করা রাজধানী দিলি্ল নয়। বরং মোগল সম্রাট শাহজাহানের তৈরি আজকের পুরনো দিলি্ল। লালকেল্লা-চাঁদনি চক-জামা মসজিদের দিলি্লই হবে 'ঐতিহ্য নগরী'।
তিন বছর ধরে দিলি্ল সরকার নীরবে ঐতিহ্য নগরীর প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে। ভারতের শহরগুলোর মধ্যে দিলি্লতেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ভবন। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে দিলি্ল যদি স্বীকৃতি পায় তাহলে এসব ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ভবন সুরক্ষিত হতে বাধ্য। খোদ দিলি্লতেই রয়েছে দেড়শ' স্মৃতিসৌধ। সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় এক হাজার প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। নগরীর প্রান্ত বরাবর বয়ে যাওয়া যমুনা নদী দিলি্লর বহু পালাবদলের সাক্ষী। জনপদে রয়ে গেছে প্রত্যেক পালাবদলের পদচিহ্ন। ব্রিটিশ সাহেবরা তৈরি করার আগে মোগল সম্রাট পরিকল্পিত নগরীর গোড়াপত্তন করেন 'শাহজাহানাবাদ'। একেবারে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে মেহরলি জনপদ গড়ে ওঠে দ্বাদশ শতাব্দীতে। শহরের সবচেয়ে পুরনো বসতি কুতুব মিনার। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় গড়ে ওঠে আধুনিক দিলি্ল। বাগিচা নগরীর আদলে ইংরেজ স্থপতি লুটিয়েন তৈরি করেন গ্রিক স্থাপত্যের ধাঁচে সরকারি ভবন।
এত ঐতিহ্যের নগরী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে গিয়ে এখন নতুন বিতর্কের মুখে। যমুনার জল যেমন ধীরে ধীরে কমে গিয়ে শীর্ণরূপী হয়ে উঠেছে, তেমনি আধুনিকতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে দিলি্ল ক্রমে ঐতিহ্যের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরকারি হিসাবেই স্বীকার করা হয়েছে, অন্তত ১৫টি জাতীয় স্মৃতিসৌধ বেআইনি দখলদারদের কবলে। সম্রাট শাহজাহানের সেই স্বপ্নের শাহজাহানাবাদ এখন বস্তিবাসীদের বিলাসক্ষেত্র। সাহেবদের তৈরি করা পুরনো বিশাল বাংলোগুলো এখন আকাশচুম্বী 'অ্যাপার্টমেন্ট' হওয়ার অপেক্ষায়। ঐতিহ্যই যদি ধুলায় মিটে যায় তাহলে কোন নজির দেখিয়ে 'হেরিটেজ' নগরীর স্বীকৃতি মিলবে?
একটাই আশার কথা যে, দিলি্ল সরকার গোটা শহরটাকেই 'হেরিটেজ সিটির' আওতায় আনতে চাইছে না। মূলত শহরের চারটি অঞ্চল_ মেহরলি. শাহজাহানাবাদ, নয়াদিলি্ল এবং নিজামুদ্দিনকে নিয়েই ঐতিহ্য নগরীর পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের হেরিটেজ সংরক্ষণ সংস্থা 'ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ' অক্টোবর মাসে ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে দিলি্লর সঙ্গে আচমকা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে গুজরাটের আমেদাবাদ শহর। এতেই চিন্তায় পড়েছেন দিলি্লর কর্তারা। কোনোভাবেই দিলি্ল যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য নেমে পড়েছেন ঐতিহ্য রক্ষায়। এটাই দিলি্লবাসীর বাড়তি পাওনা। হেরিটেজ মর্যাদা পাওয়ার তাগিদে দিলি্লর নাগরিক জীবন যদি উন্নত হয়, সেই যমুনায় যদি ফের নীল জল ফিরে আসে, যদি দিলি্লর আকাশ ফের নীল হয়ে ওঠে, দিলি্ল যদি সম্রাট শাহজাহানের দিলি্ল হয়ে ওঠে। নাই-বা পেল হেরিটেজ স্বীকৃতি।
সেই তাগিদে দিলি্লর অভিজাত ডিফেন্স কলোনির কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে কবেই হারিয়ে গেছে পঞ্চদশ শতাব্দীর এক ছোট তালুকের সম্রাট মুইস-উদ-দীন মুবারক শাহর সমাধি। স্থাপত্যের দিক থেকে সৌধের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি দিলি্লর দ্বিতীয় অষ্টভুজের সমাধি। পুরাতত্ত্ব বিভাগ এর চারদিকে লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে দিলেও বাইরে থেকে কারোর বোঝার উপায় নেই। পুরাতত্ত্ব বিভাগের অবশ্য যুক্তি, তাদের হাতে এত অর্থ ভারত সরকার দেয়নি। তাই চাইলেও কিছুই করার নেই। এরপর ঐতিহ্য নগরীর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ইউনেস্কোর যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তার জন্য দিলি্লর কর্তারা তৈরি কি-না সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
গৌতম লাহিড়ী : সমকাল প্রতিনিধি
তিন বছর ধরে দিলি্ল সরকার নীরবে ঐতিহ্য নগরীর প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে। ভারতের শহরগুলোর মধ্যে দিলি্লতেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ভবন। শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে দিলি্ল যদি স্বীকৃতি পায় তাহলে এসব ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ভবন সুরক্ষিত হতে বাধ্য। খোদ দিলি্লতেই রয়েছে দেড়শ' স্মৃতিসৌধ। সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় এক হাজার প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। নগরীর প্রান্ত বরাবর বয়ে যাওয়া যমুনা নদী দিলি্লর বহু পালাবদলের সাক্ষী। জনপদে রয়ে গেছে প্রত্যেক পালাবদলের পদচিহ্ন। ব্রিটিশ সাহেবরা তৈরি করার আগে মোগল সম্রাট পরিকল্পিত নগরীর গোড়াপত্তন করেন 'শাহজাহানাবাদ'। একেবারে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে মেহরলি জনপদ গড়ে ওঠে দ্বাদশ শতাব্দীতে। শহরের সবচেয়ে পুরনো বসতি কুতুব মিনার। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় গড়ে ওঠে আধুনিক দিলি্ল। বাগিচা নগরীর আদলে ইংরেজ স্থপতি লুটিয়েন তৈরি করেন গ্রিক স্থাপত্যের ধাঁচে সরকারি ভবন।
এত ঐতিহ্যের নগরী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে গিয়ে এখন নতুন বিতর্কের মুখে। যমুনার জল যেমন ধীরে ধীরে কমে গিয়ে শীর্ণরূপী হয়ে উঠেছে, তেমনি আধুনিকতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে দিলি্ল ক্রমে ঐতিহ্যের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরকারি হিসাবেই স্বীকার করা হয়েছে, অন্তত ১৫টি জাতীয় স্মৃতিসৌধ বেআইনি দখলদারদের কবলে। সম্রাট শাহজাহানের সেই স্বপ্নের শাহজাহানাবাদ এখন বস্তিবাসীদের বিলাসক্ষেত্র। সাহেবদের তৈরি করা পুরনো বিশাল বাংলোগুলো এখন আকাশচুম্বী 'অ্যাপার্টমেন্ট' হওয়ার অপেক্ষায়। ঐতিহ্যই যদি ধুলায় মিটে যায় তাহলে কোন নজির দেখিয়ে 'হেরিটেজ' নগরীর স্বীকৃতি মিলবে?
একটাই আশার কথা যে, দিলি্ল সরকার গোটা শহরটাকেই 'হেরিটেজ সিটির' আওতায় আনতে চাইছে না। মূলত শহরের চারটি অঞ্চল_ মেহরলি. শাহজাহানাবাদ, নয়াদিলি্ল এবং নিজামুদ্দিনকে নিয়েই ঐতিহ্য নগরীর পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের হেরিটেজ সংরক্ষণ সংস্থা 'ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ' অক্টোবর মাসে ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে দিলি্লর সঙ্গে আচমকা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে গুজরাটের আমেদাবাদ শহর। এতেই চিন্তায় পড়েছেন দিলি্লর কর্তারা। কোনোভাবেই দিলি্ল যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য নেমে পড়েছেন ঐতিহ্য রক্ষায়। এটাই দিলি্লবাসীর বাড়তি পাওনা। হেরিটেজ মর্যাদা পাওয়ার তাগিদে দিলি্লর নাগরিক জীবন যদি উন্নত হয়, সেই যমুনায় যদি ফের নীল জল ফিরে আসে, যদি দিলি্লর আকাশ ফের নীল হয়ে ওঠে, দিলি্ল যদি সম্রাট শাহজাহানের দিলি্ল হয়ে ওঠে। নাই-বা পেল হেরিটেজ স্বীকৃতি।
সেই তাগিদে দিলি্লর অভিজাত ডিফেন্স কলোনির কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে কবেই হারিয়ে গেছে পঞ্চদশ শতাব্দীর এক ছোট তালুকের সম্রাট মুইস-উদ-দীন মুবারক শাহর সমাধি। স্থাপত্যের দিক থেকে সৌধের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি দিলি্লর দ্বিতীয় অষ্টভুজের সমাধি। পুরাতত্ত্ব বিভাগ এর চারদিকে লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে দিলেও বাইরে থেকে কারোর বোঝার উপায় নেই। পুরাতত্ত্ব বিভাগের অবশ্য যুক্তি, তাদের হাতে এত অর্থ ভারত সরকার দেয়নি। তাই চাইলেও কিছুই করার নেই। এরপর ঐতিহ্য নগরীর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ইউনেস্কোর যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তার জন্য দিলি্লর কর্তারা তৈরি কি-না সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
গৌতম লাহিড়ী : সমকাল প্রতিনিধি
No comments