রান্না করুন নিজে, খাবেন স্বাস্থ্যমতো by অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ভালো খাওয়া, সুস্থ থাকা—এসব যখন ভাববেন, তখন চিপস, ফাস্টফুড, কুকিস ও কোমল পানীয়—এসব খেলে কী আর হবে? রান্না করতে হবে নিজে।


স্বাস্থ্যকর আহার, স্বাস্থ্যকর রান্না—এগুলোর কৌশল না জানলে হবে কী করে? রান্নাঘরে যত স্বস্তি পাওয়া যাবে, খাদ্যের তত ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবে। স্বাস্থ্যকর জীবনের তত কাছাকাছি থাকা যাবে।

খাবেন নিজের বাড়িতে, জানবেন স্বাস্থ্যকর রান্নার কৌশল
আমাদের দেশে রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়ে, রান্না করেন গিন্নিরা। সাহেব, ছেলেমেয়ে মিলে খেয়ে তৃপ্ত হয়। অনেক বাসায় সাহেবেরাও রান্নায় সাহায্য করেন। অনেক দেশেই রান্নাঘর শৌখিনঘর, চুলা জ্বলে না, বাইরে খাওয়ার চল সেখানে। স্থূল মানুষের সংখ্যা তাই বেশি।
কেন রান্নাঘরে চুলা জ্বলে না তেমন? স্বামী-স্ত্রী দুজনে ব্যস্ত, ঘরে কাজের লোক নেই, দিনের কাজের শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত, রান্না করতে মন চায় না। অনেকে মনে করেন, খাদ্য হলো শত্রু, রান্না করলে খেতে হবে। আর অনেকে মনে করেন, রান্না জানি না, পচা রান্না হবে, খেয়ে সবাই মন্তব্য করবে, তাই বাদ দিই রান্না। অনেকের ধারণা, রান্নাঘরে রান্না না করলে খাওয়া হবে কম, শরীরের ওজন হবে কম। কিন্তু ব্যাপারটা অন্য রকম, আমরা কী খাচ্ছি, তা না জানলে খাওয়া হয় বেশি, গপাগপ। তাই খাবার নিজে তৈরি না করলে কী করে জানব, কোন খাবার স্বাস্থ্যকর ও লো ক্যালোরি?

স্বাস্থ্যকর রান্নার কৌশল জানা ভালো
তাই কী খাচ্ছেন, তা দেখাও নিজের খাবার তৈরি করার বড় কাজ। কোজোনিগ বলেন, কুকিং হেলপস ফুড ম্যাটার।
আমরা অনেকেই খাদ্য থেকে বিযুক্ত হয়ে যাই—কারণ, আমরা শরীর থেকেও বিযুক্ত। রান্না করলে আমরা বুঝি খাবারের গন্ধ, সুবাস, দেখন-লোভন চেহারা, সংযুক্তি—সবই লক্ষ করি। কীভাবে নিজের তৈরি করা খাবার খেয়ে নিই, এই প্রক্রিয়ায় খাবার হয়ে ওঠে শক্তি ও পুষ্টির উৎস—শত্রু নয়। অনেকে খুব দ্রুত খান, সমস্যা তাঁদের এটি। এ জন্য খাওয়া হয় বেশি, রান্না করলে শ্লথ হয় এর গতি, চেতনার সঙ্গে যুক্ত হয় শরীর ও মন। রান্না করার সময় খাদ্যের স্বাদ ও সুবাস আহারেও আনে তৃপ্তি। ধীর হয় সব, খাবারকে উপভোগ করার তাগিদ আসে। খাদ্য ও রান্নার মধ্যে রয়েছে একটি আবেগজনিত সংযোগ, রান্না করার সময় যে অনুভূতি একে সংযুক্ত করা যায় অতীতের কোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গে। মা বা দিদা কত সুন্দর রান্না করে খাবার খাইয়ে দিয়েছিলেন, সে স্মৃতি মনে পড়ে। শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে। রান্না করা কোনো প্রিয় খাবার, প্রিয় মানুষের রান্না—সব মনে পড়ে। শুরু হোক রান্না।
 রান্নাঘরের তৈজস কম গুরুত্বপূর্ণ নয়
 ভালো পাত্র, কড়াই, প্যান
 সবজি ভাপে সেদ্ধ করার পাত্র রাইস কুকার বা হাঁড়ি
 স্যুপ পাত্র
 ফুড প্রসেসর
 গ্রিল
 ভালো তৈজসপত্র
 রান্নার জন্য উপকরণ
 তাজা সবজি, ফল, দই, ডিম, মাছ, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, হিমায়িত সবজি, পানি, কচি মাংস, লাল চাল, শিম, আলু, রান্নার তেল, জলপাই তেল, ভিনেগার, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, মসলা, মরিচ, লেবু ইত্যাদি।

পরিকল্পনা চাই
 রাতের রান্না সহজ করার জন্য সময়ের আগে বেশি তৈরি করা ভালো। বাড়তিটা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ভবিষ্যতের জন্য লেবেল ও তারিখ দিয়ে। স্যুপ এ রকম একটি খাদ্য।
 সবজি পরিষ্কার করে কেটে রাখা।
 আলু ছুলে ও টুকরো করে ঠান্ডা জলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা।
 কচি মোরগের বুক ফালি করে কেটে স্টারফ্রাইয়ের জন্য রাখা।
 সবজি বা চিকেন স্টককে স্যুপের জন্য সংরক্ষণ করা।
 ফল কেটে রাখা দ্রুত স্ন্যাকসের জন্য।

রান্না হবে সহজ-সরল
রান্নার তৈজস, মৌলিক উপকরণ এবং সব মিলিয়ে সহজ নিষ্কণ্টক রান্না যেন হয়। কম তেল-মসলায় উপভোগ করবেন রান্না ও খাওয়া।
করেই দেখুন না চর্চাটি।
রান্না সম্পর্কে সব বলা হলো না।
বাকিটা জেনে-বুঝে রান্না শুরু হোক।
আমি নিজে হাটবাজার করি দীর্ঘদিন—কারণ, আমার স্ত্রী রান্না করেন। তা না হলে আমার বাজারে যাওয়া হতো না। রান্না করতে পারি সামান্য। কিন্তু স্ত্রীর ধারণা, আমি রান্না করলে ঘর এলোমেলো করে ফেলব। তাই সহজে সুযোগ পাই না। তবু তাঁর রান্না বড়ই ভালো, আমার খেয়ে সুখ। তাই বাইরে বাহারি খাবারের লোভ আমাকে টানে না, ঘরের রান্না এত ভালো, এত উপভোগের!

No comments

Powered by Blogger.