রাজনৈতিক বিবেচনায় আর পরিচালক নিয়োগ নয়- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ায় গোসসা হয়েছেন ব্যাংকটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।


ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অবশ্যই চিঠি দিতে পারেন। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এখানেই ক্ষান্ত থাকেননি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কথায় বাংলাদেশ ব্যাংক চলে বলে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যও রেখেছেন। এরপর তাঁর ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে থাকার নৈতিক অধিকার আছে কি না, সেটাই প্রশ্ন।
তাঁর কথার সূত্র ধরে আমরাও জানতে চাই, সোনালী ব্যাংক চলে কার কথায়? হলমার্কের? না হলে ব্যাংকটির কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদের চোখে ঠুলি দিয়ে তারা বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিল কীভাবে? সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেছেন, হলমার্কের ঋণ প্রদানে পরিচালনা পর্ষদের কোনো ভূমিকা ছিল না। তাঁর এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই যদি ব্যাংকের কর্মকর্তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংকটির তহবিল থেকে সরিয়ে নিয়ে থাকেন, তাহলে সেই পর্ষদ রাখার কোনো যুক্তি আছে কি?
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম ও ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন, তা সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই কমবেশি আছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০১০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ গঠনে ব্যাংকিং খাতের স্বার্থের চেয়ে সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছিল। পরিচালনা পর্ষদে এমন লোকদের পাল্লাই ভারী ছিল, যাঁদের ব্যাংকিং বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ রাজনৈতিক দলের পুনর্বাসন কেন্দ্র হতে পারে না।
চারদলীয় জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাইরের চাপে হোক বা নিজেদের গরজে হোক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় একটা সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণের পরিমাণ কমার পাশাপাশি সিবিএর দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এসব ব্যাংক আবার পুরোনো ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার অপপ্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সিবিএর দৌরাত্ম্য ফিরে এলে শুধু ব্যাংকগুলোই ধ্বংস হবে না, দেশের আর্থিক খাতেও দেখা দেবে চরম বিশৃঙ্খলা।
অতএব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চিঠির বক্তব্যের প্রতি আমরা দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বলতে চাই, অবিলম্বে সোনালী ব্যাংকসহ সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হোক। এর পাশাপাশি ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিক্ষাগত ও প্রায়োগিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে। অন্যথায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.