এবারও ব্যর্থ তিস্তার পানিবণ্টন বৈঠকঃ হালে পানি পায়নি বাংলাদেশের প্রস্তাব
দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) ফের ফলশূন্য আলোচনায় পর্যবসিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে কোনো চুক্তি হয়নি। বহুল প্রত্যাশিত এই বৈঠক কার্যত নিষম্ফল অবস্থায় শেষ হয়েছে ২০ মার্চ। তিনদিনের বৈঠক শেষে পূর্বাপরের মতো ভারতের দেয়া আশ্বাস নিয়ে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
এই আশ্বাসের শানেনযুল হচ্ছে, বাংলাদেশ ১০ বছরমেয়াদি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির যে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। বলা যায়, অজুহাত দাঁড় করিয়ে মূল বিষয় থেকে পেছনে গেল ভারত। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলের সংশয়ই সত্যে পরিণত হলো—সারা রাত সাপ মেরে সকাল বেলা দড়ি। তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রধান বিষয় ছিল ২০ ভাগ পানি নাব্যতা রক্ষার জন্য রেখে বাকি ৮০ ভাগ দু’দেশের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হবে। বিষয়টি ভারতীয় নদী কমিশনের অজানা ছিল এমন কিছু নয়। অথচ তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে ফের এড়িয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। তবে চুক্তির ব্যাপারে নারাজ ভারত যে কোনো ধরনের চুক্তির আগে যৌথ পানি প্রবাহ সমীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে চুক্তি না করার জন্য যে অজুহাত দেখানো হয়েছে তা রীতিমত চালাকি ছাড়া কিছু নয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী জনৈক কর্মকর্তা বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারাও এমনটিই দাবি করেছেন। বৈঠকে অংশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তা হলে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এই মতপার্থক্যকে মাঝখানে শিখণ্ডি হিসেবে রেখেই এতদিন চুক্তি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। বাংলাদেশ সরকারও বাড়াভাতে ছাই পড়ার সম্ভাবনাগুলো আগেভাগে খতিয়ে না দেখেই কেবল প্রস্তাবনা রচনায় ব্যস্ত ছিল। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, মার্চ মাসে জেআরসির বৈঠকের পর তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সই করবে দুই দেশ। কিন্তু বৈঠকের ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে, মাঠে মারা গেল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই প্রত্যাশা। এ থেকে আশঙ্কা করাই যেতে পারে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি আবার পড়ে গেল দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মুখে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) এটি ছিল ৩৭তম বৈঠক। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। এর পর বৈঠকের জন্য একের পর এক তারিখ নির্ধারণ হলেও নানা অজুহাতে বৈঠক বাতিল করেছে ভারত। জানা গেছে, অন্তত ৪০টি বৈঠক বাতিল হয়েছে যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর। অথচ এর স্মারক অনুযায়ী বছরে অন্তত দু’টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তা হয়নি। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের মূল এজেন্ডা ছিল তিস্তার পানিবণ্টন। এই সফরের আগে জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাব ভারত নাকচ করে দিয়েছিল। ৪-৫ জানুয়ারি ঢাকায় সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দু’দেশের পানিসম্পদ সচিবরা বলেছিলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য কমে এসেছে। খুব শিগগির এ ব্যাপারে ইতিবাচক ফলও আশা করেছিলেন তারা। সে আশার আপাতত গুড়েবালি।
এদিকে শুকনো মৌসুমের শুরু থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ সম্প্রতি কিছুটা বাড়লেও তা প্রাপ্য হিস্যার চেয়ে কম। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা রেখে বারবার বৈঠক করা কেবলই আশা-নিরাশার দোলাচল মাত্র। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে এবার আগেভাগেই তারা কেন্দ্র ও রাজ্যের মতপার্থক্য মিটিয়ে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করতে পারত, তা করেনি। ফলে তিন দশক ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়টি ফের ঝুলে গেল এবং ভারতের পানি-কূটনীতির ফলে হালে পানি পেল না বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবটি। এ অবস্থায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশকে। গন্তব্য অনিশ্চিত রেখে দৌড়ুলে চলবে না।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) এটি ছিল ৩৭তম বৈঠক। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে। এর পর বৈঠকের জন্য একের পর এক তারিখ নির্ধারণ হলেও নানা অজুহাতে বৈঠক বাতিল করেছে ভারত। জানা গেছে, অন্তত ৪০টি বৈঠক বাতিল হয়েছে যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর। অথচ এর স্মারক অনুযায়ী বছরে অন্তত দু’টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তা হয়নি। গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের মূল এজেন্ডা ছিল তিস্তার পানিবণ্টন। এই সফরের আগে জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তাব ভারত নাকচ করে দিয়েছিল। ৪-৫ জানুয়ারি ঢাকায় সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দু’দেশের পানিসম্পদ সচিবরা বলেছিলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য কমে এসেছে। খুব শিগগির এ ব্যাপারে ইতিবাচক ফলও আশা করেছিলেন তারা। সে আশার আপাতত গুড়েবালি।
এদিকে শুকনো মৌসুমের শুরু থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ সম্প্রতি কিছুটা বাড়লেও তা প্রাপ্য হিস্যার চেয়ে কম। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা রেখে বারবার বৈঠক করা কেবলই আশা-নিরাশার দোলাচল মাত্র। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে এবার আগেভাগেই তারা কেন্দ্র ও রাজ্যের মতপার্থক্য মিটিয়ে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করতে পারত, তা করেনি। ফলে তিন দশক ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়টি ফের ঝুলে গেল এবং ভারতের পানি-কূটনীতির ফলে হালে পানি পেল না বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবটি। এ অবস্থায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশকে। গন্তব্য অনিশ্চিত রেখে দৌড়ুলে চলবে না।
No comments