ডেসটিনির এক কর্মকর্তা গ্রেফতার, দু’জনের জামিন নামঞ্জুর
দুর্নীতির মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির উর্ধতন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের এ সংক্রান্ত মামলার বাদী তৌফিকুল ইসলাম ও পল্টন থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে।
এদিকে একইদিন মুদ্রা পাচারের দুটি মামলায় ডেসটিনির অপর দুই কর্মকর্তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
আবুল কালাম আজদকে গ্রেফতার বিষয়ে পুলিশ ও দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগে রাজধানীর কলাবাগান থানায় আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ওই মামলায় সোমবার রাত দুইটার দিকে তাঁকে গ্রেফতার করে পল্টন থানায় নেয়া হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাঁকে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে নেয়া হয়। এরপর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা দুপুর পৌনে দুইটা পর্যন্ত আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আদালতে হাজির করার জন্য রমনা থানা পুলিশের একটি ভ্যানযোগে তাঁকে সিএমএম আদালতে নিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম হাসিবুল হকের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোজহার আলী সরদার আসামিকে জেলহাজতে পাঠিয়ে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজী নজীব উল্লাহ হিরু আজাদকে জামিন দেয়ার আবেদন করেন। হাকিম রিমান্ড নামঞ্জুর করে আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
মুদ্রা পাচারের দুটি মামলায় এদিন ডেসটিনির গ্রুপের অপর দুই কর্মকর্তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি ভবানী প্রাসাদ সিংহের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে জামিন চাইলে উপস্থাপিত হয়নি মর্মে আদালত তা খারিজ করে দেয়। এই দুই কর্মকর্তা হচ্ছেন প্রকৌশলী শেখ তৈয়বুর রহমান, প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল, দুদকের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং আসামিপক্ষে ছিলেন এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে গত ৬ আগস্ট এই দুই মামলায় ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশিদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রফিকুল আমিন, মোঃ হোসেন, মোঃ গোফরানুল হক, মোঃ সাইদ উর রহামান নিম্নআদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করে।
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জামিন প্রত্যাখ্যাত এই দুই কর্মকর্তাও এই দুই মামলার আসামি।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ও ট্রি-প্লান্টেশন প্রকল্পের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়ে দুদকের উপপরিচালক মোঃ মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মোঃ তৌফিকুল ইসলাম মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে ৩১ জুলাই মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন মোহাম্মদ সাইদ উর রহমান, মোঃ মেসবাহউদ্দিন স্বপন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা দিবা, জমশেদ আরা চৌধুরী, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, মোঃ আকবর হোসেন সুমন, শিরীন আকতার, মোঃ রফিকুল ইসলাম সরকার, মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ সুমন আলী খান, মোঃ সাইদুল ইসলাম খান রুবেল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) দিদারুল আলম।
মামলার অভিযোগে বলা হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯শ’ ৩৫ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। এর মধ্যে ১ হাজার ১শ’ ৭৮ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ২৪ টাকা আত্মসাত করেন। কমিশনের নামে এ টাকা আত্মসাত করেন বলে অভিযোগে বলা হয়। কিন্তু সমবায় আইনে এভাবে কমিশন নেয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া মাল্টিপারপাসের টাকা কর্মকর্তারা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের কোন অংশীদারিত্ব নেই। একপর্যায়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের টাকাও মামলার অভিযুক্তরা আত্মসাত করে নিয়ে যান।
No comments