ঈদ আনন্দ- আগে কখনো এত আনন্দ হয়নি by আলতাফ হোসেন

যৌতুকের কারণে ভেঙে গিয়েছিল বিয়ে। পরদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় খবরটি।স্থানীয়প্রশাসনের তৎপরতায় বর হাসু মিয়ার সঙ্গেই যৌতুক ছাড়া বিয়ে হয় রোকসানার। বিয়ের পরে প্রথম ঈদ কীভাবে কাটাল... নিশ্চয়ই মনে আছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার সেই রোকসানা খাতুনের কথা।


যৌতুক দিতে না পারায় যার বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল। ১০ জুন প্রথম আলোয় ‘বিয়েবাড়িতে হঠাৎ নীরবতা’ সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরে স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। ভুল বুঝতে পেরে যৌতুক ছাড়াই রোকসানাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেন বর হাসু মিয়া। সেই রোকসানার দিন কেমন কাটছে, বিয়ের পর প্রথম ঈদ কেমন করলেন জানতে ২৬ আগস্ট হাজির হলাম তাঁর শ্বশুরবাড়ি।
‘এত ভালো শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী পাব তা কখনো ভাবতে পারিনি। শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে ছোটমা বলে ডাকেন। তাঁরা কোনো দিন নাম ধরে কিংবা বউ বলে ডাকেননি। বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরেই শ্বশুর আমার খোঁজখবর নেন। শাশুড়িও মেয়ের মতো ভালোবাসেন।’ হাসিমুখে বলেন রোকসানা।
তা হলে এবার ঈদের দিন কেমন কেটেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে চোখেমুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায় রোকসানার। ‘ঈদের আগে দুইটা সালোয়ার-কামিজ, একটা শাড়ি ও সাজসজ্জার জিনিস কিনে দিয়েছেন স্বামী। সকালে শাশুড়ির তৈরি রুটি, সেমাই সবাই মিলে খেয়েছি। নতুন পোশাক পরে শাশুড়ির সঙ্গে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। এমন খুশির ঈদ আগে কখনো আসেনি জীবনে।’ তবে ঈদের দিন মা-বাবার কথাও খুব মনে পড়েছে রোকসানার।
‘আমার স্বামী হাসু এখন মুদি দোকান চালান। এ ছাড়া অল্প কিছু কৃষি জমি আছে। সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে বেশ। তবে মুদি দোকানটা আরও বড় করতে চাই। আমিও সেলাই মেশিন কিনে হাতের কাজ শুরু করব।’
কথার শেষ মুহূর্তে বাড়িতে আসেন রোকসানার স্বামী হাসু মিয়া। তিনি বলেন, ‘রোকসানা খুব ভালো এবং মিশুক মেয়ে। তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমি সুখী। আমার বাবা-মা আমার চেয়ে ওকেই বেশি ভালোবাসেন। বিয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি অনুতপ্ত।’
এ সময় রোকসানার শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়িতে ছিলেন না। মুঠোফোনে শ্বশুর খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন রোকসানা।
তিনি বলেন, ‘রোকসানা লক্ষ্মী মেয়ে। তাকে বউ হিসাবে পায়া হামরা খুব খুশি। সারা দিন আব্বা-আম্মা বলি মুখ ভর্তি করি হামাক ডাকায়। এ্যাতে বুকটা ভরি যায়।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পৃথ্বীশকুমার সরকার বলেন, ‘আমরা সব সময় রোকসানার খোঁজখবর নিই। বিয়ের পর তিনি ভালো আছেন। এটা আমাদের জন্যও খুশির খবর।’ রোকসানা ভালো থাকুক, এমন প্রত্যাশা আমাদের।

No comments

Powered by Blogger.