সাক্ষাৎকার- আর্থিক খাতে উদারীকরণ ও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে

ইস্টার্ন ব্যাংকের ২০ বছরে পদার্পণ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার প্রথম আলো: আগামী ২০ বছরে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডকে (ইবিএল) কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান?


আলী রেজা ইফতেখার: আমি ২০ বছর নয়, আগামী পাঁচ বছরের কথা বলব—যা অধিক বাস্তবসম্মত। পাঁচ বছর পর ইবিএলকে বাংলাদেশের এক নম্বর ব্যাংকে রূপান্তর করতে চাই। আয়তনে নয়, মুনাফা ও দক্ষতার দিক দিয়ে। আমরা শুধু শাখা ও এটিএম বুথ বাড়িয়ে এবং প্রচুর জনবল নিয়ে কাজ করার নীতিতে চলছি না। বরং আমাদের লক্ষ্য সীমিত অথচ দক্ষ জনবল দিয়ে ব্যাংকিংসেবা প্রদান করা। সে জন্য ইবিএল ব্র্যান্ড ইমেজ বা ভাবমূর্তি সুপ্রতিষ্ঠার দিকে বিশেষ জোর দিয়েছে। আর এই ব্র্যান্ডিং হলো অনেক বেশি দৃশ্যমান হওয়া, মানুষকে সামনে রাখা। সর্বোপরি মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা। যদি ব্যবসার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা যায়, তা হলে ব্যবসাও ভালো হবে, ঠিকঠাকভাবে হবে।
প্রথম আলো: কিন্তু কম শাখা ও সীমিত জনবল দিয়ে কি কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা সম্ভব?
আলী রেজা ইফতেখার: সীমিত শাখা ও জনবল মানে অপর্যাপ্ত নয়। বরং যেখানে যে রকম দরকার, সে রকম শাখা ও সে রকম জনবল যেন দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে সেবা দেওয়া যায়। একজন ব্যবসায়ী বা গ্রাহক ব্যাংকে এসে কী চাইবেন, সেবা না ব্যাংকের লোকজন? নিশ্চয়ই সেবা। তিনি যদি সেবাটা ঠিকমতো পান, তা হলে তো সমস্যা নেই। এই সেবাটা যেন দক্ষতার সঙ্গে দেওয়া যায়, সে জন্য আমরা তথ্যপ্রযুক্তির অত্যাধুনিক প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরাই অত্যন্ত উন্নত ও শক্তিশালী অনলাইন সেবা নিয়ে এসেছি। তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার আগামী দিনে ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলবে। এ জন্য দক্ষ ব্যাংকার জনবল গড়ে তোলার দিকেও আমরা জোর দিয়েছি। গত এক বছরে আমরা দেশে-বিদেশে ইবিএলের কর্মকর্তাদের জন্য ১৪৪টি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি।
প্রথম আলো: বলা হয়ে থাকে, ইবিএল অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত ব্যাংক। এটা কি দক্ষভাবে সেবা দিতে সহায়তা করছে? আর ব্যবস্থাপনার কাজে পরিচালনা পর্ষদ কতখানি ভূমিকা রাখে?
আলী রেজা ইফতেখার: হ্যাঁ, ইবিএল বহুলাংশেই কেন্দ্রীভূত। এতে দক্ষতার কোনো হানি হয়নি। একটি উদাহরণ দিয়ে বলি। যশোরে ইবিএলের শাখায় কোনো আমদানিকারক গিয়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে চাইলে ওই শাখার কর্মকর্তা ওখান থেকেই যাবতীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে অনলাইনে ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেবেন। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সেগুলো নিয়ে যা করার সব করে দেবেন। এটা বেশ দ্রুততার সঙ্গেই সম্পন্ন হয়। এভাবে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার করছি। প্রধান কার্যালয়ে যেহেতু বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এভাবে বিভিন্ন বিষয় দেখে থাকেন, কখনো দু-তিনজনের অনুপস্থিতিতে কোনো কাজ আটকে থাকে না বা পিছিয়ে পড়ে না। আর এটা থেকে আমরা যে সুফল পাচ্ছি, তা বোঝা যায় বাণিজ্য অর্থায়নে আমাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা থেকেই। আসলে যাঁরা সনাতনীভাবে শাখানির্ভর ব্যাংকিং করছেন, তাঁরা রিটেল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে আছেন। ইবিএলের শাখাগুলোকে আমরা তাই বলে থাকি সেবা ও বিক্রয়কেন্দ্র। এটাই আধুনিক চিন্তা ও চর্চা। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসা পরিচালনার কাজে ইবিএলের পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা সীমিত। অযাচিত কোনো হস্তক্ষেপ নেই। বরং তারা যথেষ্ট সমর্থন জুগিয়ে থাকে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি আপনি কীভাবে দেখছেন?
আলী রেজা ইফতেখার: বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে, উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে আর্থিক খাতে আরও উদারীকরণ করতে হবে। উদারীকরণের মাধ্যমে বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমাদের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দেশের বাইরে বিনিয়োগ করে, তা হলে একটা পর্যায়ে তারাও দেশে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসবে। আর্থিক খাতে বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে, বন্ড বাজার চালু করতে হবে। দেশে ২০-২২ হাজার কোটি টাকার বন্ড বাজারের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। আর উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি কয়েক বছর ধরে রাখতে হলে মূল্যস্ফীতির চাপ সহ্য করতে হবে। কেননা, উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি ও উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি পাশাপাশি চলে। এ জন্য দুটোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]

No comments

Powered by Blogger.