নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়- জীবন থেকে নেওয়া গল্প by রাকিব মোজাহিদ
গল্পের মতো জীবন, নাকি জীবনের মতো গল্প—এই বিতর্কের অবসান হয়নি সেদিন। তবে জীবনকে দেখা হয়েছে জীবনের কাছ থেকে। আর সে দেখা থেকেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীদের মনে হয়েছে, এই জীবন আসলে গল্পেরই মতো।
এই যে বেনারসিপল্লির মলিন জীবনগাথা, জেনেভা ক্যাম্পের দুর্বিষহ জীবনচিত্র, কুমোরপাড়ার চালচিত্র, শহুরে কাজের মেয়ে কিংবা বস্তিবাসীদের জীবনাচরণ, সাপুড়েদের যাযাবর জীবন—সবকিছুই এত দিন ছিল গল্পের পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ, আর আজ তা রক্ত-মাংসের মানুষ হয়ে ধরা দিল তাদের চোখে! সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না, ভীষণ রোমাঞ্চিত এই শিক্ষার্থীদল।
সুমাইয়া রুক্তির কাছে জানা গেল, এই বিচ্ছিন্ন মানুষের প্রাত্যহিক জীবন পরিদর্শনের কারণ। ‘স্নাতক শেষ বর্ষে জেনারেল কন্টিনিউটিং এডুকেশন কোর্সের বেশ কয়েকটি বিষয় থেকে একটি বিষয় আমাদের পড়তে হয়। এর মধ্যে এবার আমরা যাঁরা “নাট্য পরিচয়” বিষয়টি নিয়েছি, তাঁদের যেতে হয়েছিল এই কাজে। আর এর বদৌলতে এ রকম জীবন কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলেছিল।’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দলে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। বুদবদ, জোনাকি, স্বপ্নবাজ, বর্ণচোরা, ভবোঘুরে, পথচলা, বিন্দু এবং তামাশা—এই মোট আটটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছেন তাঁরা মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে।
চালচিত্র দেখার গল্প শুরু রাইসার মুখে ‘আমরা গিয়েছিলাম সাভারের পোড়াবাড়ীর সাপুড়েপাড়ায়। সেখানে আমরা এক দিন ছিলাম। বলতে গেলে একেবারে মিশেছিলাম তাদের সঙ্গে। তাদের কাপড় পরেছি, সঙ্গে খাবার খেয়েছি, এমনকি সাপের খেলা দেখাতে তাদের সঙ্গে বাজারেও গিয়েছি। এতে কিছুটা বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে।’ বিপত্তির কারণটা জানা গেল সাদ্দামের কাছে। ‘এই সাপের খেলা দেখানোর সময় আমাকে সাপে কামড় দিয়েছিল। আমি তো ভয়ের মধ্যে পড়েছিলাম! না জানি কী হয়!’ আর এই ভয় ভাঙাতে সাপুড়ে যে বিস্ময়কর কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন, তা জানালেন নুসরাত। ‘পরে সাপুড়ে সেই সাপের বিষদাঁত তাঁর জিহ্বায় লাগিয়ে পরখ করে দেখিয়েছিলেন যে এই বিষদাঁতে কোনো বিষ নেই। এরপর আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচি!’ এর মধ্যেই গল্পে একে একে যুক্ত হয়েছেন প্রভাকর, আনিকা, ইমন, জুবায়ের, ইশান, মৌমিতা, অরিনসহ বেশ বড়সড় একটা দল।
বৃদ্ধাশ্রমে যাঁরা জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছেন, তাঁদের কথা জানাতে গিয়ে গলাটা ধরে এসেছে রুক্তির। ‘বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষগুলোর মতো এত অসহায় মানুষ আমি আর দেখিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার কেউ নেই। নিকটাত্মীয়রা কেউ খোঁজ নেয় না।’ প্রবীণদের হালহকিকত সম্পর্কে এমনটাই জানালেন তিনি। এই নিসঙ্গতা কাটানোর কি কোনো চেষ্টা করা হয়েছিল? এমন প্রশ্নে কাউসারের জবাব—‘আমাদের সঙ্গে গিটার, বেহালা এসব বাদ্যযন্ত্র ছিল। আমরা এসব বাজিয়ে শুনিয়েছি। গানও গেয়েছে কেউ কেউ। শুধু তা-ই নয়, আমাদের সঙ্গে আড্ডায় মিশে গিয়ে তাঁরাও আমাদের গান শুনিয়েছেন।’ ‘আর তাঁদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আসার সময় তাঁদের মধ্যে অনেকেই কেঁদেছেন।’
এ রকম নানা রকম জীবনের খণ্ডচিত্র শুনতে শুনতে সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। ‘এই জীবনাচরণের ওপর আমরা নাটক তো করছিই; সেই সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে জেনেভা ক্যাম্পের এক যুবককে আমার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দিয়েছি।’ জানালেন ইমন।
আর এই পুরো আয়োজন সম্পর্কে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স সমন্বয়কারী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইসরাফিল শাহিন বলেন, ‘এই জীবনগুলো এই শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল একেবারেই অচেনা। তাঁরা কয়েকটা দিন খুব কাছ থেকে মানুষগুলো দেখল। আমার বিশ্বাস, জীবনকে এভাবে দেখার সুযোগ তাঁদের যেমন চেতনা জাগাবে, তেমনি নাট্যাভিনয়েও কাজে লাগবে।’
সুমাইয়া রুক্তির কাছে জানা গেল, এই বিচ্ছিন্ন মানুষের প্রাত্যহিক জীবন পরিদর্শনের কারণ। ‘স্নাতক শেষ বর্ষে জেনারেল কন্টিনিউটিং এডুকেশন কোর্সের বেশ কয়েকটি বিষয় থেকে একটি বিষয় আমাদের পড়তে হয়। এর মধ্যে এবার আমরা যাঁরা “নাট্য পরিচয়” বিষয়টি নিয়েছি, তাঁদের যেতে হয়েছিল এই কাজে। আর এর বদৌলতে এ রকম জীবন কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলেছিল।’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দলে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। বুদবদ, জোনাকি, স্বপ্নবাজ, বর্ণচোরা, ভবোঘুরে, পথচলা, বিন্দু এবং তামাশা—এই মোট আটটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছেন তাঁরা মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে।
চালচিত্র দেখার গল্প শুরু রাইসার মুখে ‘আমরা গিয়েছিলাম সাভারের পোড়াবাড়ীর সাপুড়েপাড়ায়। সেখানে আমরা এক দিন ছিলাম। বলতে গেলে একেবারে মিশেছিলাম তাদের সঙ্গে। তাদের কাপড় পরেছি, সঙ্গে খাবার খেয়েছি, এমনকি সাপের খেলা দেখাতে তাদের সঙ্গে বাজারেও গিয়েছি। এতে কিছুটা বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে।’ বিপত্তির কারণটা জানা গেল সাদ্দামের কাছে। ‘এই সাপের খেলা দেখানোর সময় আমাকে সাপে কামড় দিয়েছিল। আমি তো ভয়ের মধ্যে পড়েছিলাম! না জানি কী হয়!’ আর এই ভয় ভাঙাতে সাপুড়ে যে বিস্ময়কর কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন, তা জানালেন নুসরাত। ‘পরে সাপুড়ে সেই সাপের বিষদাঁত তাঁর জিহ্বায় লাগিয়ে পরখ করে দেখিয়েছিলেন যে এই বিষদাঁতে কোনো বিষ নেই। এরপর আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচি!’ এর মধ্যেই গল্পে একে একে যুক্ত হয়েছেন প্রভাকর, আনিকা, ইমন, জুবায়ের, ইশান, মৌমিতা, অরিনসহ বেশ বড়সড় একটা দল।
বৃদ্ধাশ্রমে যাঁরা জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছেন, তাঁদের কথা জানাতে গিয়ে গলাটা ধরে এসেছে রুক্তির। ‘বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষগুলোর মতো এত অসহায় মানুষ আমি আর দেখিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার কেউ নেই। নিকটাত্মীয়রা কেউ খোঁজ নেয় না।’ প্রবীণদের হালহকিকত সম্পর্কে এমনটাই জানালেন তিনি। এই নিসঙ্গতা কাটানোর কি কোনো চেষ্টা করা হয়েছিল? এমন প্রশ্নে কাউসারের জবাব—‘আমাদের সঙ্গে গিটার, বেহালা এসব বাদ্যযন্ত্র ছিল। আমরা এসব বাজিয়ে শুনিয়েছি। গানও গেয়েছে কেউ কেউ। শুধু তা-ই নয়, আমাদের সঙ্গে আড্ডায় মিশে গিয়ে তাঁরাও আমাদের গান শুনিয়েছেন।’ ‘আর তাঁদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে ছেড়ে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আসার সময় তাঁদের মধ্যে অনেকেই কেঁদেছেন।’
এ রকম নানা রকম জীবনের খণ্ডচিত্র শুনতে শুনতে সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। ‘এই জীবনাচরণের ওপর আমরা নাটক তো করছিই; সেই সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে জেনেভা ক্যাম্পের এক যুবককে আমার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ করে দিয়েছি।’ জানালেন ইমন।
আর এই পুরো আয়োজন সম্পর্কে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স সমন্বয়কারী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইসরাফিল শাহিন বলেন, ‘এই জীবনগুলো এই শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল একেবারেই অচেনা। তাঁরা কয়েকটা দিন খুব কাছ থেকে মানুষগুলো দেখল। আমার বিশ্বাস, জীবনকে এভাবে দেখার সুযোগ তাঁদের যেমন চেতনা জাগাবে, তেমনি নাট্যাভিনয়েও কাজে লাগবে।’
No comments