আর্কটিকে ভাসমান বরফ রেকর্ড পরিমাণ কমেছে

আর্কটিক সাগরে ভাসমান বরফের আয়তন রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। ১৯৭৯ সালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বরফাচ্ছাদিত এলাকার রেকর্ড রাখা শুরু হয়। এরপর চলতি বছরেই সাগরে ভাসমান বরফের পরিমাণ সবচেয়ে কম রেকর্ড করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানান।


বরফের পরিমাণ আরো কমতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার কারণে আর্কটিকের ভাসমান বরফের পরিমাণ এমনিতেই কমে আসে। শীত মৌসুম শুরুর পর এর আয়তন আবারও বাড়তে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার থেকে জানানো হয়, ২০০৭ সালে আর্কটিক সাগরে ভাসমান বরফের আয়তন ৪১ লাখ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই আয়তন ৪১ লাখ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। গ্রীষ্মকাল শেষ হতে হতে এই আয়তন আরো কমে আসতে পারে। গত ৩০ বছরে দশকপ্রতি গ্রীষ্মকালে বরফ গলার পরিমাণ গড়ে ১৩ শতাংশ করে বেড়েছে বলেও জানানো হয়।
আয়তনের পাশাপাশি আর্কটিক সাগরে ভাসমান বরফস্তরের পুরুত্ব কমেছে বলেও জানান বিজ্ঞানীরা। ১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বরফস্তরের পুরুত্ব প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। ১৯৮০-এর দশকে যে পরিমাণ ভাসমান বরফ ছিল, এখন কেবল তার ৩০ শতাংশই গলতে বাকি আছে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক জোয়ে কোমিসো বলেন, 'এবারের গ্রীষ্মে ২০০৭ সালের মতো গরম পড়েনি। কিন্তু এর পরও বরফস্তরের পুরু আবরণ গলে যেতে দেখছি আমরা। এটা চলতে থাকলে গ্রীষ্মে বরফের স্তর আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।' গত কয়েক বছরের অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণেই এবার বরফের আয়তন কমে গেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ওয়েডহ্যামস বলেন, 'সাগরে ভাসমান বরফ নিয়ে গবেষণারত কয়েকজন বিজ্ঞানী বছর কয়েক আগে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ২০১৫ বা ২০১৬ সালের মধ্যে গ্রীষ্মকালে আর্কটিক সাগর বরফমুক্ত হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সতর্কতাকে বেশ হাস্যকর মনে করেছিলাম আমি। কিন্তু সেই ভবিষ্যদ্বাণীই এখন বাস্তব রূপ নিতে চলেছে। বরফের স্তুর এতই হালকা হয়ে গেছে, যেকোনো সময় তা মিলিয়ে যেতে পারে।'
সাগরের উন্মুক্ত পানি ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবেই আর্কটিক সাগরের বরফ গলার হার বেড়েছে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাপত্রে জানানো হয়, আর্কটিক সাগরে পাঁচ থেকে ৩০ শতাংশ বরফ গলার পেছনে 'আটলান্টিক মাল্টি-ডেকাডাল অসিলেশন' নামের একটি পরিবেশ চক্র দায়ী। প্রতি ৬৫-৮০ বছর পর পর এ চক্রটি ফিরে আসে। চক্রটির এখন উষ্ণ পর্যায় চলছে। এটি ছাড়াও মানুষের কারণে সৃষ্ট দূষণ ও ক্রমাগত বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলেও বরফ গলছে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.