বিচার বিভাগের ওপর ওয়ান-ইলেভেনের ‘ভূত’- মলাদের দাওয়াই ও বিচারকদের দায়িত্ব
বিচার বিভাগের ওপর থেকে ‘ভূত’ তাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। দেশের শীর্ষ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা বলেছেন, এই ‘ভূত’ তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের। সাবেক ও বর্তমান প্রধান বিচারপতিসহ সবার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বিচার বিভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
না পারার প্রধান কারণ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে ওয়ান-ইলেভেনের ‘ভূত’। এই ‘ভূত’ তাড়ানোর জন্য ‘মিলাদ’ দিতে বলেছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। যথেষ্ট ব্যঙ্গাত্মক হলেও কথাটার মধ্যে স্পষ্ট ইঙ্গিতও রয়েছে। শীর্ষ এই আইনজীবী বুঝিয়েছেন, ‘ভূত’ তাড়াতে হলে প্রথমে ‘ভূতের’ রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। জরুরি সরকারের দিনগুলোতে দেখা ও শোনা গেছে, বিচারকদের পিঠে নাকি বন্দুক ঠেকিয়ে রাখা হতো। জান ও মানের ভয়ে বিচারকরাও জরুরিওয়ালাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মামলার নিষ্পত্তি করতেন, রায় দিতেন। অর্থাত্ বিচার বিভাগকে জরুরিওয়ালাদের সেবাদাসের ভূমিকা পালন করতে হতো। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ও একই অবস্থা চলছে বলেই বিচার বিভাগের ওপর ‘ভূত’ চেপে থাকার কথাটা উঠেছে। রিমান্ড এ সংক্রান্ত বড় উদাহরণ। দেখা যাচ্ছে, অনেক মামলাতেই অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সরকারি লোকজনের হস্তক্ষেপে বিচারপতিরা রিমান্ড মঞ্জুর না করে পারছেন না। গুরুতর অসুস্থ একজন অভিযুক্তের ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি মন্তব্য তো ইতিহাসের বিষয়েই পরিণত হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তের আইনজীবীকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ‘আসামি মারা গেলে আমাদের নামে মামলা কইরেন’! সর্বোচ্চ আদালতের একটি মন্তব্য স্মরণ করলেও জানা যাবে, বিচার বিভাগের অবস্থা কতটা করুণ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে মাননীয় বিচারপতিরা একবার বলেছিলেন, ‘আপনাদের ক্ষমতা আছে। আমাদেরকেও পেটান! এভাবে চালাতে চাইলে হাইকোর্ট উঠিয়ে দিন।’ ওদিকে নিম্ন আদালতগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে চেম্বার জজ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জামিন স্থগিত করেছেন—এমন নজির তো মাত্র ক’দিন আগেই তৈরি হয়েছে। এ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের তিন হাজার ৫৬২টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, অবশ্যই বিচার বিভাগের সম্মতি নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা পাঁচটি মামলা তো মাত্র আটদিনেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে!
সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করার এবং প্রধান বিচারপতির চেম্বারের দরজায় লাথি মারার রেকর্ড যাদের রয়েছে সে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এমনিতেই বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার কথা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিচার বিভাগ যেহেতু ‘স্বাধীন’ এবং বিচারকরা যেহেতু নৈতিকতার দিক থেকে বলিষ্ঠ থাকেন বলে ধরে নেয়া হয়, সেহেতু মানুষ ন্যায়বিচার আশা করতেই পারে। কিন্তু তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলেই ওয়ান-ইলেভেনের ‘ভূত’ তাড়ানোর জন্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ‘মিলাদ’ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর অর্থ হলো, সরকারকে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, বিচারকদেরকেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। এখানেই বিচারকদের সততা ও নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন এসে যায়। একই কারণে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানবাধিকারবিষয়ক অন্য এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উঠেছে, গ্রামীণ সালিশের যেটুকু সততা আছে বর্তমান বিচার বিভাগের সেটুকু সততাও রয়েছে কিনা। কোনো দেশের বিচার বিভাগ সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্ন ওঠা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে, প্রশ্ন তো উঠছেই, মানুষ এমনকি সুনির্দিষ্ট অনেক উদাহরণও তুলে ধরছেন। লজ্জা ও ভীতির অন্য একটি কারণও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকদের দলপ্রীতি নিয়ে আজকাল প্রকাশ্যে আলোচনা হয়। অনেকের নাকি জেলা-উপজেলাপ্রীতি পর্যন্ত রয়েছে এবং তার প্রকাশও ঘটছে প্রকটভাবেই। ফলে পিঠে নাকি বন্দুক ঠেকানোর প্রয়োজন পড়ে না। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন অবস্থা চলতে পারে না। চরিত্রের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার বিচার ব্যবস্থাকে তছনছ করতে চাইতেই পারে। বিচারকরা যদি বলিষ্ঠ অবস্থান নেন এবং রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো যদি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পক্ষে দাঁড়ায় তাহলে সরকারের চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। বর্তমান পর্যায়ে একমাত্র তেমন কোনো উদ্যোগই ‘ভূত’ তাড়াতে পারে— ব্যারিস্টার রফিক-উল হক যাকে ‘মিলাদ’ বলেছেন।
সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করার এবং প্রধান বিচারপতির চেম্বারের দরজায় লাথি মারার রেকর্ড যাদের রয়েছে সে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এমনিতেই বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার কথা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিচার বিভাগ যেহেতু ‘স্বাধীন’ এবং বিচারকরা যেহেতু নৈতিকতার দিক থেকে বলিষ্ঠ থাকেন বলে ধরে নেয়া হয়, সেহেতু মানুষ ন্যায়বিচার আশা করতেই পারে। কিন্তু তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলেই ওয়ান-ইলেভেনের ‘ভূত’ তাড়ানোর জন্য ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ‘মিলাদ’ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর অর্থ হলো, সরকারকে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, বিচারকদেরকেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। এখানেই বিচারকদের সততা ও নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন এসে যায়। একই কারণে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মানবাধিকারবিষয়ক অন্য এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন উঠেছে, গ্রামীণ সালিশের যেটুকু সততা আছে বর্তমান বিচার বিভাগের সেটুকু সততাও রয়েছে কিনা। কোনো দেশের বিচার বিভাগ সম্পর্কে এ ধরনের প্রশ্ন ওঠা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে, প্রশ্ন তো উঠছেই, মানুষ এমনকি সুনির্দিষ্ট অনেক উদাহরণও তুলে ধরছেন। লজ্জা ও ভীতির অন্য একটি কারণও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিচারকদের দলপ্রীতি নিয়ে আজকাল প্রকাশ্যে আলোচনা হয়। অনেকের নাকি জেলা-উপজেলাপ্রীতি পর্যন্ত রয়েছে এবং তার প্রকাশও ঘটছে প্রকটভাবেই। ফলে পিঠে নাকি বন্দুক ঠেকানোর প্রয়োজন পড়ে না। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন অবস্থা চলতে পারে না। চরিত্রের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার বিচার ব্যবস্থাকে তছনছ করতে চাইতেই পারে। বিচারকরা যদি বলিষ্ঠ অবস্থান নেন এবং রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো যদি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পক্ষে দাঁড়ায় তাহলে সরকারের চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। বর্তমান পর্যায়ে একমাত্র তেমন কোনো উদ্যোগই ‘ভূত’ তাড়াতে পারে— ব্যারিস্টার রফিক-উল হক যাকে ‘মিলাদ’ বলেছেন।
No comments