সময়ের পেশা মার্চেন্ডাইজিং by জিয়াউর রহমান চৌধুরী

পোশাকশিল্প বর্তমানে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত।শতভাগ রপ্তানিমুখী এ শিল্পে এর মধ্যেই বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, আরও সুযোগ আছে। যেহেতু পোশাকশিল্পের ক্রেতাদের বিরাট অংশই দেশের বাইরের, তাই তাদের সঙ্গে দেশের উৎপাদনকারীদের সংযোগ ঘটাতে এ খাতে ভিন্ন ধরনের একটি পেশার উদ্ভব হয়েছে।


পাঠক, নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন যে কোন পেশার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এ পেশার নাম মার্চেন্ডাইজিং। প্রতিনিয়ত তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ আসছে এ পেশায়।
মার্চেন্ডাইজিং খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পড়ালেখার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ‘সার্টিফিকেট কোর্স ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং’ নামে একটি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ট্রেনিং রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইন (এনআইটিটিআরএডি)। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তাদের তিনটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। শিগগির শুরু হচ্ছে চতুর্থ ব্যাচের কার্যক্রম। মার্চেন্ডাইজিংয়ের সাতসতেরো নিয়ে এ উপস্থাপনা।

মার্চেন্ডাইজিং কী
দেশে প্রচলিত অর্থে মার্চেন্ডাইজিং বলতে পোশাকশিল্পের মার্চেন্ডাইজিংকেই বোঝায়। কিন্তু পোশাকশিল্প ছাড়াও চামড়া, হিমায়িত খাদ্যসহ নানা শিল্পে মার্চেন্ডাইজিংয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যিনি মার্চেন্ডাইজিংয়ের কাজ করেন তাঁকে বলা হয় মার্চেন্ডাইজার। মার্চেন্ডাইজারের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের ডিন মো. জুলহাস উদ্দিন জানান, মার্চেন্ডাইজার পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতার মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করেন। একজন মার্চেন্ডাইজারকে মূলত পণ্যের কারিগরি ও ব্যবসায়িক দুটো দিকই দেখতে হয়। যেমন, পোশাকশিল্পে পণ্য ক্রয়ের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ক্রয়, ক্রেতার পছন্দের মান অনুযায়ী স্থানীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে পণ্যের পরীক্ষা করানো ইত্যাদি কাজ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, ‘ক্রেতা যে টাকা প্রদান করেন তা দিয়ে পণ্য উৎপাদন করিয়ে তাঁর হাতে পৌঁছানোর দায়িত্বও মার্চেন্ডাইজারের। এর মধ্যে শ্রমিকের মজুরি, উৎপাদন খরচ ও উৎপাদনকারীর লাভ ইত্যাদি বিবেচনা করে কাজ করতে হয়। এক কথায় কোনো পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত মার্চেন্ডাইজারকে একজন সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করতে হয়।’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ট্রেনিং রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইনের (এনআইটিটিআরএডি) কারিগরি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পোশাকশিল্পে তুলা থেকে তন্তু, আবার তন্তু থেকে ফ্রেব্রিকস, ফেব্রিকস থেকে পোশাক তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় একজন মার্চেন্ডাইজার সহায়তা করেন।’ মো. জুলহাস উদ্দিন আরও বলেন, ‘দেশের পোশাকশিল্প অনেকটা রপ্তানিনির্ভর হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পৌঁছানো, পণ্য পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক কাগজপত্র তৈরি, পণ্য আকাশ বা জল পথে যাবে ইত্যাদি কাজও করতে হয়।’

চাহিদা যেমন
দেশে পোশাকশিল্পসহ প্রচুর রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় দিন দিন এ খাতে কাজের সুযোগ বাড়ছে। মার্চেন্ডাইজিংয়ে কাজের চাহিদা সম্পর্কে মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের পোশাকশিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মার্চেন্ডাইজিংয়ে কাজের অনেক সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পোশাকশিল্পে রপ্তানিমুখীতা যত দিন থাকবে তত দিন এ খাতে কাজের চাহিদা আরও বাড়বে।’ তিনি আরও জানান, প্রতিটি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মার্চেন্ডাইজিং বিভাগের প্রতি নজর দিচ্ছে। কারণ পোশাকশিল্পসহ অনান্য রপ্তানিমুখী শিল্পে মার্চেন্ডাইজাররা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

কাজের সুযোগ যেখানে
পোশাকশিল্প ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মার্চেন্ডাইজারদের কাজের সুযোগ রয়েছে। মার্চেন্ডাইজাররা সাধারণত কর্ম গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেন। মূলত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে মার্চেন্ডাইজারদের কাজের সুযোগ বেশি।

ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা চাই
একজন দক্ষ মার্চেন্ডাইজার হতে গেলে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বাড়তি কিছু যোগ্যতাও থাকতে হবে। মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘এ পেশায় ভালো করতে হলে আগ্রহীকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে ইংরেজিতে লেখা ও সুন্দর কথোপকথনের দক্ষতা থাকতে হবে।’ মো. আরিফুল ইসলাম জানান, একজন মার্চেন্ডাইজারকে শুরুর দিকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। তাই পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে, একজন ভালো ব্যবস্থাপক হয়ে উঠতে হবে। এছাড়া পণ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিয়ম ও আইন-কানুন জানা থাকা জরুরি।

যা শেখানো হয়
দেশে যেহেতু পোশাকশিল্পে মার্চেন্ডাইজিং পেশা বেশ প্রতিষ্ঠিত তাই এ খাতের প্রতিটি বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসবের মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে তন্তু-পোশাক বানানোর পদ্ধতিসহ পোশাকশিল্পের মৌলিক সব বিষয় রয়েছে। পাশাপাশি পোশাকশিল্পের সব নিয়ম-কানুনও শেখানো হয়।

আয়-রোজগার
সাধারণত ৮-১০ হাজার টাকায় মার্চেন্ডাইজারের বেতন শুরু হয়। শুরুতে একজন মার্চেন্ডাইজার বেতন বেশি না পেলেও যোগ্যতা ও দক্ষতার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে বেশ ভালো বেতন লাভ করেন।
একসময় এ বেতন দুই-তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ বিষয়ে
প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে
ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক উর্ত্তীর্ণরা এনআইটিটিআরএডি থেকে মার্চেন্ডাইজিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তবে স্নাতক সম্পন্নদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ছয় মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণে খরচ হবে ১৫ হাজার টাকা। যোগাযোগ: এনআইটিটিআরএডি, নয়ারহাট, সাভার, ঢাকা। ০১৭২৬১৮৭৬৮৯, ০১৯১৩৪৪৯৬৭৪, ওয়েব: www.nittrad.edu.bd ও
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), ইউটিসি ভবন (লেভেল ৮), ৮ পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ৮১১২৩৬১, ৯১৪৩৪৬১।

No comments

Powered by Blogger.